আগের অনেক নির্বাচনের মতো এবারও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা না করা প্রশ্নেই এসে ঠেকেছে নির্বাচনী বিতর্ক। সেনানিবাসের ভেতরে থেকে সেনাবাহিনী কিভাবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে, নির্বাচন এবং সেনা প্রশাসন পরিচালনায় অভিজ্ঞরা সেই প্রশ্ন তুলেছেন।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এবং সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, সেনাবাহিনীকে সেনানিবাসের ভেতরে রেখে নির্বাচনী দায়িত্ব দিলে কোনো লাভ হবে না। ‘সেনাবাহিনী তো সবসময় সেনানিবাসের ভেতরেই থোকে। তা হলে তাকে রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে রেখে লাভ কী?’ এমন প্রশ্ন রেখেছেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ অবশ্য বলেছেন, টহল না দিলেও যখন যেখানে দরকার সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব পালন করতে বলা হবে। তিনি জানিয়েছেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের নির্বাচনে সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ না করলেও ২৬ থেকে ২৯ এপ্রিল তারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য সেনানিবাসের ভেতরে প্রস্তুত থাকবে।
‘নির্বাচনটা যেহেতু নগরীতে, তাই আলাদাভাবে ক্যাম্প করার দরকার নেই। যখন যেখানে প্রয়োজন তাদের (সেনাবাহিনী) পাঠানো হবে,’ কমিশনের অবস্থানকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন শাহনেয়াজ।
কিন্তু এতে কোনো লাভ হবে বলে মনে করেন না সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ সিদ্ধান্তকে ‘ঝুলন্ত অবস্থা’ হিসেবে মন্তব্য করে বলেন, ‘সেনাবাহিনীকে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্য পূরণ হবে না।’
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাবেক সেনা কর্মকর্তা এবং সাবেক নির্বাচন কমিশনারের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের মূল লক্ষ্য সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি নিশ্চিত করা। ‘সেই স্বস্তি আনতে হলে সেনা সদস্যদের অবশ্যই টহলে রাখতে হবে।’
কিন্তু সেনাবাহিনী ছাড়াও নারায়ণগঞ্জের মতো ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় কিভাবে তারা মানুষের মধ্যে স্বস্তি এনে সুষ্ঠু নির্বাচন করেছিলেন, চ্যানেল আই অনলাইনের এমন প্রশ্নের উত্তরে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা সেনাবাহিনী চাওয়ার পরও না পাওয়ায় ইসি বলেছিলো, তা হলে নির্বাচনের দায়-দায়িত্ব আমাদের নয়। তখন র্যা বের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়েছিলো। এবং আপনারা জানেন, সবার সহযোগিতায় আমরা কিভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করেছিলাম।’
সাখাওয়াত হোসেন যে স্বস্তির কথা বলছেন, দু’দিন আগে ঠিক সেই ‘স্বস্তি’ শব্দটিই ব্যবহার করে শাহনেয়াজ বলেছিলেন, ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব পক্ষের স্বস্তির জন্য সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে সেনা মোতায়েনের দাবি ছিলো মূলত: বিএনপি এবং বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের।
মঙ্গলবার সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত জানানোর পর বুধবার নির্বাচন কমিশন জানায়, সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে না। তারা সেনানিবাসের ভেতরে থেকে যখন যেখানে যেভাবে প্রয়োজন সেভাবে দায়িত্ব পালন করবে।
ইসি কেনো ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলো জানতে চাইলে, নির্বাচন কমিশনার শাহনেয়াজ বলেন, ইসির সিদ্ধান্ত ছিলো নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য চারদিন সেনা সদস্যরা প্রস্তুত থাকবে। কোথায় তাদের মোতায়েন করা হবে সে বিষয়ে আগে কিছু বলা হয়নি।
সেনা মোতায়েন প্রশ্নে ইসির সর্বশেষ সিদ্ধান্তে প্রার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। সবসময় সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানানো বিএনপি-সমর্থিত তাবিথ আউয়াল (ঢাকা উত্তর) নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের পরিবর্তনকে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের পথে বাধা হিসেবে দেখছেন। নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে সেনানিবাসের ভেতরে না রেখে রাজপথে রাখার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
তার প্রতিদ্বন্দ্বি আনিসুল হক বলেন, সেনাবাহিনী মোতায়েন করে ভোটারদের মনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে তার অমত নেই। তবে এ সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের।
সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে তাদের বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার দাবিও করেছিলো বিএনপি। আওয়ামী লীগও নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকে স্বাগত জানিয়েছিলো।
তবে ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ খোকন এখন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তার প্রতিদ্বন্দ্বি মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস বলেছেন, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের জনপ্রিয়তাকে ভয় পেয়েই সরকার সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নাটক করছে।