বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট, কবি ও সাহিত্যিক আবদুল গাফফার চৌধুরী আর নেই। লন্ডন স্থানীয় সময় বুধবার রাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র রচয়িতার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত গাফফার চৌধুরীর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
আবদুল গাফফার চৌধুরীর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ি তাকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশে শায়িত করা হবে। লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশন থেকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়।
বরিশাল জেলার জলবেষ্টিত গ্রাম উলানিয়ার চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। তার বাবা হাজি ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা জহুরা খাতুন। তিন ভাই, পাঁচ বোনের মধ্যে বড় ভাই হোসেন রেজা চৌধুরী ও ছোট ভাই আলী রেজা চৌধুরী। বোনেরা হলেন মানিক বিবি, লাইলী খাতুন, সালেহা খাতুন, ফজিলা বেগম ও মাসুমা বেগম। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি লন্ডনে বসবাস করছিলেন।
১৯৪৭ সালে ‘কংগ্রেস হিতৈষী’ পত্রিকার মাধ্যমে কর্ম জীবন শুরু করেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। ১৯৪৯ সালে সওগাত পত্রিকায় তার প্রথম গল্প ছাপা হয়। ১৯৫০ সালেই গাফফার চৌধুরীর কর্মজীবন পরিপূর্ণভাবে শুরু হয়। এ সময়ে তিনি ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
পরবর্তীতে মাসিক সওগাত, মাসিক নকীব, দিলরুবা, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক আজাদ, মাসিক মোহাম্মদী, দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকাগুলোতে কাজ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সপরিবারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা হয়ে কলকাতা পৌঁছান। সেখানে মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক ‘জয়বাংলা’য় লেখালেখি করেন। এসময় তিনি কলকাতায় ‘দৈনিক আনন্দবাজার’ ও ‘যুগান্তর’ পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবে কাজ করেন।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ‘দৈনিক জনপদ’ বের করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলজিয়ার্সে ৭২ জাতি জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যান। দেশে ফেরার পর তার স্ত্রী গুরুতর রোগে আক্রান্ত হলে তাকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে কলকাতা নিয়ে যান। সেখানে সুস্থ না হওয়ায় তাকে নিয়ে ১৯৭৪ সালের অক্টোবর মাসে লন্ডনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। এরপর আবদুল গাফফার চৌধুরীর প্রবাস জীবন শুরু হয়।
পরবর্তীতে বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত আবদুল গাফফার চৌধুরীর রাজনীতি, সমসাময়িক ঘটনা ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী নিয়ে লেখা কলাম অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পায়।
তার লেখা গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান (১৯৬০), নাম না জানা ভোর (১৯৬২), নীল যমুনা (১৯৬৪) এবং শেষ রজনীর চাঁদ (১৯৬৭)। তিনি স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার সহ অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেন।