সাউথ আফ্রিকায় বহু সুড়ঙ্গ বিশিষ্ট একটি বিশাল গুহায় পাওয়া গেছে মানুষের মতোই নতুন আরেকটি প্রজাতির ফসিল বা জীবাশ্ম। গুহার ভেতরের একটি সমাধিক্ষেত্র থেকে বিজ্ঞানীরা এই প্রজাতির মোট ১৫ টি অসম্পূর্ণ কঙ্কাল পেয়েছেন।
গবেষকদের একটি দল ২১ দিনের অভিযানে আবিষ্কার করেন ফসিলের খনিটি। আফ্রিকা মহাদেশে এই প্রথম কোনো একক অভিযানে এতো বেশি সংখ্যক ফসিল আবিষ্কার হলো।
প্রাপ্ত ফসিলের অংশবিশেষ
গবেষকদের দাবি, এই আবিষ্কার মানব জাতির পূর্বপুরুষ সম্পর্কে এতোদিন ধরে প্রচলিত সব ধারণা ও তত্ত্বকে পাল্টে দেবে। এ নিয়ে ই-লাইফ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে নতুন আবিষ্কৃত প্রজাতিটির নাম রাখা হয়েছে ‘হোমো নালেদি’। সেখানে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রজাতিটিকে আধুনিক মানুষের সঙ্গে একই ‘জেনাস’ বা ‘গণ’ভুক্ত করা হয়েছে।
নালেদি মানব এবং আধুনিক মানুষের খুলি ও চোয়াল
গবেষণাপত্রে আরো বলা হয়েছে, মানুষের এই পূর্বপুরুষেরা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আচার-প্রথা পালন করতো। যাকে কিছুদিন আগেও মাত্র ২ লাখ বছর আগের মানুষের কাজ বলে মনে করা হতো।
এই প্রজাতির প্রাণীরা কতো বছর আগে পৃথিবীর বুকে বিচরণ করতো তা সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। তবে দলনেতা অধ্যাপক লি বার্জারের বিশ্বাস, এরা আমাদের প্রথম পূর্বপুরুষদের (‘হোমো’ গণের) একটি প্রজাতি যারা প্রায় ৩ কোটি বছর আগ পর্যন্ত আফ্রিকায় বাস করতো।
নালেদি মানব এবং আধুনিক মানুষের হাত
বার্জার মনে করেন, মানুষ এবং এর প্রাচীনতম দু’পায়ে চলা প্রজাতিগুলোর মধ্যে হোমো নালেদি যোগসূত্র হতে পারে।
হোমো নালেদিকে মানব ইতিহাসের ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আবিষ্কার’ বলে অভিহিত করেছেন লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের অধ্যাপক ক্রিস স্ট্রিংগার। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমরা দিন দিন নতুন নতুন সব প্রজাতি খুঁজে পাচ্ছি। যার অর্থ হলো, মানুষের বিবর্তন নিয়ে প্রকৃতি বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। এ কারণেই আফ্রিকার ভিন্ন ভিন্ন অংশে একই সময়কালে মানুষের মতো ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর উদ্ভব হয়। এর মধ্যে শুধু একটিই টিকে থাকতে সফল হয়, যেখান থেকে আমরা এসেছি।’
নালেদি মানব এবং আধুনিক মানুষের পায়ের পাতা
শিশু থেকে বৃদ্ধের ১৫ টি অসম্পূর্ণ কঙ্কালের মধ্যে নারী, পুরুষ দুই-ই আছে। প্রাণীগুলোর কাঁধ থেকে কোমরের অংশটুকু গরিলা বা শিম্পাঞ্জির মতো আদিম কাঠামোর হলেও কাঁধ থেকে হাতের দিকে বা কোমর থেকে পায়ের দিকে গঠন ক্রমশ উন্নত মানুষের মতো হয়ে গেছে। তাদের মস্তিষ্ক ছোট হলেও তা গরিলা-শিম্পাঞ্জি পর্যায় থেকে অনেকটাই উন্নত ছিলো বলে ধারণা গবেষকদের।
ফসিল ভরা সমাধিক্ষেত্রটি আবিষ্কার করেছেন গবেষকদের এই দলটি
অভূতপূর্ব আবিষ্কারটি মানবজাতির বিকাশ সম্পর্কে আমাদের আরো জানতে সাহায্য করবে বলে মনে করেন স্ট্রিংগার। তার মতে, হোমো নালেদিকে আদি-মানব বলে অভিহিত করা যেতে পারে। এদের অস্তিত্ব আবিষ্কারের পর মানুষের বিবর্তন নিয়ে প্রচলিত তত্ত্বগুলো পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
অন্যদিকে বার্জারের মতো গবেষকরা মনে করেন, আবিষ্কৃত প্রজাতিটি আদিম ও আধুনিক মানুষের সংমিশ্রণ, যা ‘মানুষ’ নামের প্রাণীটির সংজ্ঞা পাল্টে দিতে পারে।