এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত কোনো ম্যাচ জেতেনি আফগানিস্তান। তাই বলে তাদের হালকাভাবে নেয়ার কোনো প্রশ্নই নেই। পাকিস্তান দল এখন আর পেছনে তাকাতে রাজি নয়। কারণ, পচা শামুকে পা কাটার সেই বহুল প্রচলিত প্রবাদ যদি সত্যি হয়ে যায়!
তবে এসব ছাড়িয়ে পাকিস্তান-আফগানিস্তান ম্যাচের উত্তাপ অন্য জায়গায়। বিশ্বকাপের এই ম্যাচ যুদ্ধ-ক্লান্ত দুই দেশের সমর্থকরা বেশ গভীরভাবেই পর্যবেক্ষণ করবে।
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্ক খুবই জটিল। আফগান দলের অধিকাংশ ক্রিকেটার তাদের ক্রিকেটের তালিম নিয়েছেন পাকিস্তানের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে। তাদের অনেকের জন্মও পাকিস্তানের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে। তবে শক্তিশালী প্রতিবেশী পাকিস্তানের বিপক্ষে তালেবানকে সমর্থক দেয়ার অভিযোগ করেন অনেক আফগান।
দুই দেশের মধ্যে অবিশ্বাস এবং দোষারোপের রাজনীতির বহু বছরের। সেই আবহের মধ্যেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বসেরার আসরে একটি জয় আফগানদের বিশেষ মিষ্টি স্বাদ এনে দিতে পারে।
সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখতে হলে এই ম্যাচে কোনোভাবেই স্লিপ খাওয়া যাবে না পাকিস্তানের। কারণ, বাজেভাবে বিশ্বকাপ শুরু পর শেষ চারে খেলার একটা সুযোগ এসেছে সরফরাজ আহমেদের দলের সামনে। ২০১৫ বিশ্বকাপে অভিষেকে পর এটা আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বিশ্বকাপে অংশ গ্রহণ। কিন্তু এখন পর্যন্ত খেলা সাত ম্যাচের একটিতেও জয় পায় আফগানরা।
ম্যাচের আগে অবশ্য রাজনৈতিক উত্তাপের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন আফগানিস্তান অধিনায়ক গুলবাদিন নায়েব। তিনি বরং বলেছেন, ক্রিকেটই দুদেশের মধ্যে শান্তির সেতু হতে পারে।
নায়েবের কথায়, ‘আপনি যদি আমাদের ক্রিকেটের দিকে তাকান, দেখবেন আমরা পাকিস্তান থেকেই ক্রিকেটের বহুকিছু শিখেছি। আমরা পাকিস্তানে প্রচুর ক্রিকেট খেলেছি। আশা করি, ক্রিকেট এমন এক জিনিস যা অন্য কারো, অন্য যেকোনো দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে পারে। সুতরাং আমি আশা করি, এটা শুধু পাকিস্তান নয়, ভারত, শ্রীলঙ্কা বা অন্য যেকোনো দেশ হতে পারে।’
১৯৭৯ সালে সোভিয়েত আক্রমণের পর আফগানিস্তানে ক্রিকেট জনপ্রিয় হয়। তখন পাকিস্তানের ভেতরে এবং পাকিস্তান সীমান্তের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে আফগান তরুণরা ক্রিকেট খেলা শুরু করে।
অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবি এবং লেগ স্পিনার রশিদ খান পাকিস্তানের পেশোয়ারে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলেন এবং পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড বিভিন্ন সরঞ্জাম সরবরাহ ও সুযোগ দিয়ে আফগানিস্তানের ক্রিকেটকে সাহায্য করেছিল।
আফগান ক্রিকেটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন পাকিস্তানের সাবেক দুই ক্রিকেটার কবির খান ও রশিদ লতিফ। গত দশকে কোচ হিসেবে আফগানিস্তানের ক্রিকেটের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তারা। পরে যোগ হয়েছিলেন ইমজামাম-উল হকও।
কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনার ফলে আফগান খেলোয়াড়রা পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের সহযোগিতার দিকে এখন মনোযোগ আকর্ষণ করতে অনিচ্ছুক এবং প্রায়শই তারা পাকিস্তানের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সাথে আরও বেশি সম্পর্ক দেখায়।
মাঠের লড়াইতে পাকিস্তানের বিপক্ষে একবার জিতেছে আফগানিস্তান। এই বিশ্বকাপের আগেই প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানকে হারায় রশিদ-নবিরা। কিন্তু অফিসিয়াল তিন ম্যাচের একটিতেও পাকিস্তানের সামনে দাঁড়াতে পারেনি আফগানরা।
তবে ভালো রেকর্ড থাকার পরও আফগানিস্তানের ব্যাপারে বাড়তি সতর্ক পাকিস্তান। ভারতের কাছে হারের পর সাউথ আফ্রিকা এবং নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর পর প্রতিপক্ষ হিসেবে আফগানিস্তান তুলনায় সহজ হলেও সেটা মাথায় আনতে রাজি নন সরফরাজ আহমেদরা।
আফগানদের বিরুদ্ধে নামার আগে দলের অন্যতম বড় ভরসা হারিস সোহেল সেটাই মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘একটা কথা মনে রাখবেন, ওদের স্পিনাররা কিন্তু দারুণ। আমরা আফগানদের স্পিন সামলানোর জন্য আলাদা করে প্রস্তুতি নিয়েছি। ভিডিও দেখেছি।’
তার আরও সংযোজন, ‘আফগানিস্তানের পর আমাদের বাংলাদেশের সঙ্গে ম্যাচ রয়েছে। কিন্তু আমরা এখন পরের ম্যাচ নিয়ে ভাবছি না। শুধু আফগানিস্তানকে নিয়েই ভাবছি। এই ম্যাচ জিততেই হবে। তারপর বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবব।’
হারিসের সুরে সুর মিলিয়েছেন অধিনায়ক সরফরাজও, ‘আমরা জানি তাদের দলে ভালো মানের স্পিনার রয়েছে। আমরা তাদের হালকাভাবে নিচ্ছি না, কারণ তাদের মতো দলগুলো বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।’