এশিয়া কাপে সুপার ফোরের ম্যাচে ভারত ও আফগানিস্তান ম্যাচ টাই হয়েছে। শেষ ওভারের রোমাঞ্চে বাংলাদেশের কাছে হারার একদিন পর আরেকটি রোমাঞ্চকর শেষ ওভার যাত্রায় জয় তুলে নিতে না পারলেও হার মানেনি একের পর এক ক্রিকেট সাফল্য অর্জন করে চলা আফগানরা।
মঙ্গলবার দুবাইয়ে শুরুতে ব্যাট করে মোহাম্মদ শেহজাদের দর্শনীয় এক সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ওভারে ৮ উইকেটে ২৫২ রান জমা করে আফগানিস্তান। জবাব দিতে নেমে ইনিংসের শেষ বলে গুটিয়ে যাওয়ার সময় ভারত করতে পারে সেই ২৫২ রানই। ফল, ম্যাচ টাই।
আগেই ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় মূল একাদশে পাঁচটি পরিবর্তন নিয়ে নামে ভারত। ফর্মের তুঙ্গে থাকা দুই ওপেনার রোহিত ও ধাওয়ানও বিশ্রামের তালিকায়। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে এরপরও দারুণ শুরু করে দলটি।
লোকেশ রাহুল ও আম্বাতি রাইডু উদ্বোধনীতেই ১১০ রান তুলে ফেলেন, সেটিও ১৭.১ ওভারে। ৪টি করে চার ছক্কায় ৪৯ বলে ৫৭ করা রাইডু ফিরলে ভাঙে জুটি। রাহুলও বেশিক্ষণ টেকেননি পরে। ৫ চার ও এক ছক্কায় ৬০ রানে থামে তার ৬৬ বলের ইনিংস।
এদিন প্রায় দুই বছর পর অধিনায়কত্বের দায়িত্ব সামলানো মহেন্দ্র সিং ধোনি চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে পড়েন। তবে ৮ রানের বেশি করতে পারেননি। তখন দিনেশ কার্তিক তুলে নেন ব্যাটিং সামলানোর দায়িত্ব। তার ৪৪ রানের ইনিংসে ভারত নিরাপদেই এগোচ্ছিল।
কিন্তু পরপর কয়েকটি উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে। ভারতের মিডলঅর্ডারে আসলে অবদান রাখতে পারেননি কেউই। কেদার যাদব ১৯, আর রবীন্দ্র জাদেজা ২৫ রানের ইনিংসে চেষ্টা করেছিলেন। হয়নি।
জাদেজা আবার শেষের নাটকে নায়ক হয়ে উঠতে পারেননি। এদিন শেষ ওভারে ৭ রান দরকার পড়ে ভারতের, হাতে কেবল ১ উইকেট। বোলিংয়ে সময়ের অন্যতম সেরা, লেগস্পিনার রশিদ খান। প্রথম বলটি ডট করান। দ্বিতীয় বলে ৪ হাঁকান জাদেজা। তৃতীয় বলে নেন ১ রান। এই টুর্নামেন্টেই অভিষিক্ত পেসার খলিল আহমেদ চতুর্থ বলে ১ রান নিলে আবারও স্বস্তি ফেরে ভারতের ড্রেসিংরুমে। সেই স্বস্তি উবে যায় জাদেজা পঞ্চম বলে অফস্টাম্পের বাইরের বলে পুল করতে যেয়ে বল বাতাসে ভাসালে। নাজিবুল্লাহ ক্যাচ লুফে নিয়ে টাই-য়ে সমাপ্তির শেষচিত্র আঁকেন।
আফগানদের হয়ে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন আফতাব, নবি ও রশিদ। এক উইকেট আহমেদির। বাকি তিন ভারতীয় ব্যাটসম্যান কাটা পড়েছেন রানআউটে।
এর আগে শেহজাদের চওড়া ব্যাটে আফগানদের শুরুটা ভালোই হয়। যদিও ব্যাটিংয়ে অন্যপ্রান্তের সতীর্থদের থেকে সহযোগিতা পাননি শেহজাদ। এ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরিটা ঠিকই তুলে নিয়েছেন। তাতে করেছেন দারুণ এক রেকর্ডও।
শেহজাদ আফগানদের সর্বোচ্চ ওয়ানডে রান সংগ্রাহক, সর্বোচ্চ ওয়ানডে ব্যক্তিগত ইনিংসের মালিক, আবার সর্বোচ্চ পাঁচটি সেঞ্চুরিয়ানও। এদিন যখন পঞ্চম সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন, আফগানিস্তানের রান তখন ৪ উইকেটে ১৩১। এতেই রেকর্ড বইয়ে নাম উঠেছে।
২০০৫ সালে কানপুরে ভারতের বিপক্ষেই শহীদ আফ্রিদি ৪৫ বলে সেঞ্চুরি করার সময় পাকিস্তানের সংগ্রহ ছিল ১৩১। দলীয় সংগ্রহের ৭৬ শতাংশ রানই ছিল আফ্রিদির। ১৩ বছর পর সেই রেকর্ড ছুঁলেন শেহজাদ।
শেষপর্যন্ত কুলদীপের বলে লংঅফে কার্তিকের তালুবন্দী হওয়ার সময় ১১৬ বলে ১২৪ রানে থামেন শেহজাদ। ১১ চার ও ৭ ছয়ে সাজানো ইনিংস তার।
আফগানিস্তানকে পরে আড়াইশর ওপারে টেনে নেন অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নবি, ৩ চার ও ৪ ছয়ে ৫৬ বলে ৬৪ রানের ইনিংস খেলে। বাকিদের মধ্যে নাজিবুল্লাহর ২০ রান ছাড়া বলার মতো অবদান নেই আর কারও।
রোহিতের বিশ্রামে আপদকালীন অধিনায়ক ধোনি ৬৯৬ দিন পর নেতৃত্বে ফিরেছিলেন। অধিনায়ক হিসেবে এটি আবার তার ২০০তম ওয়ানডে ছিল। যাতে হারাতে না হলেও জেতা হল না ভারতের অন্যতম সফল এ দলপতির।