‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম, কারণ তালেবানরা আমাদের পাহারা দিচ্ছিলো। তবে তারা আমাদের কোনো অসুবিধা করেনি।’- বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কান্দাহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রানা এ কথা জানিয়েছে।
নানান শর্তে ছয় মাস পর নারীদের জন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উন্মুক্ত করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া রানার মতো উদ্বিগ্ন নারী শিক্ষার্থীরা।
রানা আরও জানায়, কিছু বিষয় আগের মতোই রয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসর ছোট হওয়ায় একই শ্রেণিকক্ষে আমরা পুরুষ এবং নারী একসাথে বসে ক্লাস করেছি। পুরুষেরা ছিলো সামনের সারিতে আমরা পেছনে। যদিও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় নারী, পুরুষ পৃথক শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করেছে।
হেরাত শহরের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানায়, তাকে বলা হয় সে ক্যাম্পাসে কেবল ৪ ঘণ্টা অবস্থান করতে পারবে। কারণ বাকি সময় পুরুষ
শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্ধ করা হয়েছে, ওই সময়ে নারীরা ক্যাম্পাসে থাকতে পারবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী হুদা জানায়, অনেক মাস বাড়িতে অলস সময় কাটানোর পর ক্যাম্পাসে ফেরা ভালো সংবাদ আমার জন্য। যদিও আমাদের অনেক শিক্ষক আফগানিস্তান ত্যাগ করেছেন তাই আমরা কিছুটা চিন্তিতও।
বিবিসির তথ্যমতে দেশটির তিনটি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়- কাবুল, হেরাত এবং বালখ থেকে ২২৯ জন অধ্যাপক দেশ ছেড়ে চলে গেছেন।
তালেবানরা কিছু বিষয়ে নারীদের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে পারে বলেও শঙ্কিত নারীরা।
কাবুলের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থী জানান, তালেবান শিক্ষা বিষয়ক মুখপাত্র যখন বলেছিল নারীদের ইঞ্জিনিয়ার বা রাজনীতিবিদ হওয়ার কোনো দরকার নেই, কারণ এসব ‘পুরুষের কাজ’ তখন তিনি হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন।
এছাড়া কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদে অধ্যয়ণরত নারী শিক্ষার্থীরাও তালেবান সরকার তাদের কলা অনুষদে পড়ার সুযোগ দিবে কি না, ভেবে শঙ্কিত।
অ্যাঞ্জেলা ঘাইউর যিনি নারীদের কিছু বিশেষ কোর্সে পাঠদানের জন্য অনলাইন হেরাত স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তিনিও নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার বিষয়ে সন্দিহান।
অ্যাঞ্জেলা বলেন, আমি বিশ্বাস করি তালেবানরা শিক্ষা কারিকুলামে আরও শরিয়া এবং ইসলামিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করবে। নারীদের কোনো খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে না। তাদেরকে আরও পর্দানসীন থাকতে হবে। তাছাড়া তালেবানরা নারীদেরকে তাদের পছন্দের কোন বিষয় বাছাই করতে দিবে না, যেটাকে আমি সবচেয়ে বড় ভয়ের বিষয় মনে করছি।
আফগানিস্তান লিঙ্গের ভিত্তিতে শিক্ষা ব্যবস্থা সীমিত করা বিশ্বের প্রথম কোনো দেশ। তারা দেশটিতে নারীদের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা নিষিদ্ধ করেছে, কিছু ক্ষেত্রে বন্ধ করে দিয়েছে নারীদের বাইরে গিয়ে কাজ করা, ভেঙে দেয়া হয়েছে নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও। নারীদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দেখানো যাবে না তাদের মুখও।
দেশটির ৬টি উষ্ণ প্রদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়া হলেও শীতল প্রদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফেব্রুয়ারির শেষে খোলা হবে বলে জানায়।
১৯৯৬ সাল থেলে ২০০১ পর্যন্ত তালেবান ক্ষমতায় থাকাকালেও নারীদের শিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। কিন্তু নতুন তালেবান সরকার জানায়, তাদের নারী শিক্ষায় কোনো আপত্তি নেই। তবে তালেবান শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, তারা নারী, পুরুষ ভেদে পৃথক ক্লাস ও ইসলামিক মূলনীতি সমৃদ্ধ পাঠ্যক্রম তৈরি করতে চান।