ফুটবলে শক্তিমত্তা বিবেচনায় বা র্যাঙ্কিং সবদিক দিয়েই বাংলাদেশ তো বটেই দক্ষিণ এশিয়ার বাকি ৬ দেশ থেকে অনেক এগিয়ে আফগানিস্তান। বর্তমান ফিফা র্যাঙ্কিং এ আফগানদের অবস্থান ১৩৫-এ। সর্বশেষ সাফ ফুটবলের চ্যাম্পিয়ন দলটিকেই আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ঘরের মাঠে আতিথেয়তা দেবে ভালো খেলার ধারাবাহিকতা ধরে রাখার মিশন নিয়ে ধীরপায়ে সামনে এগোনোর চেষ্টায় থাকা বাংলাদেশ।
ফুটবলে যতোই এগিয়ে থাকুক না কেনো, মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আফগানরা লাল-সবুজের মুখোমুখি হচ্ছে এখন পর্যন্ত কোনো ম্যাচ না জেতার অতীত রেকর্ড নিয়েই। জেতার রেকর্ড তো নেইই বরং তিন যুগ আগে ৪-১ গোলে হেরে যাওয়ার অতীত স্মৃতিও সঙ্গী আফগানদের। সবমিলিয়ে দুইদলের চারবারের সাক্ষাতে বাংলাদেশ জিতেছে ১টি। বাকি ৩ ম্যাচ ড্র।
যদিও সাম্প্রতিক অতীতে ফুটবলে দারুণ এগোনো আফগানিস্তান অতীত নিয়ে না ভেবে নিশ্চিতভাবে বর্তমানেই থাকতে চাইছে। শনিবার দুপুরে ঢাকায় এসে দীর্ঘক্ষণের বিশ্রামে পর রোববার বিকেলে অনুশীলনে ঘাম ঝরিয়েছে সাফ চ্যাম্পিয়নরা। বিকেল চারটায় সিডিউল থাকলেও হোটেল থেকে ধানমন্ডির শেখ জামাল ক্লাব মাঠে অনুশীলনে আসার পথেই বরাদ্দ সময়ের ১ ঘন্টা চলে যাওয়ায় দ্রুতই অনুশীলনে মেনে পড়া আফগান ফুটবলারদের সব মনযোগই যেনো কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টার দিকে।
অনুশীলনের বাইরে গণমাধ্যমে কথা বলতেও খুব বেশি আগ্রহী ছিলেন না কেউই। তবে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়া ৪৩ বছর বয়সী সার্বিয়ান বংশোদ্ভূত আফগানদের জার্মান কোচ স্লাভেন স্কেলেজিচ। শোনান প্রথমবারের মতো কোনো জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর তার নতুন স্বপ্নের কথা।
‘এটা নতুন একটা দল, নতুন দর্শন। আমি জার্মানি থেকে এই দর্শনটা এনেছি’।
দর্শনের বিষয়টি জানতে চাইলে আফগান কোচ হেসে উত্তর দিলেন, ‘আমার দর্শন হলো বার্সেলোনা ও ডর্টমুন্ডের মতো শুধুই আক্রমণ এবং আক্রমণ। ম্যাচে আমরাই আধিপত্য নিয়ে খেলতে চাই।’
আফগানরাও বিশ্বকাপ বাছাইপর্বকে সামনে রেখেই ধারাবাহিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশে এসেছে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ‘ই’ গ্রুপে আফগানিস্তানের প্রতিপক্ষ জাপান, সিরিয়া, সিঙ্গাপুর ও কম্বোডিয়া। আর ধারাবাহিক প্রস্তুতির মাঝেই আমূল পরিবর্তন এসেছে আফগান স্কোয়াডে।
নেপালে সবশেষ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা স্কোয়াডের মাত্র চারজন ফুটবলার এসেছেন ঢাকায়। দলের বেশির ভাগ ফুটবলারই নতুন। যারা খেলছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। মজার তথ্য হলো, আফগান স্কোয়াডের ১৮ জন ফুটবলারই খেলেন বিদেশি লিগে এবং প্রত্যেকেরই আছে দ্বৈত পাসপোর্ট। এদের মধ্যে ৭ জন খেলেন জার্মানির বিভিন্ন লিগে, সুইডেন এবং হল্যান্ডের লিগে খেলছেন ৩ জন করে। আর নরওয়ে, অষ্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড এবং ডেনমার্কে খেলেন ১ জন করে। আরেকজন খেলছেন ভারতের আই লিগে।
আফগানদের কোচ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ নিয়েও তার স্পষ্ট ধারণা থাকার কথাও। সমীহ নিয়েই বললেন, ‘বাংলাদেশ গোছানো দল। হেমন্ত ও এনামুল ভালো মানের ফুটবলার। জামাল ভূঁইয়াও রক্ষণে ভালো খেলবে। আমাদের জন্য কঠিন একটা ম্যাচই হবে। কন্ডিশন বিশেষ করে আবহাওয়া গরম থাকলেও সেটি নিয়ে আফগান কোচ বললেন, ‘আবহাওয়া গরম থাকলেও ছেলেদের মাথা ঠান্ডা থাকবে। আশা করি খেলতে সমস্যা হবে না।’
আবহাওয়া অতিথিদের তেমন শঙ্কায় না ফেললেও সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে গত ম্যাচের পর হোস্ট কোচের চিন্তা ওই গরম আবহাওয়া নিয়েই। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এগিয়ে গিয়েও হেরে যাওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে ক্লান্তি আর গরমকেই কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন বাংলাদেশের ডাচ কোচ লোড-ডি-ক্রইফ। ক্লান্তির সঙ্গে দলের সব খেলোয়াড়ের সমান ফিটনেসে না থাকাও কোচের জন্য দু:শ্চিন্তা।
সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের পরই ক্রইফ বলেছিলেন, এনামুল হক স্বাচ্ছন্দ্যে খেলেও বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নেমে নাসির ৫ মিনিট পরেই হাঁপাচ্ছিলেন। পরে কোচ অবশ্য এও বলেন, সবার সামর্থ্য একরকম হয়না। তবে যতোটা সম্ভব সবাই যেনো এক ছন্দে খেলতে পারে সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করার কথা বলেছেন ক্রুইফ।
সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ম্যাচ হারলেও অবশ্য দলের পারফরম্যান্সে ৮০ ভাগ সন্তোষ হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন হোস্ট কোচ। বাংলাদেশ দলের সহকারী কোচ সাইফুল বারী টিটু জানিয়েছেন, এই ম্যাচগুলো থেকে মূলত পরবর্তী কৌশল কেমন হতে পারে সেটি নির্ধারণ করার লক্ষ্য রয়েছে তাদের। শক্তিশালী বিদেশী দলগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শক্তিমত্তার গভীরতা যাচাই এবং দুর্বলতা চিহ্নিত করার নেপথ্য উদ্দেশ্য নিয়েও এই ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশ নামছে বলে জানিয়েছে তিনি।
এবার বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সরাসরি খেলবে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। তারই আগাম প্রস্তুতি নিতেই প্রীতি ম্যাচগুলোতে নিজেদের যাচাই করার সুযোগ স্বাগতিকদের জন্য। আফগান ম্যাচের পর ১১ ও ১৬ জুন এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের ম্যাচে কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ।
২০১৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়ান কাপর বাছাইপর্বের এই ম্যাচ দুটিও বাংলাদেশ খেলবে ঘরে মাঠে চেনা ভেন্যু বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। এছাড়ার সেপ্টেম্বরে বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি হিসেবেই আফগান চ্যালেঞ্জসহ ম্যাচগুলো লাল-সবুজের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ।