মিষ্টি খাবারের প্রতি ঝোঁক অন্যান্যদের তুলনায় বাঙ্গালীদের একটু বেশি। রসে ভরা রসগোল্লা কিংবা পিঠা-পুলি সব কিছুই মিষ্টি। কিন্তু এই অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়ার অভ্যাসটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, একজন স্বাভাবিক ওজনের সুস্থ মানুষ প্রতিদিন গড়ে ২৫ গ্রাম বা ছয় চা চামচ পরিমাণ চিনি খেতে পারে। তার চেয়ে বেশি চিনি খেলেই স্বাস্থ্যের ওপর ভয়াবহ প্রভাব পড়তে পারে।
কীভাবে বুঝবেন আপনি খুব বেশি চিনি-আসক্ত হয়ে গিয়েছেন?
অন্যান্য ক্ষতিকর নেশার মতই যারা চিনি-আসক্ত, তাদের শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। লক্ষণগুলো মিলে গেলেই বুঝবেন আপনি চিনি-আসক্ত এবং আপনার মিষ্টি খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকার সময় এসে গেছে।
জেনে নিন চিনি-আসক্তের লক্ষণগুলো :
ঝোঁক
যত বেশি মিষ্টি খাবার খাওয়া হয়, তত বেশি খাওয়ার আগ্রহ বাড়ে। মিষ্টি খাবার দেখলেই সেটা খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করে। চিনি এক ধরণের নেশা। যারা এই নেশার কবলে পড়েন তারা মিষ্টি খাবার দেখলে সেটার প্রতি ভীষণ দুর্বলতা অনুভব করেন।
আলস্য
যারা অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার খেয়ে অভ্যস্ত, তারা মিষ্টি খাবার না খেলে আলস্য অনুভব করেন। চিনিযুক্ত খাবার না খেলে ক্লান্তি লাগে, আবার চিনিযুক্ত খাবার খেলেই সেই ক্লান্তি দূর হয়ে চাঙ্গা লাগে।
ত্বক সমস্যা
অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকলে ত্বকের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। নিষ্প্রাণ ত্বক, অতিরিক্ত ব্রণের সমস্যা, ফুসকুড়ি ইত্যাদি সমস্যা তৈরি হতে পারে ত্বকে।
ওজন বৃদ্ধি
কোনও ভাবেই ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না? তাহলে চিনি নিয়ন্ত্রণ করুন খাবারে। ওজন ধীরে ধীরে কমে যাবে। চিনিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি আছে, যা শরীরকে স্থূলতার দিকে ঠেলে দেয়।
দাঁত ক্ষয়
নিয়মিত সঠিক নিয়মে দাঁত ব্রাশ করার পরও যারা দাঁত ক্ষয়ের সমস্যায় ভুগছেন, তারা চিনি খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিন। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে দাঁতের ক্ষতি হয়। দাঁতের এনামেল নষ্ট করার জন্য অন্যতম দায়ী উপাদান হলো চিনি। এটি দাঁত ক্ষয়কারী ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য যোগান দেয়।
ঝিমঝিম ভাব
খাবার গ্রহণের পর যদি মস্তিষ্ক সতেজ না থেকে ঝিমঝিমে ভাব অনুভূত হয়, তাহলে বুঝতে হবে অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করে ফেলেছেন আপনি। মস্তিষ্কে নানা ধরণের জটিলতা তৈরি হয় মাত্রাতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে চাইলে খাবারে চিনির পরিমাণ কমানো উচিত।
রুচি কমে যাওয়া
অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাস করে ফেললে ধীরে ধীরে সব খাবারেই রুচি কমে যাবে। কোনও খাবারই আগের মত স্বাদ লাগবে না। স্বাভাবিক মিষ্টি খাবারও তখন পানসে মনে হবে। সব কিছুতেই বাড়তি মিষ্টি দিয়ে খেতে ইচ্ছে করবে।
উপরের লক্ষণগুলো যদি আপনার সাথে আংশিক অথবা হুবহু মিলে যায় তাহলে আপনি অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার গ্রহণ করছেন। ধীরে ধীরে মিষ্টি খাবার কমিয়ে দেয়ার অভ্যাস করুন। চিনি কমিয়ে দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই আগের চেয়ে ঝরঝরে অনুভব করবেন আপনি। আননোন রিমেডি।