অভিভাবকরা সন্তানকে দোষারোপ করেন সারাক্ষণই। বাবা মায়ের হাজারও ‘কেন’ এর উত্তর দিতে দিতে একসময় সন্তান হাঁপিয়ে ওঠে। তবুও প্রত্যাশা ফুরায় না অভিভাবকদের। ক্লাসে, খেলাধুলা, নাচ, গান, ছবি আঁকা, পরিবার, পাড়া সব যায়গায় সন্তানকে সেরা হিসেবে চান অভিভাবকরা। তাদের উচ্চাশার বলি হয় শিশুরা। বাবা মায়ের উচ্চাশা পূরণের তাগিদে নিজেদের সুন্দর শৈশব হারিয়ে ফেলে তারা।
সন্তানের ভালোর জন্যই কিছু প্রত্যাশা থাকবেই বাবা-মায়ের। কিন্তু কিভাবে বুঝবেন যে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করে ফেলছেন কিনা আপনি? জেনে নিন তাহলে।
খুব বেশি নিয়ম জারি
সন্তানের নিরাপত্তার জন্য কিছু নিয়ম বেঁধে দেয়া আবশ্যক। ঘরে ফেরার সময়, টিভি দেখার সময় বেঁধে দেয়া তো সব বাবা-মায়েরই কাজ। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই নিয়ম বেঁধে দিচ্ছেন না তো? কি পোশাক পরবে, কি খেলা খেলবে, কি ছবি আঁকবে সব কিছুই যদি নিয়মের সূতায় বেঁধে ফেলেন তাহলে জেনে নিন আপনার অতিরিক্ত প্রত্যাশা সন্তানের জন্য ক্ষতিকর।
সন্তানকে হুমকি দেয়া
সন্তানকে কি প্রায়ই হুমকি দেন? খেলনা কেড়ে নিবেন, বাহিরে যাওয়া বন্ধ করে দিবেন কিংবা বাথরুমে আটকে রাখবেন এধরণের হুমকি দেয়ার অভ্যাস থাকলে আপনার উচ্চাশা সন্তানকে ধীরে ধীরে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করে ফেলছে। আজ আপনি হুমকি দিচ্ছেন, কিছুদিন পর সন্তানই আপনাকে হুমকি দেয়া শুরু করবে। তখন সন্তানের ব্যবহার সহ্য করতে পারবেন তো?
ফলাফল নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা
পরীক্ষার ফলাফল দেয়ার সময় ঘনিয়ে আসলে আপনার হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায় এবংচোখের ঘুম উড়ে যায়। এমনকি খাওয়া দাওয়াও আপনার মুখে রোচে না দুশ্চিন্তায়। শুধু পরীক্ষার ফলই নয়, খেলাধুলার ক্ষেত্রেও দুশ্চিন্তায় অস্থির হয়ে থাকেন আপনি। যদি এমন হয়, তাহলে সন্তানের প্রতি আপনার উচ্চাশা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সন্তানের ফলাফল নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকা স্বাভাবিক কিন্তু অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থাকা মোটেও উচিত নয়। কারণ আপনার দুশ্চিন্তার প্রভাব পড়বে সন্তানের সাথে আপনার ব্যবহারের ওপর। আপনার কারণে প্রচণ্ড মানসিক চাপে থাকবে আপনার সন্তান।
প্রশংসা না করা
সন্তানের প্রতি আপনার প্রত্যাশা এতটাই বেশি যে, তার কোনো সাফল্যই আপনাকে তৃপ্ত করতে পারেনা। সব সময়েই আপনার মনে হয়, আরও একটু ভালো করা যেত। আপনার ধারণা, প্রশংসা করলেই বেশি প্রশ্রয় পেয়ে যাবে সে। যদি এধরণের ধারণা আপনার মনে লুকিয়ে থেকে থাকে, তবে জেনে নিন আপনার উচ্চাশা সন্তানের ক্ষতি করছে। প্রশংসা আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। প্রশংসা না করলে সন্তান আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগবে এবং এর প্রভাব তার সার্বিক কাজ-কর্মের ওপর পড়বে।
সন্তানের সাথে দূরত্ব
আপনাকে খুব ভয় পায় এবং আপনার থেকে একটু দূরে থাকতেই সে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আপনার সাথে সন্তানের দূরত্বের কারণ আপনার উচ্চাশা। আপনি হয়তো ভাবছেন, সন্তানের সাথে একটু দূরত্ব থাকাই ভালো। দূরত্ব না থাকলে শাসন মানবে না সে। কিন্তু, আপনার ধারণা ভুল। সন্তানের সাথে দূরত্ব তৈরি হলে মিথ্যা বলার প্রবণতা বাড়ে এবং নানান অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পরার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্কটাও নষ্ট হয়ে যায় ধীরে ধীরে।
ভাবছেন কী করবেন? সন্তানের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলুন। তাকে ভালো-মন্দের তফাৎ বুঝিয়ে দিন। তবে চিৎকার-চেঁচামেচি করে নয় এবং স্নেহের সাথে পরামর্শ দিন সন্তানকে। যে কোনো প্রত্যাশার ক্ষেত্রে ভেবে দেখুন সেটা সন্তানের সাধ্যের বাইরে যাচ্ছে কিনা। সন্তানের সাথে আপনার সম্পর্কের দূরত্ব মিটিয়ে ফেললে আপনার প্রত্যাশাগুলোকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিবে আপনার সন্তান। ফেমিনা।