আইনের ফাঁকফোকরে রয়েছে হাজারো ঝামেলা। তাছাড়া কাউকে এমন শাস্তিও দেয়া যাবে না যে সেই ব্যক্তি পঙ্গু হয়ে যায়। না হলে প্রস্তাব দেয়া যেতো ওসব কেটে-কুটে দেয়া হোক। ববিতা নামের এক মহিলা একবার কাজটা করেছিলেন। তিনি এখন কোথায় আছেন কে জানে! নিশ্চয় এখনো ব্যাগে ছুরিকাঁচি নিয়ে ঘুরে বেড়ান।
কিছু একটা করা দরকার। কি করা যায়! মনে করুন ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রতিবাদ আপনার কানে এসেছে এবং আপনি একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি কিংবা সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা। আপনারও সদিচ্ছা আছে দৃষ্টান্তমূলক একটা আইন করার। কেননা আপনিও সারাক্ষণ ভয়ে থাকেন আপনার কন্যা-স্ত্রী-বোন বা আপনজনদের মধ্যে কেউ হয়তো যখন-তখন আক্রান্ত হয়ে অচেনা স্থান থেকে উদ্ধার হতে পারে। তার ওড়না পাওয়া যাবে এক জায়গায়, স্যান্ডেল অন্য খানে। এমন ভয়ানক দৃশ্য দেখে আপনি ডুকরে কেঁদে উঠবেন, টেলিভিশন পর্দায় তখন সেটা প্রচার হবে। কয়েকদিন পর টেলিভিশনের দর্শক- কাগজের পাঠক সব কিছু ভুলে যাবে। আপনিও কাজে মনোনিবেশ করবেন, ব্যস্ত হবেন।
ট্রাফিক জ্যামে আটকে গেলে ফ্লাস্ক থেকে ঢেলে গরম কফি খাবেন। এমন দিনে ওরা পুনরায় ফুলে ফেঁপে আবারো পথে নেমে আসবে। এবার তাদের টার্গেট হবে অন্য কারোর আপনজন। আপনার যা হবার তাতো হয়েই গেছে, আপনি এক ধাক্কাতেই রেহাই পেয়েছেন। না, তাও বলা ঠিক হলো না হয়তো। ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে আপনার ঘরেও।
কথা হলো আর দেরি নয়, ভয়ানক শাস্তির কোনো বিকল্প নেই এখন। কিন্তু কী হতে পারে সেই শাস্তি? এক হতে পারে ধর্ষক প্রমাণিত হলে তাকে প্রতি মাসে ডাক্তারের কাছে গিয়ে একটা নির্জীব ইনজেকশন নিয়ে আসতে হবে শাস্তির মেয়াদ পর্যন্ত। শাস্তি শেষে তার দুই গালে ছেঁকা দিয়ে সমাজে ফিরিয়ে আনা হবে। হয়তো ছেঁকাতে বড় অক্ষরে ‘ধ’ লিখে দেয়া যেতে পারে যাতে ‘কুকুর হইতে সাবধানের’ মতো ‘ইতর হইতে সাবধান’ হবার সুযোগ পায় সমাজের লোকজন।
বিকল্প বিকল্প… আচ্ছা যদি শক্ত একটা ধাতব আচ্ছাদন পরিয়ে দেয়া হয় যেটা কোনভাবেই কাটা যাবে না বা কাটতে গেল মূল অংশটা কেটে ফেলতে হবে তাহলে কেমন হয়! এমন ডোম পরানোর ব্যবস্থায় ছোট্ট একটা নালি পথ থাকবে নির্গত হবার জন্য, তাছাড়া পুরো জিনিষটাই অ-ব্যবহারযোগ্য। আচ্ছা এটাও পছন্দ হলো না! ঠিক আছে আপনি না হয় উত্তম উপদেশ দিয়ে উপকার করেন। কিছু একটা করতে হবে। যে আইন শত শত বছর টিকে থেকেও মৃত্যুকে রুখতে পারে না সে আইন টিকিয়ে রেখে লাভ কী? প্রতিবাদ আর কতো? সরকার তো আর ভাড়া করে লোক লাগিয়ে দেয় না, যাও অসভ্য হয়ে আসো। খুব বেশি হলে সরকার কিছু কিছু অসভ্যদের মাথায় হাত দিয়ে রাখে। এক এক সরকারের আমলে এক এক লোকের মাথায় হাত, তাও কদাচিৎ। কাজেই প্রতিবাদে কী লাভ হবে জানি না।
প্রতিবাদতো বহু বছর থেকে হচ্ছে। একটা প্রতিবাদ হয়তো একটা অপরাধের জন্য কাজে আসে কিন্তু হাজারটা অপরাধ রুখতে পারে না। হাজার হাজার বছর হয়ে গেল সভ্য হবার ইতিহাস। এখনো ধর্ষণ এর মতো একটা বর্বরতা বন্ধ হচ্ছে না। মনে করেন আপনি একজন কর্তৃপক্ষ। আপনার অল্প বয়সের মেয়েটির দিকে এখন থেকেই একজনের লকলকে লোলুপ দৃষ্টি। তাড়াতাড়ি নতুন আইন করতে না পারলে সেও হয়ে যেতে পারে অন্য আরেক তনু। তখন আপনার ভূমিকা বিচারপ্রার্থী। কিছু একটা করুন। না হলে আপনার কন্যার লাশ আপনাকেই দুষবে। আপনি একা না পারলে ডাক দেন, দেখবেন আপনার পাশে এসে অনেকে দাঁড়াবে। ভালো কথা আপনার কন্যার নামটা যেনো কী? আগের থেকে শুনে রাখি যাতে ভবিষ্যতে তার গলাকাটা লাশের ছবি দেখে চিনতে না পারলে নাম থেকে বুঝতে পারি আপনিও কিছু করেননি। এমন কি ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও না।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)