ঢাকা এবং চট্টগ্রামের তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর দল পুনর্গঠনে নামবে অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যায় জর্জরিত থেকে আন্দোলনে ব্যর্থ বিএনপি। দলের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা বলেছেন, বারবারই প্রমাণ হচ্ছে সারা দেশে বিএনপির জনপ্রিয়তা থাকলেও দলটির সাংগঠনিক শক্তি একবারেই নড়বড়ে। এখন তাই দল গোছানোকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।
‘সরকারের চূড়ান্ত নিপীড়নমূলক অবস্থান’ আর সাংগঠনিক দুর্বলতার পাশাপাশি দলের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাদের সুবিধাবাদ, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম, দুর্নীতি এবং গ্রুপিংও আন্দোলনের ফল নিজেদের পক্ষে না আসার কারণ হিসেবে দেখছেন তুলনামূলক ‘স্বচ্ছ ইমেজের’ নেতারা। তাই সব সীমাবদ্ধতা ঝেড়ে ফেলে সব পর্যায়ে ‘ক্লিন ইমেজের’ নেতাদের নিয়ে একটি সাংগঠনিক শক্তির দল গড়ার পক্ষে তারা।
দলের কয়েকজন নীতি-নির্ধারক বলেছেন, শুভাকাংখীরাও আশা করছেন যে বিএনপি প্রধান আপাতত: আন্দোলনের চেয়ে সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে বেশি মনোযোগী হবেন।
আন্দোলনে ব্যর্থতার পর বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া অবশ্য দয়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের উপর আর আস্থা রাখতে পারছেন না। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানোর সময় বেগম জিয়া বিএনপির কোনো নেতাকে সঙ্গে না রাখায় বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে গেছে বলে তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন মন্তব্য করেছেন।
বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, বিএনপি চেয়ারপার্সনের নির্দেশে নিরপেক্ষ একটি অবস্থান থেকে আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণগুলো চিহ্নিত করা হছে। দায়িত্বপ্রাপ্তরা আন্দোলনে ব্যর্থ জেলা এবং নিষ্ক্রিয় নেতাদের নামের তালিকা করছেন। দল পুনর্গঠনে সেই তালিকার সঙ্গে যুক্ত হবে তারেক রহমানের পরামর্শ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন, আন্দোলনে ব্যর্থ জেলা কমিটিগুলো শিগগিরই ভেঙ্গে দেয়া হবে। নিষ্ক্রিয় নেতাদেরও গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বাদ দেয়া হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে কাউন্সিল করা যায় কি না সেটা নিয়েও ভাবছে বিএনপি।
তা হলে কি বিএনপি এখন আর আন্দোলনের কথা ভাবছে না? সিনিয়র ওই নেতা মনে করেন, আন্দোলনের চেয়ে দল গোছানোই এই মুহূর্তে বিএনপির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আর বিএনপি চেয়ারপার্সন সেদিকেই বেশি মনোযোগী হচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে আন্দোলন থেকে বেরিয়ে আসার একটি পথ পাওয়ার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে দলকে সক্রিয় করার অংশ হিসেবে তিন সিটির নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ।
তবে বিএনপির মুখপাত্র এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ডক্টর আসাদুজ্জামান রিপন নির্বাচনকে আন্দোলন থেকে বেরিয়ে আসার পথ হিসেবে দেখতে রাজি নন। তিনি বলেছেন, সবসময় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভালো করেছে বিএনপি। আর নির্বাচনের দলও বিএনপি। এ কারণেই নির্বাচনে গেছে তাদের দল। জয় পরাজয় আন্দোলনে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না বলেও দাবি তার।
অন্য নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, ৫ জনুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপি যেমন আর আন্দোলনের দিকে এগোয়নি, এবারও সিটি নির্বাচনের পরও ওইরকম ‘ধীরে চলো’ নীতিতেই চলবে বিএনপি।
Email: chokor.malitha@gmail.com