চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আন্দোলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভূমিকা দেখতে চায় বিএনপির তৃণমূল

বিগত দিনগুলোতে আন্দোলন-সংগ্রাম ব্যর্থ হওয়ার জন্য কেন্দ্র এবং ঢাকার ওপর দোষ চাপিয়ে বিএনপির তৃণমূল নেতারা বলেছেন, এবার কেন্দ্রের ভূমিকা দেখতে চাই, ঢাকা কী করে তা দেখতে চাই। বিএনপির নির্বাহী সভায় তৃণমূল নেতারা বলেছেন, ২৪ ঘণ্টার নোটিশে আমরা সারা দেশ অচল করে দিয়েছি, ঢাকা পারেনি। এবার ঢাকার ভূমিকা দেখতে চাই।

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সাজা হলে, বিশেষ করে কারাদণ্ড হলে দল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানান বিভিন্ন জেলার নেতারা। তারা বলেছেন, ‘এক-এগারোর’ মতো কোন পরিস্থিতি এলে যেন দলের ঐক্য অটুট থাকে।

হোটেল লা মেরিডিয়ানে দুই ধাপে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১১টায় ছিল উদ্বোধনী সেশন। দ্বিতীয় ধাপে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বিএনপির তৃণমূলের নেতারা দলীয় প্রধানের সামনে বক্তব্য রাখেন। সেখানে এসব কথা উঠে আসে।

চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অন্তরীণ হলে কেউ কেউ নিজেরাও জেলে যাওয়ার বিষয়ে শপথ করেন। খালেদা জিয়া বাইরে থাকলে আন্দোলনে জয়ী হয়ে তাকে মুক্ত করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন অনেকে। অনেক নেতা বলেন, মিথ্যা মামলায় যদি বেগম জিয়াকে অন্যায় সাজা দেয়া হয় তাহলে আমরা প্রতিহত করবো। সারাদেশে এর রেশ ছড়িয়ে পড়বে। আমরা বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং বিএনপি ছাড়া দেশে কোন একদলীয় নির্বাচন হতে দেব না।

তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা গণতান্ত্রিক দাবি আদায়ে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলনের পক্ষে বক্তব্য দেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দল চালানোর দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।

সবার বক্তব্য শোনার পর বেগম খালেদা জিয়া সমাপনী বক্তব্যে নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আমার হারানোর কিছুই নেই। রাজনীতির জন্য স্বামী, মা, সন্তানকে এমনকি বাড়ি হারিয়েছি। আমার এক সন্তান বিদেশে আছে। আপনারাই আমার আশা। আপনাদের নিয়েই আমি রাজনীতি করছি। আমি ভিতু নই। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চলছে চলবে। আপনারা অনেক পরিশ্রম করছেন। আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। কারো ভাই, ছেলে, বোন, বাবা হারিয়েছে। এখন নতুনদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।

খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা হঠকারী কোন কিছুতে পা দেবেন না। দলকে বিপদে ফেলার মতো কিছু করবে না। সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। এবার যদি কেউ দলের বিরুদ্ধে কিছু করে থাকে তাদের চিহ্নিত করা হবে এবং তাদেরকে ভবিষ্যতে কোন পদ দেয়া হবে না। আমার বিশ্বাস সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে দলকে শক্তিশালী করবেন।

এছাড়া নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা সব আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল, যারা কাজ করেছে, যারা দলের সাথে বেইমানি করেনি, দলে তাদের ভালো ভালো জায়গায় অবস্থান দেয়া হবে। কিন্তু যারা বেইমানি করবে, এক পা এদিকে, আরেক পা ওদিকে রাখবে, তাদের কোন মূল্যায়নের জায়গা নেই। এদের তারাও (সরকার) নেবে না, আমরাও নেবো না। ক্ষমা কিন্তু একবার হয়, বারবার হয় না।

সভা শেষে খালেদা জিয়াকে তার গাড়িতে উঠে কিছু সময় অপেক্ষা করতে দেখা যায়। দলের দুই-তিন জন জ্যেষ্ঠ নেতার গাড়ি হোটেল ত্যাগের পর তার গাড়ি হোটেল এলাকা ত্যাগ করে। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, আজকের বৈঠক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ অপেক্ষা করছিল, এই গ্রেপ্তার এড়াতে নেতারা সতর্কভাবে হোটেল ত্যাগ করেন। এ কারণে খালেদা জিয়া গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করে থাকতে পারেন।

শনিবার বেলা ১১টার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত বিএনপির প্রায় ২৬ জন কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভাকে ঘিরে লা মেরিডিয়ান হোটেলের সামনে ও পেছনের রাস্তায় পুলিশ, র‍্যাব অবস্থান নেয়। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরাও হোটেলের পাশে অবস্থান করতে দেখা যায়।

শনিবার সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা সোয়া ৬টা পর্যন্ত রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক হয়। ৫০২ সদস্যের নির্বাহী কমিটির অধিকাংশ সদস্যই এতে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকালে উদ্বোধনী পর্বে শুরুতে প্রতিবেদন পেশ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মহাসচিবের বক্তব্যের পর বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভিডিও বার্তা প্রচারিত হয় হল রুমে। এরপর উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। সোয়া এক ঘণ্টা বক্তব্য রাখেন তিনি। বেলা সোয়া ১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্বাহী কমিটির মোট ৪২ জন বক্তব্য রাখেন।