মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর গণহত্যার অভিযোগে নেদারল্যান্ডের ‘আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে’ (আইসিজে) বিচারকার্যের দ্বিতীয় দিনের শুনানি শেষ হয়। তৃতীয় দিনেও মিয়ানমার এবং গাম্বিয়া শুনানি ও যুক্তিতর্কে অংশ নেয়।
মিয়ানমারের পক্ষে তথ্য উপস্থাপন করে দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি মিয়ানমারের পক্ষেই নানা যুক্তি তুলে ধরে সাফাই গাওয়াতে চরম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে শরনার্থী রোহিঙ্গারা।
তারা বলেন, সুচির নির্দেশে সেনাবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে। যার পর্যাপ্ত প্রমাণ আন্তর্জাতিক মহলের কাছে আছে।
গণহত্যার অভিযোগ উত্থাপন করে গত নভেম্বর মাসে নেদারল্যান্ডের ‘আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে’ ওআইসির পক্ষ থেকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে আফ্রিকান রাষ্ট্র গাম্বিয়া। ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে গণহত্যা নিয়ে আইসিজের অভিযোগের ৩ দিনের শুনানি।
বুধবার ছিল মিয়ানমারের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের সময় মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির বক্তব্য শুনে চরম ক্ষুব্ধ হয় রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন দোকানে তারা টেলিভিশনে সু চির বক্তব্য দেখেন ও শুনেন। যেখানে মিয়ানমারের পক্ষে আদালতে সাফাই দিয়েছেন সু চি। তিনি বলেছেন, আদালতে গাম্বিয়ার অভিযোগ অসম্পূর্ণ ও ভুল। রাখাইনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপর ধারাবাহিক হামলা চালিয়েছে রোহিঙ্গাদের জঙ্গি সংগঠন আরসা, আরসার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযানে রোহিঙ্গারা বাস্তুচ্যুত হয়। এতে আরাকানে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকলে, দোষীদের সামরিক আইনে বিচার হবে বলেও জানান তিনি।
সু চির এ বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা দাবি করেছে রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলন: সু চির নিদের্শে সেনাবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে। যার পর্যাপ্ত প্রমাণ আন্তর্জাতিক মহলের কাছে রয়েছে।
উখিয়ার কুতুপালং ৪ নাম্বার ক্যাম্পের বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বলেন: মিয়ানমারের যে সেনাবাহিনী অং সান সু চিকে দশ বছর গৃহবন্দি রেখেছিল সে বাহিনীর পক্ষে সাফাই গাইলেন সু চি। এতে বোঝা যায় তিনি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কাছে বিক্রি হয়ে গেছেন। তিনি এখন স্বাভাবিক আছেন বলেও মনে হয়না।
টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসকারী রহিমুদ্দিন বলেন: অং সান সু চি যে এতো মিথ্যাচার করবে আমরা তা বিশ্বাস করতে পারছি না।
টেকনাফের শালবন ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গা রফিকুল ইসলাম বলেন: অং সান সু চি একজন মিথ্যাবাদী। তিনি কোনদিন মানবতাবাদী হতে পারেন না।
মওলানা আবদুল করিম নামের এক রোহিঙ্গা নেতা জানালেন, সু চি দায় মুক্তির জন্য বক্তব্য দিয়েছেন।
অথবা সু চি রাখাইনের পুরো পরিস্থিতি জানেন না। তাদের কাছে যে প্রমাণ আছে তা গণহত্যা প্রমাণে যথেষ্ট।
আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুহিব উল্লাহ বলেন: সু চি মিথ্যাচার করছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দালাল সু চি। আমরা আমাদের দেশ মিয়ানমারে নিরাপদে ফিরতে চাই। সেজন্য আমরা বিশ্ববাসীর সহযোগিতা চাই।
আইসিজেতে শুরু হওয়া বিচারকার্যটি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের কূটনৈতিক সফলতার প্রাথমিক ধাপ। এতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।