বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অংশ নেবেন না বিসিবির সাবেক সভাপতি ও বারিধারা ড্যাজলার্স ক্লাবের পরিচালক সূত্রে কাউন্সিলর হওয়া সাবের হোসেন চৌধুরী। এজিএমের আগেরদিন রোববার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে মিডিয়া ব্রিফিং করে সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।
সাবের হোসেন মনে করেন যে গঠনতন্ত্র আদালত অবৈধ বলে রায় দিয়েছে তার অধীনে কোনও কার্যক্রমে অংশ নেয়া আদালত অবমাননা, ‘আমি একজন সংসদ সদস্য। আমরা আইন তৈরি করি, প্রণয়ন করি। আইনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা একটু বেশিই হওয়া উচিত। এমন একটা এজিএম বা প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত হবো না, যেটাতে পরবর্তীতে একটা কনটেন্ট অব কোর্টের ঝুঁকি সৃষ্টি হয় এবং সেটাই হচ্ছে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। সাধারণ জ্ঞান দিয়ে বুঝি, যে গঠনতন্ত্রকে অবৈধ বলা হচ্ছে সেই গঠনতন্ত্রের অধীনে বা সেই গঠনতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় যদি কোনও প্রক্রিয়া হয়; তাহলে সেটা আমার দৃষ্টিতে আদালতের অবমাননা।’
বিসিবি ২০১২ সালের ১ মার্চ গঠনতন্ত্র সংশোধন করেছিল। সেটি অনুমোদন না দিয়ে কিছু সংশোধনী আনে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। ডিসেম্বরে এনএসসির সংশোধিত গঠনতন্ত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন বিসিবির নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য প্রয়াত ইউসুফ জামিল বাবু ও মোবাশ্বের হোসেন।
পরে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট রায় দেন এনএসসির সংশোধিত গঠনতন্ত্র অবৈধ। পরদিনই হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে এনএসসি ও বিসিবি। ওই বছর ২৫ জুলাই আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। পরে দেশের স্বার্থ বিবেচনায় এনএসসির সংশোধিত গঠনতন্ত্রেই নির্বাচনের অনুমতি পায় বিসিবি।
চলতি বছরের ২৬ জুলাই বিসিবির সংশোধিত গঠনতন্ত্র অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে আপিল নিষ্পত্তি করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। বিসিবি প্রয়োজন মনে করলে গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন করতে পারবে বলে পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়, যাতে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। তারই ফলশ্রুতিতে ২ অক্টোবর এজিএম ও ইজিএম করার তারিখ ঘোষণা করে বিসিবি।
বিসিবি থেকে ১০ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলর হিসেবে এজিএমে থাকার জন্য চিঠি পান সাবের হোসেন। ১৫ সেপ্টেম্বর বিসিবি সভাপতি বরাবর চিঠি দিয়ে সাবের আদালতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এজিএম বন্ধ রাখার অনুরোধ করেন। বিসিবি পরে এজিএম যথাসময়ে করার ঘোষণা দেয়ার পর নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করলেন সাবের।
বিসিবি যে গঠনতন্ত্রে কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে সেটি কেন অবৈধ সেই যুক্তি তুলে ধরেন সাবের, ‘সুপ্রিমকোর্ট হাইকোর্টের রায় বহাল রাখল। হাইকোর্টের রায়ে কী ছিল? হাইকোর্টের জাজমেন্টে কিন্তু কোন গঠনতন্ত্রে নির্বাচন হবে সেটা নিয়ে কিছু ছিল না। বলা ছিল, এনএসসি সংশোধনী যে গঠনতন্ত্র অনুমোদন করল বা এনএসসি যে সংশোধনী দিল সেটি বৈধ নয়। সেটিই ছিল রিটের মূল বিষয়। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টে আপহেল্ড করা হল। এখন যে গঠনতন্ত্র আছে, হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্ট বলছে এটার কোনও বৈধতা নেই। সেটার অধীনে যদি কোনও প্রক্রিয়া হয়, তার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন আসতেই পারে। আমি বিসিবিকে চিঠিতে বলেছি, আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি আর কাউন্সিলর থাকার যোগ্য না, কেননা যে গঠনতন্ত্রে কাউন্সিলর হয়েছি সেটিই অবৈধ। ওই চিঠিতে আমার কোনও অধিকারের কথা বলিনি। বলেছি আমার নামটা ওখান থেকে সরিয়ে নিতে চাই। কেননা এই জাজমেন্টের আলোকে আমি আর কাউন্সিলর থাকতে পারি না। যদি বলা হয় গঠনতন্ত্র অবৈধ, সেটার অধীনে যে কাজগুলো হয় তার কিন্তু বৈধতা থাকতে হয়। আমি সেই প্রশ্নটা করেই বোর্ডকে চিঠি দিয়েছি। যদি চিঠির জবাব পেতাম, তারা যদি বলত এটা বৈধ, তাহলে আমি এজিএমে অংশ নেওয়ার বিষয়টা ভাবতাম।’
অন্যদিকে এজিএমের সকল কার্যক্রম সেরে ফেলেছে বিসিবি। দোতলায় যখন সাবের হোসেন ব্রিফিং করছিলেন, তখন একই হোটেলের নিচতলায় অবস্থান করছিলেন বিসিবির বর্তমান বোর্ডের প্রভাবশালী কয়েকজন পরিচালক। পরে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন সেখানে উপস্থিত বিসিবির সহ-সভাপতি মাহবুবুল আনাম। তিনি জানান, সোমবারের এজিএম ও ইজিএমে বিসিবির গঠনতন্ত্রে সংশোধনী আনা হবে। যাতে বিসিবির আরও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।
চার বছরের মেয়াদে এজিএম ও ইজিএম না করায় পূর্ববর্তী বছরসমূহের কার্যক্রম মূল্যায়ন এবং তার অনুমোদন দেয়া হবে। পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদিত অর্থবছর সমূহের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত বিষয় নিরীক্ষণ-অনুমোদন এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটও অনুমোদন করা হবে ইজিএমে।
সেইসঙ্গে নিমবাস কমিউনিকেশনের সঙ্গে টিভি স্বত্ব নিয়ে বিসিবির ২৭ মিলিয়ন ডলারের বিরোধের নিষ্পত্তি, বিসিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পারিশ্রমিক নির্ধারণ এবং সাধারণ পরিষদ কর্তৃক উত্থাপিত কোন জরুরি বিষয়ের নিষ্পত্তিও সভায় গুরুত্ব পাবে বলে জানা গেছে।
এজিএম ও ইজিএমে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে ১৬৯ জন কাউন্সিলরের। সোমবার সকাল ১১টায় রাজধানীর একটি হোটেলে শুরু হওয়া এজিএমের শেষে ১০ মিনিট বিরতি দিয়ে শুরু হবে ইজিএম।