দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা, হয়রানি বা অপমৃত্যুর পরে আদালতের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার একটি সংস্কৃতি চালু হয়েছে। আদালতের আদেশে বেশকিছু ভিক্টিম ও তাদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার পরে বিভিন্ন ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের আদালতমুখী হবার প্রবণতা বেড়েছে।
গ্রিন লাইন পরিবহনের বাস চাপায় পা হারানো রাসেল সরকারের ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আদালতের আদেশ, সেরকমই একটি ঘটনা।
২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল যাত্রাবাড়িতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসের চাপায় এক যুবকের বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ওই যুবককে চাপা দেওয়ার পর গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসটি এবং তার চালককে পুলিশ আটক করে। পরে পুলিশ জানায়, মো. রাসেল (২৫) নামের ওই যুবক একটি প্রাইভেট কার চালাচ্ছিলেন। বাসটি তার গাড়িকে ধাক্কা দিলে প্রতিবাদ জানাতে বাস থামাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাস চালক তার ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেন। এতে রাসেলের বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ির বাসিন্দা রাসেল রাজধানীর আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিংয়ে বাস করতেন এবং স্থানীয় একটি ‘রেন্ট-এ-কার’প্রতিষ্ঠানের প্রাইভেট কার চালাতেন। রাসেলের পা হারানোর ঘটনার পর গত বছরের ১৪ মে ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী উম্মে কুলসুম। সেই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণের রুলসহ আদেশ দেন।
এই আদেশটি গণমাধ্যমসহ সামাজিক মাধ্যমে বেশ আলোড়ন তুলেছিল। বেপরোয়া যান চালকরা এধরণের আদেশে সাবধান হবে বলেও মত প্রকাশ করেছিলেন অনেকে। ওই আদেশের ফলে গ্রিন লাইনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।
ওই রিটের পরে নানা ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে মোটা অঙ্কের দাবিযুক্ত অনেক রিট দেখা গেছে। বিজ্ঞ আদালত সেসবের গুরুত্ব দেখে প্রয়োজনীয় নির্দেশ নয়তো খারিজ করে দিচ্ছেন। আদালতের এই ধরণের পদক্ষেপের ফলে নানা দুর্ঘটনা বা হত্যাকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তরা যেমন আশার আলো দেখতে পেয়েছেন, তেমনি ঘটনার জন্য যারা বেশি বেশি অভিযুক্ত হচ্ছে সেই গ্রুপ সাবধান হচ্ছে বলে আমরা মনে করি।
রাসেল সরকারের ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গ্রিন লাইন বাস কর্তৃপক্ষের করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ রবিবার এ আদেশ দেন।
আদালতের আদেশে রাসেল সরকারের মতো ক্ষতিগ্রস্তের মনে আশা জেগেছিল, আবার আদালতের আদেশেই কিছুটা হতাশাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে হয়েছে। যদিও আইন তার নিজ গতিতে চলে, আর ক্ষতিগ্রস্তদের স্বার্থ আইনের আলোকে দেখে থাকেন বিচারকগণ। রাসেল সরকারের বিষয়টিও আদালতের মাধ্যমে একটি ন্যায্য পরিস্থিতিতে এসে পৌঁছালে তা সামনের দিনগুলিতে একটি আইনী মাইলফলক হিসেবে উল্লেখিত হবে বলে আমাদের ধারণা। জনগণের শেষ ভরসার স্থল আদালতের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সেরকম একটি পর্যায় তৈরি হোক, এই আমাদের প্রত্যাশা।