গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের অধিবাসী এক রোহিঙ্গা তরুণকে তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির আদালত।
গত ৩০ আগস্ট স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কুয়ালালামপুরের আমপাং পার্ক এলআরটি স্টেশনে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চলমান নির্যাতনের প্রতিবাদে আয়োজিত এক র্যালিতে ১৯ বছর বয়সী রেস্টুরেন্ট সহকারী আলী জোহার জামাল হাসিন হঠাৎই নিজের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন।
ওই র্যালিতে দু’হাজারেরও বেশি মানুষ ছিল। আগুন লাগানোর সময় কাছেই দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে আলী জোহারকে থামতে বলে। আলী চিৎকার করে বলছিলেন, তার জীবন অর্থহীন হয়ে গেছে। তার পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। তখন আলীকে বুঝিয়ে শান্ত করে পুলিশ। তারপর তাকে গ্রেফতার করা হয়।
আত্মহত্যা চেষ্টায় তিন মাস ছাড়াও বৈধ কাগজপত্র ছাড়া মালয়েশিয়ায় ঢোকার অভিযোগে ম্যাজিস্ট্রেট আহমাদ সোলিহিন আব্দ ওয়াহিদ বুধবার আলীকে আরও তিন মাসের জেল খাটার সাজা দিয়েছেন।
আসামী আলী তার কাজের পেছনের কারণ হিসেবে বলেন, মিয়ানমারে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি খুব বেশি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। তাই নিজের গায়ে আগুন লাগানোর মধ্য দিয়ে তিনি এই পরিস্থিতির প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলেন।
‘আমি নিজেকে পুড়িয়ে দিতে চাই, আমার আর বেঁচে থাকার কোনো অর্থ নেই। মিয়ানমারে আমার পুরো পরিবারকে গুলি করে, বোমা ছুড়ে মেরে ফেলা হয়েছে,’ আদালতের কাঠগড়ায় এসব বলতে বলতে চিৎকার করে কান্নায় ভেঙে পড়েন আলী।
ভাই পালিয়ে বাংলাদেশে আসার সময় আলী জোহার মালয়েশিয়ায় পালান বলে জানান।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫শ’ মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।