সাফল্যের ধারায় প্রবাহিত স্রোত হঠাৎ করে থেমে গেল। বিদেশের মাটিতে দারুণ ক্রিকেট খেলে আসা দলটির মাঝে যে রোশনাই ছড়িয়েছিল তা মিলিয়ে গেল সমুদ্রের জলে। কক্সবাজারে পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা তিন ম্যাচে বাংলাদেশের মেয়েদের লজ্জাজনক পরাজয়ে উড়ছে শঙ্কার মেঘ; পেছনের দিকে হাঁটবে না তো মেয়েদের ক্রিকেট!
এশিয়া কাপ জয়ের মধ্য দিয়ে নারী ক্রিকেটে ঘটে নবজাগরণ। আয়ারল্যান্ড সফরে গিয়ে সিরিজ জয়, বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফেরা। দেড় মাসের ব্যবধানে ১২ ম্যাচে ১০ জয়। অভাবনীয় সাফল্যের ধারা থেকে বিচ্যুত হয়ে কেন বিবর্ণ ব্যাটিং, ধারহীন বোলিং আর ক্যাচ মিসের মহড়া? আত্মতুষ্টিই কি কাল হয়েছে?
নারী ক্রিকেট দেখভালের দায়িত্বে থাকা বিকেএসপির সাবেক কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম এ প্রশ্নের জবাবে সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বলেননি। তবে যেটি বলেছেন তা হতে পারে ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা।
‘বাংলাদেশ যেদিন এশিয়া কাপ জেতে আমি তখনও বলেছিলাম, ভাবতে হবে এশিয়া কাপ ওখানেই শেষ। ওটা থেকে আর পাওয়ার কিছু নেই। মাটিতে পা রাখাটা খুব জরুরি। চিন্তা-ভাবনা পরিষ্কার রাখা দরকার। এত বড় অর্জনের পর খেলোয়াড়দের মাঝে বিভিন্ন রকমের পরিবর্তন আসে এবং পরিবর্তন মানুষকে বিভিন্ন দিকে ঠেলেও দেয়। নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। আমাদেরও হয়তো কিছুটা হয়েছে। এই ধাক্কাটা সবাইকে মাটিতে নামিয়ে আনবে। প্রত্যেকটা দিন নতুন দিন, প্রত্যেক দিন নতুন করে চেষ্টা করতে হয়। তারপরই কিন্তু সফলতা আসে। সাফল্য হঠাৎ করে কখনও আসে না।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে নামার আগে কক্সবাজারেই ক্যাম্প করেছে বাংলাদেশ। সিরিজ হারের ব্যাখ্যায় নাজমুল আবেদিন সামনে এনেছেন প্রস্তুতির ঘাটতির কথাও।
‘এখন বুঝতে পারছি মেয়েদের প্রস্তুতির মাঝেও যথেষ্ট নিবেদন ছিল না। ম্যাচ খেললে বোঝা যায় কে কেমন খেলছে। ট্রেনিংয়ে বোঝা যায় না। আমরা যদি সিরিজের অনেক আগেই আরও কয়েকটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতাম…! হারি-জিতি একটা লেভেল পর্যন্ত প্রতিযোগিতা থাকবেই, আমরা হয়তো ওটা ধরেই নিয়েছিলাম। এটা সবচেয়ে হতাশাজনক যে আমরা কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে পারিনি।’
‘এটা দিয়েই আমরা অনুমান করতে পারি গত আড়াই মাসে কেমন প্রশিক্ষণ হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় আমি পরিবর্তন দেখেছি। সবগুলো যে ভাল হয়েছে আমার মনে হয় না। এগুলো নিয়ে নিশ্চয়ই কাজ করা হবে। মেয়েদের মাঝে যে ধরণের গতি প্রকৃতি দেখেছি যে আত্মবিশ্বাস ছিল দেখিয়ে দেয়ার যে ইচ্ছাশক্তি দেখেছি সে জিনিসটা এবার দেখতে পাইনি। দলটা যে সাফল্য পেয়েছে তাতে আরও ভালভাবে এখানে আসার কথা।’
মাঠের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ছিল প্রশ্ন। মনের মতো উইকেটে খেলতে পারেনি টিম টাইগ্রেস। দলের কেউ কেউ বাজে পারফরম্যান্সের পেছনে নিজেদের ব্যর্থতার পাশাপাশি উইকেটকে দুষেছেন। এক অলরাউন্ডার তো বলেই ফেললেন, বিদেশে আমরা যে ধরণের ভাল উইকেট পাই, দেশে তা পাইনি।
নাজমুল আবেদিন অবশ্য ওই ক্রিকেটারের মন্তব্যকে দেখছেন অজুহাত হিসেবে, ‘ঠিক আছে। অতটা ভাল ব্যাটিং উইকেট এটা না। কিন্তু ওরা তো এখানেই অনুশীলন করেছে। পাকিস্তান তো প্র্যাকটিসও করেনি। আমাদের সুবিধা ছিল। ভাল টেকনিক থাকলে এসব অজুহাত আসে না। এখানে হয়তো এশিয়া কাপের মতো দেড়শ রান হবে না। কিন্তু ১১০-১২০ তো করা উচিত। প্রথম ম্যাচে ৩০ রানে অলআউট হওয়ার পর পরের দুই ম্যাচে ৮১, ৭৭ করেছে। ঠিকভাবে খেললে একশ পার করা যেত। আর তাহলে জয়ের সুযোগও তৈরি করা যেত।
‘বোলিং কিছুটা ভাল করেছি তাও ঠিক না। একসময় আমার মনে হতো বেস্ট বোলিং দল আমরা। সবচেয়ে ভাল না হলেও যত টিম আছে তাদের মধ্যে সেরা একটি বোলিং দল। সেই ধারটাও দেখিনি এই সিরিজে। প্রতি ম্যাচেই ৩-৪ ওভার পরই মনে হয়েছে আমরা জিততে পারব না। এটা চূড়ান্ত পর্যায়ের হতাশার।’
টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাওয়ার আগে এমন ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে বলেই মনে করছেন নাজমুল আবেদিন।
‘খুব কঠিন হবে ব্যাপারটা। আমাদের হাতে খুব বেশি সময় নেই। যারা খুব পেশাদার ক্রিকেটার, সারা বছর খেলে তাদের জন্য সহজ। কিন্তু বাংলাদেশ দলের জন্য অল্পসময়ে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। স্কিল নিয়ে প্রচুর কাজ করে হয়ত তাদের উন্নতি ঘটাতে পারবেন কিন্তু যে আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছিল তা ফিরিয়ে আনা বিরাট চ্যালেঞ্জ।’