ইউরোপীয় দেশগুলোসহ বিশ্বজুড়ে বরাবরই ইংরেজি নববর্ষ ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয়। নানা আয়োজন ও বাঁধভাঙা আনন্দের মধ্য দিয়ে নতুন বর্ষকে বরণ করে সারাবিশ্ব।
তবে এবার পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বিরাজ করছে কিছুটা উদ্বেগ, আতঙ্ক। এই আতঙ্ক পশ্চিমা দেশগুলো তুলনা মূলক অনেক বেশি। আতঙ্ক আছে বাংলাদেশেও।
অতিরিক্ত নিরাপত্তার কারণে ঢাকায় বাইরে না গিয়ে অনেকেই নিজ বাসার ছাদে থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন করে। আতশবাজি আর নাচে গানে পুরনো বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানায় তারা।
গত নভেম্বরে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ১৩০ জন নিহত হওয়ার পর পশ্চিমাদের মনে এই আতঙ্ক ভর করেছে। ইরাক ও সিরিয়ায় সক্রিয় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) প্যারিস হামলার দায় স্বীকার করে হোয়াইট হাউস, নিউইয়র্ক, লন্ডনসহ পশ্চিমা বিভিন্ন স্থানে হামলার হুমকি দিয়েছিলো।
নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় উৎসব আর আনন্দ। আতশবাজি, আলোকসজ্জা, নাচ-গান, খাবারের উৎসবে মাতে বিভিন্ন দেশের মানুষ। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডবাসীর আয়োজন চোখ ধাঁধানো। ঘড়ির কাটায় রাত ১২টা বাজার সাথে সাথে এক সাথে ঝলসে ওঠে অস্ট্রেলিয়ার সিডনির আকাশ। অপেরা হাউজ, হারবার ব্রীজসহ পুরো শহর সেজে বর্ণিল সাজে।
নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে নিউজিল্যান্ডবাসী জড়ো হয় অকল্যান্ড শহরের স্কাই টাওয়ারের সামনে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা এক মিনিটে ১ হাজার ৭৬ ফুট উঁচু টাওয়ারটির ওপর থেকে বিচ্ছুরিত হতে থাকে বর্ণিল আলোকছটা।
কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নিউ ইয়র্কের টাইম স্কয়ারে আয়োজন করা হয় নববর্ষ উদযাপনের বিশাল আয়োজন। হাজারো মানুষের সমাগম আর উৎসব মুখর পরিবেশে পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে ঐতিহ্যবাহী বল ড্রপ করা হয় রাত ১২:০১ মিনিটে। সেই সঙ্গে আকাশ আলোকিত করে বরণ করে নেবে ২০১৬ সালকে।
এশিয়ার হংকং, সিঙ্গাপুর, চীন, জাপানে পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত চলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। চীনের হংকংয়েও আতশবাজির উৎসব দেখতে শহরটিতে ভিড় করে বহু মানুষ। কাউন্ট ডাউন শেষ হওয়া মাত্র আতশবাজির লাল, নীল, সবুজ বিভিন্ন রঙ্গে ভরে ওঠে শহরের আকাশ।
পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে মিশরের কায়রো শহরের পিরামিডের সামনে জড়ো হয় হাজার হাজার মানুষ। বিশ্বের উচ্চতম ভবন দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় জ্বালানো হয় চার লাখ এলইডি বাতি। প্রস্তুত রাখা হয় এক দশমিক ছয় টন আতশবাজি। তবে পাশের একটি বিলাসবহুল হোটেলে আগুন লাগার কারণে নববর্ষ অনেকটা স্লান হয়ে দুবাইতে।
জার্মানির বার্লিনে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রায় লাখ মানুষ অংশ নেয় কাউন্টডাউনে। তবে নাশকতার আশঙ্কায় মিউনিখে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। লোকজনকে এক জায়গায় জড়ো হতে নিষেধ করা হয়।
নাশকতার আশঙ্কায় ফ্রান্স ও লন্ডনে সীমিত করা হয় নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আয়োজন। কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর রেড স্কয়ারে আয়োজন করা হয় নববর্ষ উদযাপন। হাজারো মানুষের সমাগম আর উৎসব মুখর পরিবেশে পুরাতন বছরকে বিদায় জানায় মস্কোবাসী। সেই সঙ্গে আকাশ আলোকিত করে বরণ করে নেয় ২০১৬ সালকে।
তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের সময় ভিড়ের মধ্যে নানা ছদ্মবেশে থাকে পুলিশ। এর আগে সংবাদ সম্মেলন করে ইস্তাম্বুলের পুলিশ জানায়, অপরাধী ধরতে ফাদার ক্রিসমাসের পোশাকে বা জুতো পালিশওয়ালা বা প্রেতজেল ফেরিওয়ালার ছদ্মবেশ ধরবে পুলিশ। সান্তা ক্লজের পোশাকের সঙ্গে ক্রিসমাসের সম্পর্ক থাকলেও তুরস্কে এই পোশাক দেখা যায় নববর্ষ উদযাপনের সময়। গত কয়েক বছর ধরে পুলিশ নানা ছদ্মবেশে নববর্ষ উদযাপনের ভিড়ের ভেতর থাকছে।
যদিও নিরাপত্তার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাতিল করা হয়েছে আতশবাজি উৎসব। বেলজিয়ামে নাশকতার অভিযোগে আটক করা হয়েছে ছয়জনকে। তাদের কাছে সামরিক বাহিনীর পোশাক ও আইএসের প্রচারপত্র পাওয়া যায়।
তুরস্ক জানিয়েছে, নববর্ষের প্রথমক্ষণে আঙ্কারায় বড় ধরনের হামলার ছক আটকে দিয়েছে নিরাপত্তাবাহিনী। ষড়যন্ত্রকারী দুই আইএস সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনে নববর্ষের প্রাক্কালে শহরজুড়ে অতিরিক্ত তিন হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়।