চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

আটক আইনজীবীদের উত্থান আর বিলাসী জীবন নিয়ে সন্দেহ

জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে আটক হাইকোর্টের তিন আইনজীবী পেশাগতভাবে নতুন হলেও তাদের চলাফেরা ও জীবন-যাপন ছিলো সন্দেহজনক। তাদের বিলাসী জীবন আর অতি দ্রুত উত্থান প্রবীণ আইনজীবীদের মাঝেও আলোচনার বিষয় ছিলো। ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানার বিরুদ্ধে পারিবারিকভাবে জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীক জঙ্গি সংগঠনগুলোর সাথে যোগাযোগ আছে বলে দাবি করেন কয়েকজন আইনজীবী।

আটক ওই তিনজন সর্ম্পকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে আটক শাকিলার বাবা বিএনপির সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর গুডস হিলে টর্চার সেলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।  ট্রাইব্যুনালে সাকা চৌধরীর বিপক্ষে দেওয়া কয়েকজন সাক্ষী এ বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ শ.ম রেজাউল করীম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেছেন, শাকিলা ফারজানা চট্টগ্রামের হাটহাজারি মাদ্রাসার মসজিদে বোমা রাখার মামলার আসামী পক্ষের আইনজীবী হিসেবে বক্তব্য রেখেছেন।

‘শুধু তাই নয় বিএনপির চট্টগ্রাম কেন্দ্রীক নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া হরতাল অবরোধ, নাশকতা সংক্রান্ত মামলার আইনজীবী হিসেবে কাজ করতে দেখা গেছে’ বলেও জানান এ সিনিয়র আইনজীবী।

দেশে এর আগে জঙ্গিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে অনেক পেশার মানুষ জড়িত থাকলেও আইনজীবীদের জড়িত থাকার অভিযোগ এই প্রথম।

আইনজীবীদের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগের জবাবে রানা দাশ গুপ্ত বলেন, আমি এ বিষয়ে মোটেও অবাক হচ্ছিনা; কারন যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও জড়িত সেখানে আইনজীবী জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে আমি মোটেও বিচলিত নই।

শ.ম রেজাউল করীম এ বিষয়ে বলেন, আর একটি কথা মনে রাখতে হবে, সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত সকল আসামীদের নির্দোষ বলে গণ্য করতে হবে। এখন পর্যন্ত তাদের দোষী সাবাস্ত হবার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। কারন তাদের বিরুদ্ধে এর আগে জঙ্গি সম্পৃক্ততার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায় নাই।

জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে বারের সদস্যপদ হারাবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শ.ম রেজাউল করীম বলেন, এখন বার চলছে বিএনপি পন্থী আইনজীবীদের নেতৃত্বে, তারা ইতিমধ্যে ওই তিন আইনজীবীর পক্ষে মানববন্ধন করেছে। ফলে বলা যেতে পারে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণের প্রশ্নই ওঠেনা। আর যদি শাস্তির বিষয়টি আসে তবে তবে বলতে হয়, তারা কী শাস্তি পাবেন তা নির্ভর করছে আদালতের ওপরে।

  রানা দাশ গুপ্ত এ বিষয়ে বলেন, যদি তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বারের সদস্য পদ হারাতে হবে।

অ্যাডভোকেট হাসানুজ্জামান লিটন ও অ্যাডভোকেট মাহফুজ চৌধুরী বাপন সর্ম্পকে বিস্তারিত বিশেষ কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও তারা ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানার জুনিয়র হিসেবে কাজ করেন বলে জানান রানা দাশ গুপ্ত।

ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা বিএনপি দলীয় সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক। অন্য দুইজন অ্যাডভোকেট হাসানুজ্জামান লিটন ও অ্যাডভোকেট মাহফুজ চৌধুরী বাপন।

র‌্যাবের দাবি, ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’ নামের একটি জঙ্গি সংগঠনকে অস্ত্র কেনার জন্য তিন আইনজীবী চার ধাপে মনিরুজ্জামান ডনসহ কয়েকজনের অ্যাকাউন্টে নগদে এক কোটি আট লক্ষ টাকা জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা দিয়েছেন ৫২ লক্ষ টাকা। তিনি প্রথম ধাপে ২৫ লক্ষ ও পরবর্তী ধাপে ২৭ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছেন। হাসানুজ্জামান লিটন ৩১ লক্ষ টাকা এবং বাপন দিয়েছেন ২৫ লক্ষ টাকা।

মনিরুজ্জামান মাসুদ ওরফে ডন হেফাজতে ইসলামের মামলা পরিচালনার বিষয়ে আসামিপক্ষের হয়ে শাকিলা ফারজানার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। মামলা পরিচালনার জন্য তিনি শাকিলাকে কিছু টাকা দিয়েছিলেন। পরে শাকিলা আবার ওই টাকা ডনের অ্যাকাউন্টে ফেরত দিয়েছিলেন বলে দাবি শাকিলার আইনজীবীদের।

গত বুধবার শাকিলা ফারজানাসহ তিন আইনজীবীকে ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।