আজ ২৬ শে মার্চ ২০১৭। দেশের স্বাধীনতার ৪৬ বছর পেরিয়ে ৪৭ বছরে পা রাখলো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ পেয়েছে স্বাধীনতা। বাংলাদেশ। স্বাধীন দেশ নির্মাণে ত্যাগের সীমা পরিসীমা নেই। অনেক ত্যাগে পাওয়া এই দেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কী ভাবছেন মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ও বর্তমান প্রজন্ম। চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে তাদের সে ভাবনার কথা জানিয়েছেন।
বিপাশা হায়াত, অভিনেত্রী
মুক্তিযুদ্ধ আমার অহংকার। এ চেতনা আমাকে বাঁচতে শেখায়। আমার মনে হয় আজকের আমি এই দেশের জন্য। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাবলী আমাকে কষ্ট দেয়। জাতি হিসেবে আমরা আরও অনেক উঁচুতে যেতে পারতাম। যদি স্বাধীনতার সত্যিকার স্বাদ গ্রহণ করতে পারতাম। এর জন্য আমরাই দায়ী। আমাদের সরকারব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা- সবকিছুই আরও আধুনিক করা উচিত ছিল। হয়তো সে কারণে কোনো ক্রান্তি আসবে না বাঙালি জাতির জীবনে। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকায় নির্মিত এমন কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছি। প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি ‘আগুনের পরশমণি’ তে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে আমার পথচলা শুরু। তারপর হুমায়ূন আহমেদের আরও একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবিতে অভিনয় করেছি। নাম ‘শ্যামল ছায়া’। এরপর তৌকীর আহমেদের পরিচালনায় ‘জয়যাত্রা’ ছবিতেও অভিনয় করি।
ফেরদৌস আহমেদ, অভিনয়শিল্পী
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছে। মাঝে এ সময়টা স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। অসংখ্য মানুষের আত্মদানে পেয়েছি এই বাংলাদেশ। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ আমাদের শেকঁড়। মুক্তিযুদ্ধ আমাকে টানে অনেক। মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছি। এর মধ্যে অবশ্যই উল্লেখ করতে চাই নাসির উদ্দিন ইউসুফের ‘গেরিলা’ ছবিটির কথা। মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত আরেকটি ছবি ‘পোস্টমাষ্টার ৭১’। ছবিটি নির্মাণ করছেন আবীর খান। এতে আমার বিপরীতে আছেন মৌসুমী।
মাহিয়া মাহি, অভিনয়শিল্পী
মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে অভিনয়ে দারুণ আগ্রহ রয়েছে আমার। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রস্তাব পাইনি। আমি অন্তর থেকে মুক্তিযুদ্ধকে অনুভব করি। ইস্ আমাকে কেউ যদি মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব করতো। মুক্তিযুদ্ধ না হলে আমরা আমাদের এই প্রাণের বাংলাদেশ পেতাম না। গভীর শ্রদ্ধা জানাই যাদের রক্তের বিনিময়ের আমরা এই দেশ পেয়েছি।
মোশাররফ করিম, অভিনেতা
নয় মাসের দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আমাদের এনে দিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ। যুদ্ধ করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন অনেকেই। কেউবা যুদ্ধে আহত হয়ে চিরজীবন পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তাদের জন্য আমার সশ্রদ্ধ সালাম। এজন্য মুক্তিযুদ্ধের কোনো নাটকের প্রস্তাব পেলে তা ছাড়ি না। এ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের অনেক নাটকেই অভিনয় করেছি। এগুলোর মধ্যে ‘কাঁটা’ (২০১০), ‘পেজ সিক্সটিন’ (২০১৪), ‘কাকতারুয়া’ (২০১৪) ও ‘রতন ডাকাতের দেশটা’ (২০১৫) উল্লেখযোগ্য।
সুমাইয়া শিমু, অভিনয়শিল্পী
মুক্তিযুদ্ধকে আমি বিষাদ আবার গৌরবের মনে করি। এই মুক্তিযুদ্ধে আমরা লাখো মানুষকে হারিয়েছি। লাখো মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন। আবার এই মুক্তিযুদ্ধের কারণেই আমরা পেয়েছি বাংলাদেশ। আসলে কিছু পেতে হলে কিছু ছাড়তে হয়। আমরা অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ পেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছি। এর মধ্যে অন্যতম- ‘এবং অতঃপর’, ‘পতাকা’।
বিদ্যা সিনহা মিম, অভিনয়শিল্পী
মুক্তিযুদ্ধ আমি দেখিনি। কিন্তু অনুভব করার চেষ্টা করি সে সময়ের দিনগুলো। কত ত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা এই দেশ পেয়েছি। তাই মুক্তিযুদ্ধ একদিকে যেমন আমাদের কষ্টের অন্যদিকে গৌরবের। মুক্তিযুদ্ধের অনেক নাটকেই অভিনয় করেছি। তবে কয়েকটি নাটকের কথা না বললেই নয়। এগুলো হলে- ‘একটি লাল শাড়ির গল্প’, ‘সন্দেশ বিষ পিঁপড়া’, ‘অপুর ৭১’।
ইমরান, কণ্ঠশিল্পী
মুক্তিযুদ্ধের সে সময়টা অনুভব করে মনের ভেতর এক ধরণের উত্তেজনা বোধ করি। কত কষ্টই না হয়েছে দেশটা স্বাধীন করতে। কত প্রাণ গেছে এই মুক্তিযুদ্ধে। এই আমাদের এই ত্যাগের বিনিময়ে পেয়েছি বাংলাদেশ। যদি মুক্তিযুদ্ধের আগের প্রজন্ম হতাম। তবে অবশ্যই আমি মুক্তিযোদ্ধা হতাম। মুক্তিযুদ্ধের গান আমাকে সবসময়ই টানে। আমি একটি গানও করেছি মুক্তিযুদ্ধকে উপলক্ষ করে। আমার সঙ্গে দ্বৈত কণ্ঠ দিয়েছেন কনা।
পড়শি, কণ্ঠশিল্পী
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেকের কাছ থেকে শুনেছি। শুনে মনে হয়েছে আমরা অনেক গর্বিত জাতি। আমাদের দেখে পৃথিবীর অন্যান্য দেশ হিংসা করতে পারে। কেননা ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই দেশ সারা পৃথিবীর কাছে একটি বড় দৃষ্টান্ত। আমি মুক্তিযুদ্ধে গান এখনো করিনি। তবে করার ইচ্ছা আছে।
ছবি : সংগৃহীত