বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক দলগুলো প্রায় সময়ই আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সাফল্য আনে। যা প্রমাণ করে আমাদের দেশে মেধার ঘাটতি নেই। কেবল প্রয়োজন যথোপযুক্ত পরিচর্যা। যারা শিশু-কিশোর পর্যায়ে ভালো করে, তাদের সাফল্য যদি আকস্মিকও হয়ে থাকে এরকম পাঁচ বছরের দল থেকে সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে আগালে ভবিষ্যতে তা ভালো শক্তিশালী দলে পরিণত হতে পারে। এর সবচেয়ে কাছের উদাহরণ আমাদের ক্রিকেট দল।
বাংলাদেশ যখন টেস্ট খেলতে শুরু করে তখন পর্যন্ত ওয়ানডেতেও আমরা খুব একটা ভালো দল ছিলাম না। আজকে ওয়ানডেতে যেই দল বিশ্বের সব দলের কাছে সমীহ জাগানিয়া পারফর্ম করছে, তার পেছনে তাকালে দেখা যায় আমাদের বয়স ভিত্তিক দলগুলো থেকে মেধাবী খেলোয়াড়দের তুলে আনা। তারপর তাদের পরিচর্যা করার জন্য ভালো শিক্ষক ও পরিবেশ সম্বলিত বিসিবি’র একটা ভালো একাডেমি। আজকের জাতীয় দলে (টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি) খেলা খেলোয়াড়দের অধিকাংশই এই একাডেমীর সংস্পর্শে এসেছে কোনও না কোনও সময়। এই যে খেলোয়াড় তৈরি ও চর্চার জায়গাটা, এর উদাহরণ দেয়া বাংলাদেশের তরুণ ফুটবলারদের সাফল্যের কথা বলার জন্য।
উল্লেখ্য বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবল দল মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত সুপার মক কাপ ফুটবলে ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি’র অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবল দলকে হারিয়ে প্লেট পর্বের ফাইনালে উঠেছে। যা আমাদের জন্য দারুণ খবর। এখানে উল্লেখ্য যে গত বছরও এমন সময়ে ব্রাজিলের ক্লাব করিন্থিয়াসকে হারিয়ে অনুর্ধ্ব-১৩ সুপারমক কাপের সেমিতে উঠেছিলো বাংলাদেশের কিশোররা। আর এটাও কোনও আকস্মিক ফল না যে বাংলাদেশের কিশোররা ভালো ফুটবল খেলে। এমন উদাহরণ আমরা আগেও দেখেছি। যেমন ’৯০র দশকে ডানা ও গোথিয়া কাপে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মতো বড় ফুটবল পরাশক্তির দলগুলোকে হারিয়ে চমক দেখিয়েছিলো বাংলাদেশের কিশোর-তরুণরা। সেইসব চমক দেখানো দলকে আমরা পরে আর চর্চার মধ্যে পেয়েছিলাম কিনা তার কোনও রেকর্ড পাওয়া যায় না। সেই ব্যর্থতার চক্কর থেকে আগামী তিন বছরে কিন্তু ফিফার পরিকল্পনায় আমাদের কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচ নেই। যদি বয়স ভিত্তিক দলগুলোকে একটা ভালো কাঠামো, ভালো শিক্ষক আর চর্চার সুযোগ দেয়া যেতো তাহলে নিশ্চয়ই আমাদের ফুটবলের এই দশা হতো না। এইখানে ফুটবল কাঠামোর (ব্যবস্থাপনা কমিটির, ফেডারেশনের) দায় আসে। যা আমাদের কর্মকর্তারা কখনোই এড়িয়ে যেতে পারেন না।
আজ যে সাফল্যের খবর আমাদের কাছে আছে তাও দারুণ খবর। একবার ভাবলেই কেমন লাগে যে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সুতিকাগার ক্লাব স্পোর্টিং লিসবন, ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেই, ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি, ব্রাজিলের ফুটবল ক্লাব সাও পাওলোর মতো ক্লাবের বয়স ভিত্তিক দলগুলোর সাথে খেলে আমাদের দল এখন ফাইনালে। ভাবতেই ভালো লাগে। তবে এখানেও একটা কথা থাকে, আমাদের খেলোয়াড়দের বয়স নিয়ে। যেখানে কথা উঠতে পারে ম্যানচেস্টার সিটি ১২/১৩ বছরের কিশোরদের মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছে ভিন্ন পরিবেশে খেলে তাতে অভ্যস্ত হতে। আর সেখানে সেখানে হয়ত (?) বাংলাদেশ ১৬/১৭ বছরের কিশোরদের পাঠিয়েছে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। এটাও আমাদের মানসিক দৈন্যের পরিচয় দেয়। যেমন একই রকম ঘটনা সেই ডানা ও গুথিয়া কাপ ফুটবলের খেলার সময়ও ঘটেছিলো বলে লোকমুখে শোনা যায়। তারপরও যদি হিসেব করা হয়, আমাদের খেলোয়াড়েরা যথেষ্ট স্কিলড তখনই প্রশ্ন আসে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে তাদের কি হয় যে তারা জাতীয় দলে খেলতে গিয়ে ব্যর্থ হয়? এখানেই আবারও পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বের কথা আসে। কারণ তাদেরকে তৈরি করা হয় না, বা করতে ব্যর্থ হয় ফেডারেশন। প্রশ্ন হলো ফেডারেশনের এই আত্ম চেতনা কবে তৈরি হবে?
আর বলে রাখা উচিত, আজকের হেরে যাওয়া ম্যানসিটির এই ক্ষুদে ফুটবলাররাই একদিন তারকা হবে। আমাদের ফুটবলাররা তাদের দেখে আফসোস করবে। আর আমাদের বিজয়ীরা পথ হারাবে। অথচ বিজয়ীর বেশে দেশে ফেরা কিশোরদেরকে সঠিক রাস্তা দেখালে, ঠিকমত পরিচর্যা করলে তারাও একই রকম আলো ছড়াবে ভবিষ্যতে। নইলে তাদের জন্যও থাকবে অন্ধকার ভবিষ্যৎ।
ম্যান সিটিকে হারানোতে কিশোরদের অভিনন্ধন না দিলেই নয়, পাশাপাশি বাফুফে তাদেরকে অভিনন্দন জানাক তাদের নিয়ে ভালো পরিকল্পনা দিয়ে। যাতে এরচেয়ে ভালো জয় আমরা ভবিষ্যতে পেতে পারি।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)