সাড়ে চার হাজারের মতো প্রতিযোগী টপকে ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০২০’ এর মুকুট নিজের করেছেন তানজিয়া জামান মিথিলা। যিনি আগে থেকে বিলবোর্ড ও র্যাম্প মডেলিংয়ের জনপ্রিয় মুখ।
১৯ মে মার্কিন মুল্লুকের ফ্লোরিডায় বসবে ‘মিস ইউনিভার্স’র ৬৯তম আসর। সুন্দরী প্রতিযোগিতার সবচেয়ে বড় এই আসরে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হতে যাচ্ছেন তিনি। ভাবতেই মিথিলা ‘এক্সাইটেড ফিল’ করছেন!
মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ এ অংশগ্রহণ, নিজেকে তৈরী করে মূল মঞ্চে যাওয়ার প্রস্তুতি, সাম্প্রতিক সমালোচনা- সবকিছু নিয়ে মিথিলা মুঠোফোনে কথা বললেন চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে…
‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ’ হলেন। কেমন লাগছে?
আমি খুবই এক্সাইটেড। ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ’ মানে দেশের সেরা সুন্দরী। দেশের ক্রাউন পরে ইন্টারন্যাশনালি দেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে যাচ্ছি এটা শুধু আমার না, দেশের সব মেয়ের জন্য গর্বের। এর সঙ্গে বড় দায়িত্ববোধ কাজ করছে। যদি উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলি তাহলে আমার দেশ ছোট হবে। মিস ইউনিভার্সের ক্রাউনের জন্য সব দেশের মেয়েরা লড়বে। কিন্তু আমি যেন নিজেকে প্রমাণ করে দেশের সুনাম বাড়াতে পারি এ দায়িত্ব বেশি বেশি অনুভব হচ্ছে। সেখানকার সবাই যেন বলে বাংলাদেশি মেয়ের সবকিছু ভালো। আমার টার্গেট সম্মানজনক অবস্থান।
‘মিস ইউনিভার্স’ এর বিশ্বমঞ্চে লড়াইয়ের জন্য আপনি কতটা তৈরি?
আমি অনেকটা তৈরি হওয়া। হাঁটা, বিভিন্ন পোজ, এক্সপ্রেশন, পোশাক সেন্স, মেকাপ, চুলের স্টাইল এগুলো আমি গত সাতবছর ধরে করে আসছি। এগুলো নিয়ে আমার কোনো চিন্তা নেই। প্রশ্নোত্তর পর্বে কীভাবে কথা বলবো, ন্যাশনাল কস্টিউম কেমন এগুলো নিয়ে চিন্তা করছি। বিউটিফুল বাংলাদেশ (বাংলাদেশের সংস্কৃতি) কনসেপ্টের একটি ভিডিও বানিয়ে নিয়ে যেতে হবে। লকডাউন পড়ে যাওয়ায় এগুলো নিয়ে কাজ শুরু করতে পারিনি। এদিকে আমার জন্য সময়ও আগেরবারের চেয়ে কম।
এই প্রতিযোগিতা থেকে নতুন কিছু শিখেছেন?
লাইফে যেটা ভালো লাগবে করা উচিত। ‘কতটুকু জানি’-এর উপর ভিত্তি করে সামনে আগাতে হবে এমন না। আগাতে হবেই। আমি তো অমুক, আমি কেন এই প্রতিযোগিতা বা এই ধরনের কাজ করবো, এমন ইগো কখনও দেখানো যাবেনা। সবকিছুর জন্য চেষ্টা করতে হবে। আরেকটা জিনিস সবচেয়ে বেশি শিখেছি তা হচ্ছে ডিসিপ্লিন লাইফ।
অবস্থান বা পেশাগত দিক থেকে আপনি আগেই প্রতিষ্ঠিত। এর পরেও কী ভেবে ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ’ এ অংশ নিলেন?
আমি একটু রিস্ক নিয়েছি। তাছাড়া কোভিডে তেমন কাজ ছিল না। ঘরেই ছিলাম। তখন মনে হয়েছে দেখি না একটা ট্রাই করে! মজা করেই আবেদন করেছিলাম। যখন অডিশনে যাই তখন মনে হয়েছে আমি যদি এখান থেকে সেরা হয়ে বের না হতে পারি আমার অনুসারী বা শুভাকাঙ্ক্ষীদের খারাপ লাগবে। এই জিনিস তখন থেকে আমার কাছে অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। টপ-৫০ এ যখন ডাকা হয় তখনও খুব ইজি লাগলো। কিন্তু সেরা ২০ এ থাকার পর মনে হয়েছে যে আমাকে আগাতে হবেই। যারা প্রতিযোগী প্রত্যেকেই ট্যালেন্ট। তখন থেকে আমি বেশি সিরিয়াস হয়ে উঠি।
পূর্ব অভিজ্ঞতা বলছে, যারা সুন্দরী প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন; পরবর্তী সেই সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে ব্যর্থ হন। আপনি কী বলবেন?
এতকিছু চিন্তা করিনা। এত চিন্তা করলে গত সাতবছর কাজ করার পর এই প্রতিযোগিতায় যেতাম না। আমি মনে করি ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ’ একটি বিশাল প্লাটফর্ম। এখানে অংশ নিলে বিশ্বের কাছে নিজের দেশকে রিপ্রেজেন্ট করা যায়। এটা শেষ হয়ে যাওয়া মানেই থেমে যাওয়া নয়। আমার আরও অনেক অর্জন রয়েছে যা ইন্টারন্যাশনাল। প্রথম মডেল হয়েছি ‘ফেস অব এশিয়া’তে বেস্ট মডেল হয়ে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। এছাড়া আরও অনেক জায়গায় গিয়েছি। অভিনয় করা শুরু করেছি। সামনে আরও সিনেমা করবো। একটি বাংলাদেশের আরেকটি জয়েন্ট ভেঞ্চারের সিনেমায় সাইন করা রয়েছে। শাকিব খানের সঙ্গে একটি সিনেমায় সাইন করা আছে। আমি প্রথম বাংলাদেশ থেকে কোনো মেয়ে পূর্ণাঙ্গ বলিউডের সিনেমা ‘রোহিঙ্গা’তে কাজ করেছি। সিনেমাটি সে দেশে সেন্সর ছাড়পত্রের অপেক্ষায় আছে।
বেশিরভাগ মানুষের অভিযোগ, আপনি নির্বাচিত হবেন আগে থেকে চূড়ান্ত ছিল। এমনকি একজন প্রতিযোগীও আপনাকে নিয়ে এমন অভিযোগ তুলেছিলেন। পরিষ্কার ব্যাখ্যা জানতে চাই…
টপ-২০ এ যারা ছিলেন তাদের মধ্যে গ্রুমিংয়ে এগিয়ে ছিলাম। আমি আগে থেকে ফেমাস তাই মানুষের ধারণা আমিই বিজয়ী হবো। আমার কাজের মাধ্যমে মানুষ আগে থেকেই চেনে। গত সাত বছর ধরে আমি এগুলো করেই যথেষ্ট অভিজ্ঞ। আগে থেকেই সবকিছু শিখেছি, অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি এটা কি আমার দোষ? অনেক কষ্ট করে আমি এই অবস্থানে এসেছি। নতুন কোনো মেয়ে যদি ‘মিস ইউনিভার্স’ হওয়ার স্বপ্ন দেখে সেই স্বপ্ন কি আমি দেখতে পারি না? ১০ জন বিচারক ছিলেন। কেউই অযোগ্য নন। সবাই অনেক বিচক্ষণ। তারা আমাকে যোগ্য মনে করেছেন বলে নাম্বার বেশি দিয়ে বিজয়ী করেছেন।
শান্তা নামে একজন আবেদন করেছিল। তার অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে। উনি সেরা ৫০-এও আসেননি। এমন আবেদন যে কেউ করতে পারে। তিনি যদি সিলেক্ট হতেন তাহলে প্রতিযোগী দাবি করতে পারতেন। কিন্তু উনি সাড়ে চারহাজার থেকে প্রাইমারি লেভেল বা টপ ৫০ তেও সিলেক্টই হননি। এই মেয়েটা আমাকে টার্গেট করে কথা বলেছে কারণ আমি সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেক জনপ্রিয়। আমাকে মানুষ চিনে। আমাকে নিয়ে কথা বললে অনেক মানুষ কথা বলবে! শান্তা যদি বাকি প্রতিযোগিদের নিয়ে কথা বলতেন তাহলে এমন কোনো অভিযোগই উঠতো না। কারণ তাদেরকে কেউ চেনে না।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনাকে নিয়ে বিভিন্ন নেগেটিভ মন্তব্য দেখা যাচ্ছে। এগুলো নিয়ে কী বলবেন?
নেগেটিভ যত মন্তব্য করা হচ্ছে এর চেয়ে বেশি পজিটিভ মন্তব্য পাচ্ছি। সেখানে প্রাধান্য দিচ্ছি। আমাকে যারা জেনুইন ভালোবেসে দোয়া ও সাপোর্ট করেছে তারা আমার ফ্যান ফলোয়ার্স। আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। তাদের দোয়াতেই আমি সামনে এগিয়ে যাবো। তাদের ভালোবাসাতে আমি মিস ইউনিভার্সের মঞ্চে দেশের জন্য সম্মান অর্জন করতে চাই।