শোবিজ অঙ্গনে পদার্পণ করেছেন, খ্যাতি অর্জন করেছেন অথচ ক্যারিয়ারে সমালোচিত হননি-এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুস্কর! অথচ এমন বিরল মানুষদের একজন তিনি। যিনি একই সঙ্গে দারুণ অভিনেতা ও সংগীতশিল্পী! তিনি ফজলুর রহমান বাবু।
নাটক ও চলচ্চিত্রে সমান যাতায়াত তার। নিয়মিত ছোট পর্দায় দেখা গেলেও আহা!, স্বপ্নডানায়, দারুচিনি দ্বীপ, মেড ইন বাংলাদেশ, মনপুরা, অজ্ঞাতনামা ও হালদার মতো ছবিতে তার অভিনয় স্মরণীয় হয়ে থাকবে বাঙালি দর্শকের মনে! প্রায় ষাট বছর বয়সী এই অভিনেতা এখনো যে কোনো চরিত্রে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন।
এই অভিনেতার জন্মদিন নিয়ে আছে ভক্ত অনুরাগীদের মধ্যে বিভ্রান্তি।গুগল সার্চে এই অভিনেতার জন্ম তারিখ দেখায় ১৪ জুলাই ১৯৬০, এবং উইকিপিডিয়াতে আছে ২২ আগস্ট ১৯৬০! সেই হিসেবে মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) প্রিয় অভিনেতাকে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন গ্রুপসহ অনেক অনুরাগীরাও শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। কোনটা সঠিক? জন্ম তারিখ বিভ্রাট ও এই সময় নিয়ে ফজলুর রহমান বাবু মুখোমুখি চ্যানেল আই অনলাইনের:
আপনার জন্ম তারিখ নিয়ে ভক্ত অনুরাগীরা বিভ্রাটের মধ্যে আছেন। আজকে আপনার জন্মদিন? জন্ম তারিখ কোনটি সঠিক?
আমার জন্মদিন ১৪ জুলাই নয়। আমার অফিশিয়াল জন্ম তারিখ হচ্ছে ২২ আগস্ট ১৯৬০। উইকিপিডিয়াতে আমার জন্ম তারিখ ঠিক আছে, কিন্তু গুগলে আমার জন্ম তারিখটা কীভাবে যেন ১৪ জুলাই লেখা। এটা আমি বহুদিন আগে থেকে দেখছি। ক’দিন আগেও চেক করলাম যে গুগল এটা পরিবর্তন করেছে কিনা, দেখলাম আগের মতোই ১৪ জুলাই লেখা। গুগল ও উইকিতে-দুই জায়গাতে দুই ধরনের তারিখ থাকায় মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি হচ্ছে। তবে যারা আমাকে চেনেন, বা টুকটাক ফেসবুকে আমাকে নিয়ে লেখেন তারা জানেন আমার জন্ম তারিখ ২২ আগস্ট।
চলচ্চিত্রের বিভিন্ন গ্রুপেও দেখলাম অনেকে আপনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন…
হ্যাঁ, অনেকে আমাকেও উইশ করেছে। তাদেরকে ধন্যবাদ দিয়ে আমি বলেছি যে, আমার জন্মদিন আজকে নয়, ২২ আগস্ট। বিভ্রান্তিটা হয়েছে গুগলের জন্য। এখন গুগলের এটাতো আমি ঠিক করতে পারবো না, পদ্ধতিও আমার জানা নেই।
বর্তমানে অনেকেই শুটিংয়ে ফিরছেন। আপনার কী অবস্থা, কাজের কী পরিকল্পনা?
আমিতো টোটালি কাজ করছি না। প্রায় প্রতিদিনই আমি কাজের অফার পাচ্ছি, আজকে সকালেও দুটো কাজ করার অফার পেয়েছি। গতকাল রাতে আমাকে কয়েকজন ফোন দিয়েছেন। কিন্তু সবাইকে আমার হতাশ করতে হচ্ছে। প্রতিদিনই এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, নিজের কাছেও খারাপ লাগছে। রোজার ঈদ, বাবা দিবস, আসছে ঈদুল আযহা, সামনে ১৫ আগস্ট- এরকম উৎসবকেন্দ্রিক প্রচুর কাজের অফার পেয়েছি। করোনা পরিস্থিতিতে শুটিং বন্ধ ছিলো, আনুষ্ঠানিকভাবে যখন শুটিংয়ের ফেরার অনুমতি আসলো তখন থেকে প্রতিদিনই কাজ করার অফার পাচ্ছি। কিন্তু আমার কথা একটাই, আমাকে সুস্থ থাকতে হবে। আমার দ্বারা যেন কারো করোনা সংক্রমণ না হয়, আবার আমি যেনো কারো দ্বারা সংক্রমিত না হই। তাই যে স্বাস্থ্যবিধি আছে এগুলো মেনে চলার পক্ষে আমি। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, প্রথমে হচ্ছে জীবন তারপর হচ্ছে জীবিকা।
তারমানে অবস্থা পরিবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত কাজে যাচ্ছেন না আপনি?
আসছে ঈদের জন্য আজকে সকাল থেকেই নির্মাতা সাগর জাহানের একটি কাজ শুরু হচ্ছে। দশ পর্বের ঈদের ধারাবাহিকটি বৃন্দাবন দাসের রচনায়। এক মাস আগে থেকে আমার ডেট নিয়ে রেখেছিলো সাগর। তখন আমি ভেবেছিলাম, হয়তো এক মাস পরে অবস্থা ভালো হতে পারে। কিন্তু এখন তো তা দেখছি না। আমার জন্য তারা এক মাস অপেক্ষা করলো, অথচ করোনার এই অবস্থার জন্য আমি তাদের কাজটি করতে পারলাম না। আমরাতো আশা করে বসে আছি। ভাবছি হয়তো দশ দিন পর অবস্থা ভালো হয়ে যাবে, এই পনেরো দিন পর ভালো হবে- কিন্তু গত এক মাস আগের চেয়ে বলা যায় এখন তো আরো খারাপের দিকেই যাচ্ছে। আমার খুব কাছের আত্মীয় স্বজন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। আমার ভাগ্নে, আমার ভাই, আমার কাজিন অনেকেই করোনায় আক্রান্ত। এমনকি কাজিনকে ফরিদপুর থেকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হয়েছে, ইমার্জেন্সিতে। এইসব কিছু দেখার পর আমিতো কাজ করতে যেতে পারি না।
আসলে আমি ওই আশা নিয়ে বসে আছি, পরিস্থিতি শিগগির ভালো হবে। আবার খারাপও লাগছে যে কাজ করতে পারছি না, অনেকের কাজ বন্ধ হয়ে আছে। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, মানুষ সুস্থ থাকুক, দেশ বাঁচুক, পৃথিবী বাঁচুক, বেঁচে থাকলে কাজ করা যাবে।
করোনাকালীন সময়ে নতুন কোনো চলচ্চিত্র নিয়ে পরিকল্পনা করেছেন?
পরিকল্পনা তো আসলে ডিরেক্টর-প্রোডিউসার করেন, আমরা তো শুধুমাত্র চরিত্রটা রূপদান করি। এরকম প্রস্তাব বেশ কয়েকটা ছবির রয়েছে আমার। অন্তত পাঁচটি ছবি। আরো অনেক ছবি অর্ধেক শুটিং হয়েছে বা প্রায় শেষ পর্যায়ে আবার কিছু আছে মুক্তিপ্রতীক্ষিত। পাপ-পুণ্য, বিশ্বসুন্দরী, নোনা জলের কাব্য, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি- এরকম আরো কয়েকটা আছে মুক্তির অপেক্ষায়।
এদিকে কাজ শুরু করে নাই কিন্তু চুক্তিবদ্ধ এরকম ছবির মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শ্যাম বেনেগালের ছবিটা আছে, কলকাতার সাথে আরো দুটো ছবি করার কথা আমার। শিশু একাডেমির একটা ছবি ‘উড়াল’, মীর সাব্বিরের পরিচালনায় আছে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ছবি ‘রাত জাগা ফুল’।