যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তারা দলীয় পরিচয় ও সহযোগিতাতেই হন। কোনসময় দল না করেও হঠাৎ করে দলে এসে নমিনেশন পেয়ে এমপি হয়ে যেতেও দেখা যায়। ৫ জানুয়ারিতে নতুন সংযোজন ভোটারদের ভোট ছাড়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন অনেকে। দলীয় নমিনেশন পেয়ে অনেকেই আলাদিনের চেরাগ প্রাপ্তির মতো বিনা খরচে এমপি হয়ে আত্মপ্রতিষ্ঠায় ফুলে ফেঁপে উঠছেন। এখন দলকেও তোয়াক্কা করেন না তারা। উল্টো দলীয় নেতাদের নানাভাবে হয়রানি করে চলেছেন।সৃষ্টি করছেন দলে বিভক্তি, চর্চা করছেন গ্রুপবাদের। দল চর্চা হতে হাজার মাইল দূরে আছেন তারা।
দলের ভেতর উপদল থাকার পরিণতি সর্বক্ষেত্রেই ভয়াবহ হয়। দল, দলীয় শৃংখলা, নেতৃত্ব ও কর্মিত্বে যদি ঐক্যের দৃঢ়তা না থাকে তবে দলের অগ্রগতি সম্ভব হয়ে ওঠে না।এমপিগণ সংসদে ভূমিকা রাখবেন, দল চালাবেন দলীয় নেতৃবৃন্দ এমনটিই হওয়া উচিত। কিন্তু সুবিধা, ক্ষমতার দাপট, টেন্ডার, টিআর, কাবিখা ইত্যাদির আকর্ষণে কিছু নেতা সংসদ সদস্যমুখী হয়ে ওঠেন। সেই সুবাদে এমপিগণও দলে উপদল সৃষ্টি করে চলছেন। পরিণামে গড়ে উঠছে এমপির আওয়ামী লীগ বনাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের দিক থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের থেকে এমপির আওয়ামী লীগের এলাকায় প্রভাব বেশী। কারণ স্থানীয় প্রশাসন ও অফিস আদালত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নয়, এমপির আওয়ামী লীগের কথাই বেশী শুনেন। ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ তারিখের দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে: কয়েক দুর্বৃত্তের কারণে মোহনগঞ্জে উন্মুক্ত হাওড়ে মাছ ধরতে পারছে না চার শতাধিক জেলে। প্রধানমন্ত্রীর পিএস নির্দেশ দিলেও কার্যকর হয়নি, সুবিধাভোগীরা নষ্ট করছে আওয়ামী লীগ।
এই রিপোর্টটি যাকে ঘিরে তিনি হলেন নেত্রকোণা-৪ আসনের সংসদ সদস্য জনাবা রেবেকা মমিন। এই রিপোর্টটিতে উঠে এসেছে তার একচ্ছত্র কর্তৃত্বের নমুনা। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পর্যায়ে ওখানে দুটো আওয়ামী লীগ, একটি এমপির অপরটা উপজেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের। জাতীয় দিবসগুলোতে শহীদ মিনার অথবা স্মৃতিসৌধে ফুলের তোড়াও বিভক্ত হয় ওখানে। দুই আওয়ামী লীগ দুই মিছিল নিয়ে ফুলের তোড়া দিতে যায়।
সেখানে আওয়ামী লীগের দুটো কমিটি রয়েছে। কোনটা অনুমোদিত কোনটা অননুমোদিত তাও জানে না কেউ। উভয় আওয়ামী লীগই নিজেদের অনুমোদিত দাবী করে আসছে। এমপির একচ্ছত্র ক্ষমতার প্রভাবে বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমপির আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। অপর আওয়ামী লীগ এই যোগদানকে স্বীকৃতি দেয়নি। এমপির কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সুবিধা না পেয়ে সেখানে এমপির আওয়ামী লীগ থেকে হতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার ঘটনাও ঘটছে।
অধিকাংশ উপজেলাতেই এরকম বিভাজন সংঘটিত হয়ে চলছে। দলীয় গঠনতন্ত্রের আলোকে দলীয় নেতারা যদি পরিচালিত হন আর সংসদ সদস্যরা পরিচালিত হন জাতীয় সংসদের দায়িত্ববোধ নিয়ে তখন রাজনীতির চেহারা অন্যরকম হয়ে যাবে। বিলুপ্ত হবে উপদল।
গ্রুপ দ্বন্দ্বে শত্রুতা বাড়ে ও গ্রুপকে সামনে তুলে ধরে বিরোধী গ্রুপের ঐক্য সংহত হয়। তখন ন্যায় অন্যায়ের ভেদ বিভেদ ভুলে যায় তারা। বাড়ে সংঘাত, সংঘর্ষ ও খুনোখুনি।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারী দল আওয়ামী লীগে উপদলীয় কর্মকাণ্ডের জন্য প্রায় সর্বক্ষেত্রেই সংসদ সদস্যগণ দায়ী। সংসদ সদস্যগণ সংসদমুখী হয়ে উঠলেই তবে এইসব আত্মঘাতী উপদলীয় চর্চার অবসান হবে। উপদল চর্চার কারণেই বিগত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোট বেশী থাকা স্বত্তেও জয়লাভ করেছে বিএনপির প্রার্থী। আসছে পৌর নির্বাচনেও এরকমটিই ঘটতে চলেছে। প্রার্থীদের মধ্যে কেউ হবেন এমপির আশির্বাদপুষ্ট আর কেউ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আশির্বাদপুষ্ট।
এমপি মহোদয়দের ঘিরেই সর্বত্র এই বিভাজন।এগুলোর অবসান অতীব জরুরি। নইলে দিনের পর দিন তা আরও জটিল হতেই থাকবে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)