আওয়ামী লীগ ‘দেউলিয়া’ হয়ে গেছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন: এই সরকারের আর দেওয়ার কিছু নেই, তাই তারা জিয়াউর রহমানের কবর নিয়ে কথা বলছে।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমেদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মির্জা ফখরুল।
এসময় বিএনপি মহাসচিব বলেন: এখন দেশবাসীকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনতে হবে। অথচ এই সরকার এখনও মোট জনসংখ্যার ৪ শতাংশ মানুষকেও ভ্যাকসিন দিতে পারেনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে ‘জ্যোতিষীমন্ত্রী’ আখ্যায়িত করে মির্জা ফখরুল বলেন: তিনি শুধু বলেন ভ্যাকসিন আসছে, এই ১০ লাখ আসছে, এই পাঁচ লাখ আসছে। সামনের ডিসেম্বরে আসছে।
সরকার শুধু কমিশন আর দুর্নীতি খোঁজ করে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন: চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ভ্যাকসিনের চুক্তি না করে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সেই চুক্তি করেন। এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই, কিন্তু তিন কোটি ভ্যাকসিনের জন্য অগ্রিম টাকা দিয়ে চুক্তি করেও ৭০ লাখের বেশি ভ্যাকসিন পাওয়া গেল না। এ ব্যাপারে সরকারের কোন মাথাব্যথা নেই। কারণ একজন বিশেষ ব্যক্তির দুর্নীতির সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এ ব্যবস্থা।
তিনি বলেন: দেশে করোনার শনাক্তকরণ টেস্ট খুব সামান্য হচ্ছে। সরকার লকডাউন দিচ্ছে কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। কারণ যে দিনমজুর সে কাজ করতে বের হবে, সরকারের উচিত তাদের প্রণোদনা দেওয়া, কিন্তু তারা সেটা করেনি। যা করেছে সব লুটের জন্য করেছে। ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে শিল্পপতিদের দিয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করেনি। আড়াই হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা দেওয়ার কথা ছিল সেটাও আওয়ামী লীগে নেতারা খেয়ে ফেলেছে।
সরকার ছদ্মবেশী বাকশাল কায়েম করেছেন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন: সরকার কিছু মানুষের আসল দৃষ্টিভঙ্গি এড়িয়ে অন্যদিকে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যেতে চায়। সাংবাদিকদের জন্য জামিন অযোগ্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট কায়েম করেছে, এতে গণমাধ্যমগুলোও এখন সেলফ সেন্সরশিপে চলে গেছে। এর ফলে গণমাধ্যমগুলোও যেটা ইস্যু না- কোথাকার কোন পরীমনি তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন: দেখুন পরীমনি ইস্যুতে প্রথমবারের মতো হাইকোর্ট জানতে চেয়েছে নিয়ম ব্যতিক্রম করে কেন নিম্ন আদালত তাকে রিমান্ডে নিয়েছে? অথচ যখন আমাদের নেতাকর্মীদের নিয়ম ব্যতিক্রম করে রিমান্ডে নেওয়া হয়, তখন হাইকোর্ট কোন কিছু জানতে চায় না, কথা বলে না। কারণ তাদের কোন স্বাধীনতা নেই বলার।
মির্জা ফখরুল বলেন: যে বাংলাদেশের জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি, সেই বাংলাদেশকে এখন সম্পূর্ণভাবে একটা কর্তৃত্ববাদী, একটা স্বৈরাচারী, একনায়কতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদি রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। আজকে আমাদের সব অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কৃষক তার ধানের দাম পায় না। আবার ৫০ টাকার নিচে মোটা চাল নেই। শ্রমিকরা কাজ হারাচ্ছে, করোনার কারণে ছোট ছোট কলকারখানার মালিকরা নিঃস্ব হয়ে গেছে। সেখানে সরকারের কোন নজর নেই।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন: আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। গণতন্ত্র হবে কোথা থেকে। ৭০ সালে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। যখন ৭১-এ যুদ্ধ শুরু হলো তারা পালিয়ে গেছে, আত্মসমর্পণ করেছে। এগুলো ইতিহাস। এখন যে অবস্থায় আছে, এটা ছদ্মবেশি বাকশাল।
তিনি বলেন: আপনাদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। আমি হতাশার কারণ দেখি না। ইতিহাস দেখেন, আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল না, এরশাদ নয় বছর ক্ষমতায় ছিল, আইয়ুব খান ১২ বছর ছিল। কিন্তু যেতে হয়েছে। জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না।
খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন: তাকে মুক্ত করতে না পারা আমাদের সবার ব্যর্থতা। কারণ যে দানব বসে আছে সে সব বিরোধী শক্তি ধ্বংস করে দিচ্ছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে কদিন আগেও কথা হয়েছে। আশা করি বেগম জিয়া মুক্ত হয়ে আবার নেতৃত্ব দিবেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমেদ সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন: তিনি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারতেন, অনুপ্রাণিত করতে পারতেন, আগুন ঝরাতে পারতেন এবং বিপ্লব ঘটাতে পারতেন।