ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন করতে গেলে অনেকে পেছন থেকে টেনে ধরতে চায় জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া জানিয়েছেন: দিনে কম পক্ষে ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টা অমানবিক পরিশ্রম করছে, রোদ, বৃষ্টি ঝড়ে ডিউটি করছে আমাদের ট্রাফিক পুলিশ। অথচ ট্রাফিক অাইন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমাদের অনেক প্রভাব, চাপ সহ্য করতে হয়।
শনিবার দুপুরে শাহবাগে ট্রাফিক সচেতনা কর্মসূচির একটি অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন: উন্নত বিশ্বে রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ নেই, আমাদের দুর্ভাগ্য হাত উঁচু করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। আইন বাস্তবায়ন করতে গেলে অনেকে পেছন থেকে টেনে ধরতে চায়। কখনো বা আমাদের আপোষ করতে হয়। কিন্তু সেটা আমরা চাইনা।
“মালিক আইন মানে না, শ্রমিক আইন মানে না, পথচারি আইন মানে না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিজেও আইন মানে না, আমরা কেউ আইন মানি না। তাহলে কিভাবে সড়কে আইন শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। ট্রাফিক আইন মানাতে আমরা প্রথমে পরিবার, সহকর্মী ও বন্ধু-বান্ধবদের উদ্বুদ্ধ করব।”
“পুলিশের কোন সদস্য যদি ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে তার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স।কোন ছাড় দেওয়া হবে না।”
বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েতউল্লাহকে উদ্দেশ্য করে ডিএমপি কমিশনার বলেন: এই যে পাল্লা দিয়ে গাড়ি চলে কার আগে কে যাবে, যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে লোক তোলে, এগুলো বন্ধ করতে হবে। আপনি বাস চালকদের সঙ্গে মিটিং করেন, আমাদের সঙ্গে নেন। তাদের উদ্বুদ্ধ করা দরকার যে এক বাস স্টপ থেকে আরেক বাস স্টপে গাড়ির দরজা বন্ধ থাকতে হবে। যারা করবে না তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিব। সর্বোপরি বাস স্টপেজ ছাড়া বাস দাঁড়াবে না।
পথচারীদের সচেতন হওয়া দরকার জানিয়ে তিনি বলেন: আমরা ফুট ওভার ব্রিজ ব্যবহার করি না, আন্ডার পাস ব্যবহার করি না, মোবাইল কানে নিয়ে রাস্তা পারাপার হই, আর দুর্ঘটনা ঘটলে চালকদের দায়ী করি, এটা হতে পারে না।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, দেশে অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। আমাদের রাজধানীতে পর্যাপ্ত আন্ডারপাস নেই। এগুলো যদি ব্যবস্থা করা না যায় তবে দেশে বৃহত এই জনগোষ্ঠীকে শুধুমাত্র জরিমানা করে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
বর্তমানে ট্রাফিক আইন নিয়ন্ত্রণের জন্য যে অবকাঠামো রয়েছে সেটি আরও দ্বিগুণ করার তাগিদ দেন তিনি।
ট্রাফিক সচেতনা অনুষ্ঠানে সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ চালকদের সচেতনতার সঙ্গে জনসাধারণ ও পথচারীদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, পাঠ্যপুস্তকে সড়ক ব্যবহারের বিধি আমরা লিখিত আকারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পেশ করেছিলাম। কিন্তু আমরা যতটুকু জানি যে, এটা ৪র্থ শ্রেনীর পাঠ্যপুস্তক পর্যন্ত এসেছে।
“তবে আমাদের দাবি ছিল- উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা। যদি সেটা আমরা করতে পারতাম তবে অনেকেই সচেতন হতে পারত। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুরোধ করবো যাতে সড়ক বিধিমাল উচ্চমাধ্যমিক পর্যান্ত পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে।”
ডিএমপিকে অনুরোধ করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে যে কমিটি হয়েছে, ৯০ শতাংশ মানুষ আইন মানে না। এই পরিস্থিতিতে পুলিশের একার সেটি সম্ভব নয়। আইন মানতে হলে যারা চালক রয়েছে, মালিক রয়েছে এবং সরকারি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে তিন মাস সময়সীমা দেয়া হোক। এতে তারা নিজেরাই তাদের আইন মানার বিষয়ে শেখাবে। এরপর যদি কেউ আইন ভঙ্গ করে তবে শুধুমাত্র চালককে নয় ওই প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকেও জরিমানা করা হবে। এতে করে সড়কে সবাই আইন মানতে বাধ্য হবে।
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ডিউটি শেষ করে আপনি যাতে আপনার মটর সাইকেলটি নিয়ে উল্টো পথে ঢুকে না পড়েন। এমন কোনো কাজ করা যাবে না যে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ হয়। পুলিশ সদস্যদের এমন কোনো আচরণ করা উচিতও নয়।
বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, সড়ক পরিবহন সেক্টরে সব চেয়ে বেশি নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। এর জন্য শুধু চালক একা নয় পথচারীরাও দায়ী। পথচারীরা মোবাইল ফোন কানে দিয়ে রাস্তা পারাপার হওয়ার সময় দুর্ঘটনায় পতিত হলে সেটি একা চালকের দোষ নয়, ওই পথচারীও দোষী।
“অনুষ্ঠানস্থলে বসে থেকে আমি দেখেছি ১১ জন পথচারী মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পারাপার হচ্ছে। আমি পুলিশকে বলবো, আপনারা এ বিষয়ে কঠোর হন। আমি সব সময় বলেছি পুলিশ সবার সঙ্গে নরম আচরণ করে। কিন্তু আজ বলবো আপনার আরও কঠোর হন। কেউ আইন না মানলে তার বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।”
অনুষ্ঠান শেষে এক বণার্ঢ্য র্যালি বের করা হয়। যা চারুকলা হয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে শেষ হয়।