আইএসের বিরুদ্ধে পরাশক্তিগুলোর অবস্থান বা পরাশক্তির বিরুদ্ধে আইএসের তথাকথিত ‘পবিত্র যুদ্ধ’ ঘোষণা, এর কোনোটাতেই খুব শীঘ্রই আইএস ধ্বংস হবে না বলেই মনে করছেন ইসলাম, রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ মোবাশ্বার হাসান।
তার মতে, আইএস বা এদের মতো বিদ্রোহী সংগঠনগুলো শুরু থেকেই তাদের কার্যক্রমকে পবিত্র হিসেবে ব্যাখ্যা করে আসছেন। সুতরাং নতুন করে তাদের জিহাদী কার্যক্রমকে ‘পবিত্র যুদ্ধ’ হিসেবে ব্যাখ্যা যে কোনো নাটকীয় পরিবেশ সৃষ্টি করবে না, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। বর্তমানে আইএসের যে যুদ্ধটা চলছে আমার কাছে মনে হয় সেটি মূলত প্রোপাগান্ডা ওয়ার বা প্রচার যুদ্ধ। সিরিয়ায় যে যুদ্ধটা এখন চলছে সেখানে কিন্তু অনেকগুলো গ্রুপ রয়েছে। তবে আইএস এখন যে অবস্থায় রয়েছে, এরপর তাদের পুনরায় যুদ্ধের ঘোষণা দেখে মনে হচ্ছে আইএসের পরাজয় হলেও হতে পারে, তবে সহসাই না।
তবে আইএসের এমন কর্মকাণ্ড বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদকে উস্কে দিচ্ছে কিনা? এমন প্রশ্নে গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির স্কুল অব গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনের এই গবেষকের মতে, সারাবিশ্বে এখন ইসলামের সংজ্ঞা নিয়ে নানান বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণার কথাই যদি বলি, অষ্ট্রেলিয়াতে ৫ লাখ মুসলিম বাস করে এদের মধ্যে ১ হাজার জন আইএসের জন্য যুদ্ধ করতে গেছে। ০.২ শতাংশ আইএসে যোগদান করেছে। খবরটি নিয়ে যেমন উদ্বিগ্ন হবার তেমন কিছু নেই আবার আছেও। খুব বেশি না হলেও, কেউ না কেউতো আইএসে যোগদান করেছে।
আইএস বা এমন সব বিদ্রোহী দলগুলোর জিহাদী কার্যক্রম সারাবিশ্বের মুসলিমদের একটি অংশকে যেমন উস্কে দিতে পারে তেমনই আর এক অংশকে স্তিমিতও করে দিতে পারে। যেমন অনেকে আইএসে যোগ দিচ্ছে। তেমন অনেকেই মনে করছে আইএস যা করছে তা ইসলামের সঙ্গে যায় না। জঙ্গিবাদ উসকানিমূলক এসব কর্মকাণ্ডে অনেকেই বিরোধিতা করছেন। তারা তো মুসলিমদেরই মেরে ফেলছে। আমাদের সঙ্গে যোগ দাও, নইলে মরো। এমনই হচ্ছে তাদের বক্তব্য। তাদের এমন মতেরও বিরোধিতা করছেন কেউ কেউ। তাদের এই দায়িত্ব কে দিয়েছে।
আইএসের কর্মকাণ্ড যতটা না আদর্শিক তারচেয়ে বেশি রাজনৈতিক বলেই মনে করছেন মোবাশ্বার হাসান। আইএসকে যদি সারা দেশের মানুষ সমর্থন দিতো তাহলে রাস্তায় রাস্তায় মানুষ মরে পড়ে থাকতো। সারাবিশ্বে বিস্তৃত মুসলিম বিশ্ব কখনোই এসবকে সমর্থন করে না। এমনকি আইএসও কোনোভাবেই ইসলামকে নিজেদের মধ্যে ধারণ করে না।
সমস্যার সমাধানে তার মত, পশ্চিমা বিশ্ব কিছু বিষয়ে বা উদীয়মান কোনো সমস্যার সমাধানে জোট হিসেবে কাজ করে। কিন্তু মুসলিম বিশ্ব কখনোই জোট হিসেবে কাজ করে না। সারাবিশ্বে উদীয়মান এই সমস্যা সমাধানে যারা স্বাধীনচেতা তাদেরই এখন এগিয়ে আসতে হবে। এই সমস্যা সমাধানে কাজ করার মতো একটি ফোর্সও তৈরি করা যায়। সবচেয়ে বড় যে কাজটি করতে হবে, সেটি হলো সামাজিক সচেতনতা তৈরি করতে হবে। যারা এসব করে তারা মনে করে তাদের পালিত ইসলামই সেরা ইসলাম। সামাজিক ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক কিছু মডেল তৈরি করতে হবে যেন দ্রুত এসব ক্যাম্পেইন চালানো যায়। তাহলেই হয়তো আইএসের কালো থাবা থেকে ইসলাম মুক্তি পাবে।