আফগানিস্তানের জাবুল প্রদেশ থেকে অপহরণের নয়মাস পর উদ্ধার হয়েছেন শিয়া হাজারা সম্প্রদায়ের ২৫ বছর বয়সি তরুণ নবী। আইএস কর্তৃক অপহরণের পর সরকারী বাহিনী বারবার চেষ্ট চালালেও শেষ পর্যন্ত তাকে উদ্ধারে সমর্থ হয় তালেবান। আর এ ঘটনাটিই বিশ্বমিডিয়ার আগ্রহের সৃষ্টি করেছে।
উদ্ধারের পর নবী জানান, ফেব্রুয়ারীতে তিনি কাজের খোঁজে বাসে করে রাজধানীতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় একদল বন্দুকধারী তাদের বাসের গতিরোধ করে। এরপর শিয়া হাজারা সম্প্রদায়ের ৩০ জন লোককে আলাদা করা হয়।
নবীসহ ওই ৩০ জনের সকলকে অপহরণ করা হয়। নবী জানান, আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম তালেবান হয়তো আমাদের অপহরণ করেছে। আমাদের সবসময় চোখ বেঁধে রাখা হতো। কিন্তু কান খোলা ছিলো। কিছু দিনের মধ্যেই আমরা বুঝতে পারলাম তালেবান নয় ইসলামী স্টেট (আইএস) আমাদের অপহরণ করেছে।
তারা আমাদের আটকে রেখে আফগান সরকারের কাছ থেকে তাদের কিছু সদস্যদের মুক্তি দাবি করছিলো। আমাদের মধ্যে সাত জনকে তারা হত্যা করে। আমাদের এমন একটা জায়গায় আটকে রাখা হয়েছিলো, যেখান থেকে নারীদের কথা-বার্তা ও শিশুদের কান্না শুনতে পেতাম। একদিন বাইরে প্রচন্ড গোলাগুলির শব্দ পেলাম। মাথার ওপর দিয়ে হেলিকাপ্টার ওড়ার শব্দ পেলাম। কিন্তু আমার বন্দীদশার কোনো পরিবর্তন হলো না। আমরা সব কিছু আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। বাঁচার আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম।
অপহরণকারীরা আমাদের ওপর নিয়মিত নৃশংস নির্যাতন করতো। এর মাঝেই আমাদের একজনকে তারা শিরোচ্ছেদ করে। সত্যি বলতে আমরা বাঁচার আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম।
ছবি: সাত জিম্মিতে অপহরণের পর আফগানিস্তানে শোক পালন করা হয়
শেষ পর্যন্ত তালেবান যোদ্ধারা আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় হামলা হালিয়ে আমাদের মুক্ত করে। প্রচন্ড গোলাগুলি শেষে আমাদের সামনে একদল লোকের উপস্থিতি টের পায়। তারা পশতু ভাষায় কথা বলছিলো। চোখের বাঁধন খোলার পর দেখি বিশাল দাঁড়িওলা একজন লোক আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তখন আমরা নিশ্চিত হই এরা তালেবান। আমাদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে।
নবী বলেন, ‘উজবেক যোদ্ধা এবং তাদের পরিবার আমাদের জন্য প্রাণপণে যুদ্ধ করেছে। তবে এখনও ওই নয় মাসের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠতে পারেননি নবী। ফিরে আসার পর চার-পাঁচশত লোক তাদেরকে অভিনন্দন জানান। কিন্তু তালেবানরা তাদের আলিঙ্গন করতে নিষেধ করেন। কেননা তারা শরীরিক ভাবে খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে নবীর কিডনি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো প্রকার সহায়তা করা হয়নি।