মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই বিদেশী নাগরিককে হত্যা এবং সেই হত্যার দায় স্বীকার করে আইএস’র দেওয়া বিবৃতির পর বাংলাদেশে সংগঠনটির উপস্থিতি নিয়ে সরকার এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য ধোঁয়াশার সৃষ্টি করেছে।
তাদের কেউ বলছেন, দেশে আইএস আছে, কেউ বলছেন, এ দেশে আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই। আবার কেউ কেউ বলছেন, নানান জঙ্গী সংগঠনের নামে বাংলাদেশে তৎপরতা চালাচ্ছে আইএস।
এছাড়াও গত কয়েক বছরে আইএস’র সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বেশ কিছু ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর তাদেরকে নিয়ে একাধিক সংবাদ সম্মেলন করেছে গোয়েন্দা পুলিশ এবং র্যাব। তাই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, আইএস যদি নাই থাকে; তাহলে ওইসব ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো কোনো?
আইএস বিষয়ে মন্ত্রী থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বক্তব্যই এমন ধোঁয়াশার সৃষ্টি করেছে।
রোববার পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন দেশে আইএসের অস্তিত্ব নেই। দুই বিদেশী হত্যায় আইএসের দায় স্বীকার করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে ওয়েবসাইট থেকে আইএস হত্যার দায় স্বীকার করা হয়েছে, সেটা পরিচালনা করেন একজন ইহুদি নারী।
এদিনই দেশে আইএস’র অস্তিত্ব থাকতে পারে উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ব্যক্তিগতভাবে বা বিছিন্নভাবে জঙ্গি সংগঠন ইসলামী স্টেট-আইএস এদেশে থাকতে পারে। তবে সংঘবদ্ধভাবে এদেশে আইএস থাকতে পারে বলে মনে করে না সরকার।
এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দেশে আইএসের অস্তিত্ব নেই দাবি করে বলেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু ধর্মযুদ্ধের নামে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত নয়। আমি মনে করি এদেশে আইএস’র কোনো অস্তিত্ব নেই।
অবশ্য গত মে ও জুন মাসের তিনটি ঘটনায় বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব থাকার প্রমাণ মেলে। ২২ জুন পুলিশ বারিধারা ডিওএইচএস থেকে গ্রেফতার করে আব্দুল্লাহ আল গালিবকে। তখন অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা কর্মকর্তার ছেলে আইএস সদস্য বলে দাবি করেছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. শাহাজাহান।
গালিবের কম্পিউটার থেকে একটি ভিডিও উদ্ধার করেছিলো পুলিশ। ভিডিও থেকে দেখা যায়, ১০ জন আইএস সদস্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তখন তিনি দাবি করেছিলেন, ওই ভিডিও দেশের ভেতরেই কোনো এক স্থানে ধারণ করা।
এছাড়াও ১১ জন বাংলাদেশী আইএসে যোগদানের উদ্দেশ্যে মধ্যপ্রাচ্যে রওনা হয়েছিলো বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। যার মধ্যে আবার দুজন পাকিস্তানে বন্দুক যুদ্ধে নিহত বলে দাবি করেন তিনি।
এর আগে গত বছর ২৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার সন্দেহে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সামির রহমান ইবনে হামদান নামে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো বাংলাদেশ থেকে আইএসের জন্য সদস্য সংগ্রহ করে সিরিয়ায় পাঠানোর উদ্দেশ্যে এদেশে এসেছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ এবং মায়ানমারে জঙ্গি নেটওয়ার্ক স্থাপন এবং শরিয়া ভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তন করাও তার উদ্দেশ্য ছিলো।
২৫ মে আইএস’র বাংলাদেশ শাখার প্রধান সন্দেহে গ্রেফতার হন আমিনুল ইসলাম বেগসহ তিনজন।
এছাড়া গত ২৫ সেপ্টেম্বর অনলাইনে আইএস সদস্য সংগ্রহের অভিযোগে পুরানো পল্টন এলাকা থেকে হিফজুর রহমান নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়।
এভাবে গতবছর সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিক ভাবে আইএসের সঙ্গে যোগসূত্র থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়।