প্রথম নেপালি হিসেবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) নাম লিখিয়ে ইতিহাস গড়েছেন সন্দীপ লামিচেন। তিনি বলছেন, এই সফলতা তাকে ক্রিকেটের অভিজাত শ্রেণীর পাশাপাশি খেলার সুযোগের সঙ্গে নিজ দেশের মাটিতে ক্রিকেট আরও এগিয়ে যাবে। আর নেপালিরা আঁধারে আলোর দিশা হিসেবে দেখছেন তাদের ‘নেপালি শেন ওয়ার্ন’কে।
গত রোববার আইপিএলের ১১তম আসরের নিলাম অনুষ্ঠানের পর রাতারাতি নায়ক হয়ে ওঠেন লামিচেন। মেগা ইভেন্টে তাকে দলে ভিড়িয়েছে দিল্লি ডেয়ারডেভিলস।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তো শুরু থেকেই ছিল সরগরম। পরের দিন নেপালের প্রতিটি জাতীয় দৈনিকের প্রথমপাতা জুড়ে ছিল লামিচেনের সংবাদ ও ছবি। নিলামের পরই নেপালের প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা টুইটারে বলেন, ‘শুধু আমাকে নয়, তুমি পুরো জাতিকে গর্বিত করেছ।’
জাতীয় দলের ডাক পাওয়ার দুই বছরের মাথায় আইপিএলে ডাক পেলেন লামিচেন। তার সংযোগ আছে অস্ট্রেলিয়ার স্পিন কিংবদন্তি শেন ওয়ার্নের সঙ্গেও। বল ঘূর্ণিতে মিল থাকায় তাকে দেশে ডাকা হয় ‘নেপালি শেন ওয়ার্ন’ বলে।
দিল্লিতে লামিচেনের দলে খেলবেন অস্ট্রেলিয়ার মারকুটে ব্যাটসম্যান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, নিউজিল্যান্ড পেসার ট্রেন্ট বোল্ট ও সাউথ আফ্রিকার কাসিগো রাবাদাসহ অনেক বড় বড় ক্রিকেটাররা।
তাই আইপিএল খেলাটাকে লাভ হিসেবে দেখছেন লামিচেনও। একজন রেলওয়ে কর্মকর্তার ছেলে বলেন, ‘আইপিএলে অনেক অভিজ্ঞ ও বড় বড় ক্রিকেটাররা খেলবেন, আপনি যদি সেখানে খেলার সুযোগ পান, তাহলে তো অনেক কিছুই শিখতে পারবেন।’
দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ নেপাল যারা আইসিসির টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টির কোনোটাই খেলার স্ট্যাটাস পায়নি। নেপালি এই তরুণ আশা করছেন তার দেশ দ্রুতই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এগিয়ে যাবে।
লামিচেনের প্রতিভা প্রথম নজরে এসেছিল নেপাল জাতীয় দলের সাবেক কোচ প্রভুদু দাশনায়েকের। ২০১৫ সালে যিনি প্রত্যক্ষভাবে তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। ২০১৬তে হংকং টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কের নজরে আসেন। পরে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে সিডনিতে ক্লার্কের অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণও নিয়েছেন।
১৯৯৬-২০০৬ পর্যন্ত চলা গৃহযুদ্ধ ও সীমাহীন দুর্নীতির কারণে দেশটির ক্রীড়া উন্নয়ন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নেপালের ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনে (সিএএন) রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের জন্য ২০১৬তে সারা বিশ্বের ক্রীড়াসংস্থাগুলো নিন্দা জানিয়েছে।
লামিচেনের ভিত্তি মূল্য ছিল ৩১, ৪৯৯ মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ২০ লাখ রুপি) । এই টাকাতেই তাকে দেল নেয় দিল্লি। ১৬৯ খেলোয়াড় কেনাবেচার মাল্টিমিলিয়ন বাজারে হয়ত অনেক কমই মনে হবে। কিন্তু নেপালের অনেকেই আশা করছেন যে, তার সাফল্যের ফলে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট পুনরুজ্জীবিত হবে।
নেপালের ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা চুম্বি লামা একটি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাকে বলেন, ‘দেশের ক্রিকেটের বিতর্ক এবং তরুণ প্রতিভাধর খেলোয়াড়দের হতাশা এই সাফল্যের কাছে হেরে গেছে।
তার ভাষায়, ‘ লামিচেন একজন তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার এবং দারুণ একজন লেগ স্পিনার। সে যদি ভাল নির্দেশনা পায় তাহলে তার ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল হবে। শুধু তাই নয়, তিনি নেপালি ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।’