রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কার্যকর হওয়ার গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তবে, তারা বলছেন, সরকার যে আশ্বাস দিয়েছিল তার বাস্তবায়ন হবে বলে তারা আশা রাখতে চান।
জিটিভি ও সারাবাংলার প্রধান সম্পাদক সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাষ্ট্রপতির সইয়ের মধ্য দিয়ে সাংবাদিকদের প্রত্যাশা অপূর্ণ হয়েছে। আমাদের একটা প্রত্যাশা ছিল আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে। তিনি বলেছিলেন, এই বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী মন্ত্রিসভা বৈঠকে আলোচনা হবে। কিন্তু আমরা দেখলাম, তারা আলোচনার নামে শুধু সময়ক্ষেপণ করেছে। কোনোরকম আলোচনা ছাড়াই রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে আইনটি স্বাক্ষর করিয়ে নেয়া হয়েছে। ফলে এটি কার্যকর হয়ে গেছে।
‘আমরা হতাশা ব্যক্ত করছি এবং মনে করছি যে, স্বাধীন মত প্রকাশের বিষয়ে আমাদের যে সংশয় ছিলো সেটা নিয়ে সরকার কোনো ধরনের চিন্তাভাবনা করলো না। তারপরও প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, এটি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হবে না। সেই আশ্বাস পর্যন্তই এখন ভরসা। এর বাইরে আর কিছু ভাবতে পারছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেছেন: আগে ৫৭ ধারার যে অপব্যবহার হয়েছে, আমরা দেখবো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেরও অপব্যবহার শুরু হয়ে যাবে।
‘মুক্তচিন্তার অবাধ প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। যেভাবে পুলিশকে সীমাহীন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য। সম্পাদক পরিষদ ও সাধারণ মানুষের বক্তব্যকে মাথায় না নিয়ে এই ধরনের আইন কার্যকর করা খুবই দু:খজনক।’
দৈনিক যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন: একটা বিষয় স্পষ্ট যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ছিলই এবং সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে সেই উদ্বেগ উৎকণ্ঠার কথা সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে জানানোও হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের বিশেষ করে বিএফইউজে, ডিইউজে, রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতৃবৃন্দ যারা আছেন তারা সকলেই এই বিষয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। আমরা কয়েক দফা বৈঠকও করেছি। সবশেষে তিন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করেছি। সেখানেও তারা বলেছিলেন বিষয়টি মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হবে। বিশেষ করে অন্তত ৫টি ধারায় নতুন কিছু করা যায় কিনা, কোনো সংশোধন পরিবর্তন আনা যায় কিনা সেটি বিবেচনায় নেয়া হবে। তখন আইনটি সংসদে পাস হয়েছিল আর আজ রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরের মধ্যে দিয়ে কার্যকর হলো।
তিনি বলেন: এই আইন এখনও সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। সংসদ যেহেতু চলছে, সেখানে পরিবর্তন আসে কিনা সেটা দেখার বিষয়। আগামী ২১ অক্টোবর সংসদ অধিবেশন আছে। সেখানে সাংবিধানিকভাবে সংশোধনের সুযোগ আছে, দেখা যাক সেটি হচ্ছে কিনা। সম্পাদকরা বসে এই বিষয়ে নিশ্চয়ই তাদের মতামত জানাবেন। তবে, এখন আমাদের উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠাটা রয়েই গেলো।