এক বছর আগে সোহাগী জাহান তনু হত্যার কয়েকদিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বলেছিলেন, প্রচলিত আইন দিয়ে তনু হত্যার তদন্ত সম্ভব নয়, এজন্য প্রয়োজন আইন পরিবর্তনের। অলোচিত এ মামলার তদন্ত নিয়ে ব্যাখ্যায় সেদিন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘তনু হত্যার ঘটনা একটি আধুনিক অপরাধ। পুরনো ফৌজদারি আইন দিয়ে এর সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার সম্ভব নয়। এ ঘটনার তদন্ত করতে হবে নতুন ডিজিটালাইজইড পন্থায়। আমাদের পুলিশ অফিসারদের যে মানসিকতা সেসব দিয়ে এটা ডিটেক্ট করা যাবে না। সাংবাদিক দম্পতির ঘটনা যেমন ডিটেক্ট করা যায়নি তেমনই যাবে না। যতোই আমরা মিছিল করি না কেন!’ তাহলে কি প্রধান বিচারপতির কথাই ঠিক হতে যাচ্ছে? গত বছরের ২০ মার্চ কুমিল্লার সেনানিবাস এলাকার ঝোপ থেকে নাট্যকর্মী ও ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী তনুর লাশ উদ্ধারের পর প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে দেশের মানুষ। বিদেশেও বিক্ষোভ হয়। প্রতিবাদের মুখে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয়, এ হত্যার বিচার হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়, ‘হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিদের গ্রেফতারের জন্য কোন আন্দোলন বা বিক্ষোভের প্রয়োজন নেই। এটা পুলিশের পেশাগত ও নৈতিক দায়িত্ব।’ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, এ ঘটনার তদন্তকাজে সাহায্যে করবে তারা। ঘটনার তদন্ত শুরুর পর আমরা দেখেছি কর্মকর্তারা একাধিকবার হুংকার ছেড়ে বলেছেন, অপরাধী যতো ক্ষমতাবানই হোক না কেন; তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। কিন্তু এক বছর পরও তনু হত্যার রহস্য উন্মোচিত হয় নি। আমাদের দেশে অনেক ঘটনার বিচার বা জড়িতদের শাস্তি না হওয়ার উদাহরণ আছে বলেই তনু হত্যার বিচার নিয়ে প্রথম দিকে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তনুর মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়েও চলে নাটক। প্রথম ময়নাতদন্তে ধর্ষণের কোন আলামত পাওয়া যায়নি বলে রিপোর্ট দেয় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ। পরে আদালতের নির্দেশে দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্তে বলা হয়, হত্যার আগে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। সোমবার দৈনিক প্রথম আলোকে তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেছেন, “তদন্ত কর্মকর্তা জালাল সাহেব নিজে কিছু বলেন না। যখনই জিজ্ঞেস করি, বলেন, ‘আপনারা চুপ থাকেন। পত্রিকায়, টিভিতে তনুর ছবি দেখাবেন না। আগে যিনি আইও ছিলেন, তিনি তো কথাবার্তা বলতেন। জালাল সাহেব কিছুই বলেন না। কেবল ধমকান। চুপ থাকতে বলেন।” একজন সন্তানহারা মায়ের প্রতি এই যদি হয় একজন পুলিশ কর্মকর্তার আচরণ; তাহলে আমরা কোন সভ্যসমাজে বসবাস করছি? তনুর মায়ের এমন অপমানিত মুখ দেখে লজ্জায় আমাদের মাথা হেট হয়ে আসছে। এই লজ্জা কি আমাদের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদেরকে, আমাদের সমাজকে, আমাদের সরকারকে, আমাদের রাষ্ট্রকে লজ্জিত করে না? আমাদের প্রশ্ন: কেন তদন্ত কর্মকর্তারা হত্যাকারীকে ধরতে পারছেন না? কোন অদৃশ্য হাতের ইশারায় গ্রেফতার করা যাচ্ছে না তাদেরকে? তাহলে কি রাষ্ট্রের মধ্যেই আরেকটি রাষ্ট্রে বসবাস করছি আমরা? যে রাষ্ট্রের পরিচালক অন্য কোন গোষ্ঠি?