আদালতের নির্দেশে অস্ট্রেলিয়ায় থেকে যাওয়ার সুযোগ মেলার পর দ্বিতীয়বার নোভাক জোকোভিচের ভিসা বাতিল করেছে দেশটির সরকার। এজন্য সার্বিয়ান তারকার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলতে না পারা তো বটেই, আগামী তিন বছর অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশের ভিসা না মেলার পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছে।
অজি ইমিগ্রেশন মন্ত্রী অ্যালেক্স হকারের ‘নিজস্ব ক্ষমতাবল’ প্রয়োগে ভিসা বাতিলের বিরুদ্ধে অবশ্য আরেকটি আইনি চ্যালেঞ্জে যেতে পারবেন সার্বিয়ান কিংবদন্তি। শনিবার সকালে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে অভিবাসন কার্যালয়েও যাবেন জোকার।
শুক্রবার অ্যালেক্স হকার বলেছেন, জনগণের স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে মন্ত্রী হিসেবে বিচক্ষণতা দেখিয়ে তিনি ৩৪ বছর বয়সী টেনিস তারকার ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিবৃতিতে আরও বলেছেন, নির্দিষ্টভাবে কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের সরকার অস্ট্রেলিয়ার সীমান্ত রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
জোকোভিচের আইনজীবী ফেডারেল সার্কিট এবং পারিবারিক আদালতে অস্ট্রেলিয়া সরকারের নেয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। এ দুই জায়গায় আপিল করেই প্রথমবার ভিসা বাতিলের বিপক্ষে রায় পেয়ে তিনি তাসমান পাড়ের দেশটিতে থেকে যাওয়ার অনুমতি অর্জন করেন।
সোমবার শুরু হতে চলা বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ৯ বার শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছেন মোট ২০ গ্র্যান্ড স্লামজয়ী জোকোভিচ। সেখানে খেলা নিয়েই যত নাটকের শুরু।
জোকোভিচ নাটক নতুন মোড় নেয় শুক্রবার সকালে। প্রথমবার ভিসা বাতিলের পর গত সোমবার তার করা আপিলের প্রেক্ষিতে অজি আদালতের রায় এসেছিল, অস্ট্রেলিয়ার ভিসা পেতে কোনো বাধা নেই সার্বিয়ান তারকার। রায়ের পর তিনি টেনিস কোর্টে ফিরে অনুশীলনও করেছেন। বৃহস্পতিবার বিশ্বের বর্তমান এক নম্বরকে রেখেই আসরের ড্র সেরে নেয় অস্ট্রেলিয়ান ওপেন কর্তৃপক্ষ।
ড্রয়ের কয়েকঘণ্টা পেরোতেই উল্টে যায় পাশার দান। অস্ট্রেলিয়া সরকারের আইনজীবীরা আগেই জানিয়েছিলেন, দেশটির ইমিগ্রেশন মন্ত্রী অ্যালেক্স হকার চাইলে ‘নিজস্ব ক্ষমতাবলে’ ফের বাতিল করতে পারেন জোকোভিচের ভিসা। শুক্রবার সেটিই করে বসেছে অজি প্রশাসন।
ঘটনার একেবারে শুরুটা গত ৬ জানুয়ারি। অস্ট্রেলিয়া সরকার জোকোভিচের ভিসা বাতিল করে দেয়। করোনা ভ্যাকসিনের তথ্য প্রকাশ না করার দায়ে মেলবোর্নের টুলামারিন বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর তাকে আট ঘণ্টা আটকেও রাখা হয়। পরে সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি আশ্রয়কেন্দ্রে রুমবন্দি রাখা হয়।
অজি প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন সেসময় জানান, ‘জোকোভিচ কোনো বিশেষ কেউ নন। প্রত্যেকের জন্য একই নিয়ম প্রযোজ্য।’
অস্ট্রেলিয়া সরকারের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজধানী বেলগ্রেডসহ সার্বিয়াজুড়ে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায় জোকোকে রাখা হোটেলের সামনেও। সার্বিয়ান সরকার দাবি করে, অস্ট্রেলিয়া জোকোভিচের সঙ্গে অপরাধীর মতো আচরণ করছে।
পরে অস্ট্রেলিয়ার আদালতে করা আপিলে জোকোভিচের আইনজীবী জানান, করোনা আক্রান্ত হওয়ায় জোকোর পক্ষে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন নেয়া সম্ভব ছিল না। আদালত টেনিস তারকার পক্ষে রায় দেন। বলে দেন দেশটিতে থাকতে কোনো বাধা নেই। এরপর খুলতে থাকে মাঠে নামার দরজাও।
অনুশীলনে ফিরে জোকোভিচ যখন বললেন, এখন শুধু খেলায় মনোযোগের সময়, সেটির চব্বিশঘণ্টা পেরিয়ে অজি ইমিগ্রেশন মন্ত্রী অ্যালেক্স হকারের ‘নিজস্ব ক্ষমতাবল’ প্রয়োগে ফের ভিসা বাতিল করে দেন সার্বিয়ান তারকার।