এক পয়েন্ট পেছন থেকে বাংলাদেশ ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে! শেষ চারের সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে শেষ তিন ম্যাচের অন্তত দুটিতে জয় চাই। এই অবস্থায় ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ আবার অস্ট্রেলিয়া! নানা দিক থেকে ঘিরে আসা চাপ শেষপর্যন্ত আর নিতে পারল না মরগানের দল। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে ৬৪ রানে হেরেছে স্বাগতিকরা। তাতে বাংলাদেশের জন্য সেমির দুয়ার খোলা থাকল ভালোভাবেই!
সেরা চারের টিকিটের জন্য অবশ্য নিজেদের শেষ দুম্যাচে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করতে হবে মাশরাফীর দলকে। সঙ্গে তাকিয়ে থাকতে হবে অন্য ম্যাচগুলোর ফলাফলের দিকেও।
ক্রিকেটের ‘মক্কা’খ্যাত লর্ডসে প্রথমে ব্যাট করে অ্যারন ফিঞ্চের শতকে ২৮৫ রান জমা করে অস্ট্রেলিয়া। হরহামেশা তিনশো, সাড়ে তিনশো রান তোলা অভ্যাস করে ফেলা ইংল্যান্ডের জন্য চ্যালেঞ্জিং হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে নয় লক্ষ্যটা। কিন্তু সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সময়ে ৩২ বল বাকি থাকতেই হুড়মুড় করে ধসে পড়েছে ইংলিশরা, অলআউট হয়ে গেছে ২২১ রানে।
হেরেও আপাতত পয়েন্ট টেবিলের চারেই আছে ইংলিশরা। ৭ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট ইয়ন মরগানদের। কিন্তু তাতে স্বস্তি নেই। সমান ম্যাচে ঠিক একধাপ পেছনেই বাংলাদেশ। এক ম্যাচ কম খেলা শ্রীলঙ্কা ৬ পয়েন্টে আছে ছয়ে। ৫ পয়েন্ট পাওয়া পাকিস্তানের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ দুই ম্যাচে জয় ছাড়া বিকল্প খোলা নেই স্বাগতিকদের সামনে।
সেখানে উল্টোপিঠে অবস্থান অস্ট্রেলিয়ার। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান দখল তো হয়েছেই, এবারের বিশ্বকাপে সবার আগে নিশ্চিত হয়েছে সেমিফাইনালটাও। ৭ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট অজিদের। এক পয়েন্ট পেছনে দুইয়ে নিউজিল্যান্ড। বাকি যে দুই ম্যাচ সেগুলোতে হারলেও অজিদের সেমির রাস্তা আটকাবে না।
লর্ডসের মেঘলা আকাশের নিচে ব্যাটিংয়ে নেমে ইংলিশদের শুরুটাই হয়েছে হযবরল ধরনের। ২৬ রান তুলতে নেই সেরা তিন উইকেট। দলের খাতায় কোনো রান যোগ হওয়ার আগেই দ্বিতীয় বলে জেসন বেহরেনডর্ফের বলে বোল্ড ওপেনার জেমস ভিন্স। তিন ওভার বাদে মিচেল স্টার্কের বলে এলবিডব্লিউ জো রুট (৮)। অধিনায়ক মরগান (৪) নেমে পরিস্থিতি বোঝারও সময় পেলেন না। তাকে প্যাট কামিন্সের ক্যাচ বানালেন স্টার্ক।
আরেক ওপেনার জনি বেয়ারস্টো একপ্রান্ত আগলে বিপদ সামাল দেয়ার চেষ্টায় থাকলেন। কিন্তু তার অবরোধ থামল ১৪ ওভারে এসে। ঘাতক বেহরেনডর্ফের বলে কামিন্সের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন ২৭ রান করে।
এরপর ৭১ রানের জুটিতে পাল্টা আক্রমণ চালান বেন স্টোকস ও জস বাটলার। দুজনের ব্যাটে রানও উঠছিল দ্রুত। সেটাও বড় হতে হতেও হয়নি। মার্কাস স্টয়নিসকে তুলে মারতে গিতে স্কয়ারলেগে উসমান খাজার হাতে ধরা পড়ে বাটলারের ২৫ রানের ইনিংসটি।
সতীর্থরা যখন অন্যপ্রান্ত দিয়ে ড্রেসিংরুমে আসা-যাওয়ায় ব্যস্ত, তখন কঠিন লড়াইয়ে অজিদের চোখ রাঙাচ্ছিলেন স্টোকস। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রায় একাই ম্যাচটা বের করে নিচ্ছিলেন, লর্ডসেও ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন তেমনই। এক হাতে লড়াই করে যখন নিজের চতুর্থ ওয়ানডে শতক থেকে মাত্র ১১ রান দূরে, তখনই স্টার্কের দারুণ এক ইয়র্কারে ভেঙে গুঁড়িয়ে যায় ইংলিশ অলরাউন্ডারের ম্যাচ বাঁচানোর স্বপ্ন। ৮ চার ও ২ ছক্কায় ১১৫ বলে থামে ৮৯ রানের লড়াকু ইনিংস।
স্টোকস ফেরার পর আর খুব একটা লম্বা হয়নি ইংলিশদের ইনিংস। মঈন আলিসহ বাকি ব্যাটসম্যানদের ফিরিয়ে সেমিফাইনালের রাস্তা পরিষ্কার করে অজিরা। টেলঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে দ্রুত ফিরিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন বেহরেনডর্ফ। এই পাঁচ উইকেট নিতে অজি পেসারের খরচ ৪৩। ৪৫ রানে ৪ উইকেট শিকার স্টার্কের। বাকি উইকেটটি স্টয়নিসের।
ইংল্যান্ডের কপাল খানিকটা হলেও ভালো যে অস্ট্রেলিয়ার রানটা ৩০০ কিংবা ৩৫০ হয়নি! তাহলে হারের ব্যবধানটা হয়তো আরও বেশিই হত। প্রথমে ব্যাট করে অজিরা উদ্বোধনী জুটিতেই তোলে ১২৩ রান। প্রায় ছয়ের কাছাকাছি রানরেটে ২২.৪ ওভারে এসে জুটি ভাঙেন মঈন আলি। ইংলিশ অলরাউন্ডারকে মারতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে জো রুটের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৬১ বলে ৫৩ করে ফেরেন ডেভিড ওয়ার্নার।
দুই জনের জুটি আবার গড়েছে বিশ্বকাপে নতুন রেকর্ড। উদ্বোধনী জুটিতে পাঁচবার পঞ্চাশ পেরনোর কীর্তি এখন কেবল এ দুজনারই। ওয়ার্নার ফিরলেও রানের গতি সচল রাখেন ওপেনিং সঙ্গী অ্যারন ফিঞ্চ। উসমান খাজার সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৫৮ বলে যোগ করেন আরও ৫০ রান।
পরে আর অধিনায়ককে সঙ্গ দেয়া হয়নি খাজার। ক্রিকেটে যেখানে চিরন্তন দুর্বলতা, সেই গতিতেই হলেন বধ! বেন স্টোকসের ৯০ মাইল গতির এক ইয়র্কারে ভাঙে স্টাম্প। ততক্ষণে এ আসরে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দুয়ারে ফিঞ্চ।
চতুর্থ ব্যাটসম্যান স্টিভেন স্মিথ উইকেটে আসার পরপরই ক্যারিয়ারের ১৫তম ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সপ্তম সেঞ্চুরির স্বাদ পান ফিঞ্চ। জফরা আর্চারের করা ৩৫তম ওভারের দ্বিতীয় বল থেকে দুই রান নিয়ে পৌঁছান তিন অঙ্কের ঘরে।
তার ঠিক পরেই আর্চারের শর্ট বলকে ফাইন লেগ দিয়ে মারতে যেয়ে ক্রিস ওকসের হাতে ধরা পড়েন ফিঞ্চ। ১১৫ বলে ২ ছক্কা ও ১১ চারের মার তার ইনিংসে। ফিঞ্চ যখন ফিরছেন অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১৮৫। হাতে আছে ৭ উইকেট আর ১৪ ওভার। স্মিথ-ম্যাক্সওয়েলদের মতো পাওয়ার হিটাররা থাকায় বড় রানের আশাই ছিল!
সেখান থেকেই ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে খেলাটাকে বের করার চেষ্টা করেন ইংল্যান্ড বোলাররা। ম্যাক্সওয়েল, স্টয়নিস হাত খোলার আগেই ফিরেছেন। যিনি বিপদ হতে পারতেন, সেই স্মিথও ৩৮ রানের বেশি করতে পারেননি। শেষে অ্যালেক্স ক্যারির ২৭ বলে ৩৮ রানের ক্যামিওতে চ্যালেঞ্জ দেয়ার মতো সংগ্রহ পায় অজিরা।
৪৬ রানে ২ উইকেট নিয়ে রানে বাঁধ দিয়েছেন ক্রিস ওকস। আর্চার, মঈন, মার্ক উড, স্টোকস প্রত্যেকেই পেয়েছেন একটি করে উইকেট। বোলারদের এগিয়ে দেয়া কাজটা জয়ে শেষ করতে পারলেন না ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা।