চোখের জলেই ড. আতিউর রহমানকে বিদায় জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সদ্য বিদায়ী গভর্নর ড. আতিউর রহমানের পদত্যাগপত্র গ্রহণের সময় চোখের জলে
ভেসেছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেও।
সে আবেগের সময়ের কথা জানিয়ে আতিউর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমার পদত্যাগপত্র নিয়েছেন। বলেছেন, আপনি অনেক সাহসী মানুষ। আর সাহসী বলেই পদত্যাগ করতে পারছেন। আপনিই আমাদের অর্থনীতিকে একটা স্থিতিশীল অবস্থানে এনেছেন।
‘পদত্যাগপত্র নেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী অশ্রুসিক্ত ছিলেন। এর চেয়ে বেশি আর কী চাওয়ার আছে জীবনে!’ বলে আরো একবার আবেগ তাড়িত হন কৃষক বাবার ছেলে আতিউর যাকে সংসারের প্রয়োজনে রাখাল বালকের মতো মাঠে গরু চরাতে হয়েছে, যাকে ক্যাডেট কলেজে ভর্তির সময় গ্রামের হাটে ভিক্ষার মতো চাঁদা তুলতে হয়েছে।
দরিদ্র একটি পরিবার থেকে উঠে আসা আতিউর রহমান সবসময় ভেবেছেন সাধারণ মানুষদের নিয়ে। চেয়েছেন এদেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্যবদল করার। বাংলাদেশ ব্যাংককে সাধারণ মানুষের প্রতিষ্ঠান হিসেবেই গড়ে তুলেছেন তিনি।
পদত্যাগের পর সাংবাদিকদের আতিউর রহমান বলেন, দরিদ্র একটি পরিবার থেকে উঠে এসেছি আমি। সেই জায়গা থেকে ধীরে ধীরে আজ এই জায়গায় এসেছি। আমি চেষ্টা করি সাধারণ মানুষের কথা ভাবতে। যাদের দিকে কেউ কখনো তাকায় না, তাদের কাছে কীভাবে টাকা নিয়ে যাওয়া যায় আমার কাজের মাধ্যমে সেই চেষ্টা করেছি।
‘আজ দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ ব্যাংকিং সেবার অধীনে। আজ রিকশাচালকদের ৮০ শতাংশ কোনো না কোনোভাবে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করছে। প্রত্যন্ত কোনো গ্রামের শিক্ষার্থী, কোনো এক চরের বাসিন্দা এসে পড়াশোনা করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেটাও সম্ভব হয়েছে ব্যাংকের বৃত্তি সেবার কারণে।’
বিদায়ী গভর্নর সাংবাদিকদের বলেন: আমি সবসময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আমি বিশ্বাসী। তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সব নির্দেশ ও উপদেশ আমি মেনে চলি। আমি বঙ্গবন্ধুর প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ। কারণ তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিলেন বলেই বাংলাদেশ ব্যাংক হয়েছে, আমি এর গভর্নর হতে পেরেছি।
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যখন যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন আমি সেভাবেই কাজ করার চেষ্টা করেছি। আর তাতেই আমি দেশের অর্থনীতিকে এমন স্থিতিশীল একটি অবস্থানে আনতে পেরেছি। আজ ২৮টি বছর ধরে আমি শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ করি। আজ আমরা দেখতে পাই বাংলাদেশের অর্থনীতি কোথা থেকে কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে,’ তার চলে যাবার সময় এভাবেই নিজের তৃপ্তির কথা জানান তিনি।
আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু, তার সুযোগ্য কন্যা এবং এদেশের সাধারণ মানুষের প্রতিই আমার নিরংকুশ আনুগত্য। ব্যাংক এবং ব্যাংকিংকে সেই সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি যখন চলে যাচ্ছি তখন তিন কোটি নতুন মানুষ ব্যাংকিং সেবার অধীনে এসেছে, সাড়ে ছয় কোটি ডলার থেকে রিজার্ভ ২৮ কোটি বিলিয়ন ডলারের বেশি হয়েছে। আমার পদত্যাগে বঙ্গবন্ধু কন্যা অশ্রুসিক্ত। এর চেয়ে তৃপ্তির আর কী হতে পারে!