শান্তির সময়ে পুলিশ যুদ্ধে লিপ্ত থাকে জানিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, এ যুদ্ধ অশান্তির বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, যারা সমাজের শান্তি, নিরাপত্তা বিঘ্ন করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে। আমরা ২৪ ঘণ্টাই এ যুদ্ধে লিপ্ত।
মঙ্গলবার ১ মার্চ পুলিশ মেমোরিয়াল ডে ২০২২ উপলক্ষে দেশ ও জনগণের সেবায় ২০২১ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী বীর পুলিশ সদস্যদেরকে শোক, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হয়।
পুলিশ মেমোরিয়াল ডে এর কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সকাল দশটায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ এবং জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গ রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজ চত্বরে নবনির্মিত পুলিশ মেমোরিয়ালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বীর পুলিশ সদস্যদের প্রতি সম্মান জানান। এসময় একটি সুসজ্জিত পুলিশ দল গার্ড অব অনার প্রদান করে।
বাংলাদেশ পুলিশের সকল মেট্রোপলিটন, রেঞ্জ এবং জেলা ইউনিটে যথাযোগ্য মর্যাদায় পুলিশ মেমোরিয়াল ডে ২০২২ পালিত হয়েছে।
আইজিপি বলেন, ২০১৭ সাল থেকে পুলিশ মেমোরিয়াল ডে উদযাপিত হচ্ছে। সে ধারাবাহিকতায় আজ আবার একত্রিত হয়েছি আমরা। তিনি বলেন, ২০২১ সালে আমরা ৩৪৬ জন সহকর্মীকে হারিয়েছি, এরমধ্যে ১৩৮ জনকে কর্তব্যরত অবস্থায় হারিয়েছি।
তিনি বলেন, হিরোকে যে জাতি স্বীকৃতি দিতে পারে না, সে জাতি হিরো তৈরি করতে পারে না। বাঙালিকে বীরের জাতি আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা প্রমাণ করেছি জাতিগত বীরেরা কি করতে পারে। যখনই সুযোগ পেয়েছে বাঙালি জাতি প্রমাণ করেছে আমরা হিরো।
আইজিপি বলেন, যুদ্ধ হলে ক্ষয়ক্ষতি নিশ্চিত। আমরা যেহেতু প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধ করছি, সেজন্য আমরা প্রতিবছর আত্মত্যাগও করছি। যেহেতু আমরা সবসময় যুদ্ধাবস্থার মধ্যে থাকি, প্রফেশনাল সেফটি নিশ্চিতেও চেষ্টা করে যাচ্ছি। কোন সদস্য অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়, তাদেরকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা হয়। তিনি বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ঢাকায় একটি ডিভিশনাল হাসপাতাল স্থাপন করা হচ্ছে।
পুলিশের কাজের পরিধি উল্লেখ করে পুলিশ প্রধান বলেন, বলা হয়ে থাকে জীবনের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেটা পুলিশি দায়িত্বের বাইরে পড়ে। তিনি পুলিশের নিজ দায়িত্বের বাইরে ‘ডেভেলপমেন্ট পুলিশিং’ কনসেপ্ট নিয়ে সমাজের বৃহত্তর কল্যাণে কাজ করা যায় বলে মতামত ব্যক্ত করেন।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন বলেন, পুলিশ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার মত চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব পালন করে থাকে। এ কাজগুলো বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন। এগুলো ঠিকমতো বাস্তবায়ন না হলে সমাজে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা ঘটে, উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হয়। পুলিশ এ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে।
তিনি বলেন, পুলিশের ছোটখাট কোন ঘটনা ঘটলে আমরা তা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে থাকি। তার চেয়ে আমরা এমন ভাবতে পারি যে, পুলিশ জেগে থাকে বলেই রাতে আমরা শান্তিতে ঘুমাতে পারি। পুলিশকে সবসময় সম্মান ও শ্রদ্ধার দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা উচিত। ছোটখাট ভুল হলে আমরা তা সংশোধনের জন্য পরামর্শ দিতে পারি।
আইজিপি ও স্বরাষ্ট্রসচিব কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান, তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। তাদের পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের পরিবারের যোগ্য সদস্যদের অগ্রাধিকার দেওয়ার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয় এবং তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পরে পুলিশ স্টাফ কলেজ কনভেনশন হলে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গকে স্বীকৃতি স্মারক প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত আইজি (এইচআরএম) মো.মাজহারুল ইসলাম।অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজিগণ, ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানরা, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা এবং জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
২০২১ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী ১৩৮ জন পুলিশ সদস্যদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এক জন, সহকারী পুলিশ সুপার এক জন, ইন্সপেক্টর দশ জন, সাব-ইন্সপেক্টর ২৩ জন, সার্জেন্ট এক জন, এএসআই ১৯ জন নায়েক দুই জন ও কনস্টেবল ৮১ জন রয়েছেন।