০১.
ফারহান (ছদ্মনাম)। মেধাবী ছাত্র। উচ্চ মাধ্যমিক দেয়ার পরই মনস্থির করে প্রিয় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। সাবজেক্টও মনে মনে চুড়ান্ত করে। ক্যামিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং।
২০১৫-১৬ সেশন। সাধ ও সাধ্যি মিলিয়েই ভর্তিও হয়ে যায়, প্রিয় সাব্জেক্টে, স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু স্বপ্নটা, স্বপ্নই রয়ে যায়। মোটে তিনদিন ভার্সিটিতে থাকতে পেরেছিল। প্রথম দিন বড় ভাইয়ারা তাদের দু’জনকে মেসে নিয়ে যায় পরিচিত হওয়ার জন্য।
শুরু হয় পরিচিতি পর্ব। একজনকে অর্ডার দেয়া হয় অপরজনের গালে গোটা দশেক কষে থাপ্পর দেয়ার। শেষ হলে অপরজনে একইভাবে অর্ডার। এভাবে আরো নানাবিধ পরিচয় পর্বে রাত ভোর হয়ে যায়।
এরপর, স্বপ্নের পাঠ চুকিয়ে তিনদিনের মাথায় মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে ঢাকায় ফিরতে হয় ফারহানকে।
০২.
র্যাগিং শব্দটা প্রথম শুনি এইসএসসি পাশের পর। ভারতে আইআইটি গুলোতে তখন এর খুব প্রচলন ছিল। আমাদের সময় তখনকার ঢাকা বোর্ডে প্রথম স্থান পাওয়া ছেলেটি আইআইটিতে ভর্তি হয়েও র্যাগিং এর জন্য ফেরত এসে বুয়েটে ভর্তি হতে বাধ্য হয়।
সেদিন শুনলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র র্যাগিং এ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে নিজের জন্মদাতা পিতাকেই ভুলে গেছে। বেশ ছেলেমেয়েরা আধুনিক হচ্ছে। পরিচয় পর্বের নতুন নতুন ধারা আবিষ্কার করছে।
০৩.
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য ভর্তি হওয়া ছয়জন শিক্ষার্থীকে পরিচিত হওয়া ও ম্যানার শেখানোর নামে রাতভর অর্ধনগ্ন করে র্যাগিংয়ের নামে অত্যাচার করা হয়েছে! শারিরিক ও মানসিকভাবে। সেই সাথে অর্ধনগ্ন ছবি তোলা এবং এই ছবি ব্লাকমেইল করার নামে হুমকি-ধামকি।
আজ (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঘুম থেকে উঠেই ফেইসবুক ও পত্রিকায় এই ঘটনা ও ছবি দেখে মুগ্ধ(!) হয়ে গেলাম। প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে আমার, আমাদের শাবিপ্রবি কেন পিছিয়ে থাকবে? এখানে “আমার” শব্দটা বলার অনেক কারণ আছে। হ্যাঁ এটা আমাদের থেকেও “আমার” বিশ্ববিদ্যালয় বলাটা অধিকার পর্যায়ে পরে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মের এক বছর পরেই ওখানে প্রবেশ। সিনিয়র ছিলেন শুধুমাত্র একটা ব্যাচ। মাত্র তিনটা বিভাগ। তারা আমাদের পেয়ে যতটা আপ্লুত, ঠিক ততটাই আমরাও কখনো তাদের সম্মান জানাতে কৃপনতা করিনি। আমাদের পরেও যারা এসেছে ঠিক এমনই চলতো তখনকার পরিচয় পর্ব। ঠিক পরিচয় পর্ব না, আত্মীকরণ বলাটাই যুক্তিযুক্ত। তখন সবাই ছিল সবার আত্মীয়। অন্তত প্রথম ৭/৮ টা ব্যাচের বেলায় বলা যায়।
০৪.
প্রথম যে ঘটনাটা বললাম, সেটা শুনে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। প্রথমে আমি বিশ্বাস করতে পারিনি বা করতে চাইও নি। আমাদের বিশ্ববিদলয়েও এমনটা হয়! কিন্তু যিনি বলেছিলেন, তাকে অবিশ্বাস করার কোন যুক্তি ছিল না।
০৫.
এই যে ম্যানার শেখানোর নামে র্যাগিং দেয়া, এটা কি শুধু ম্যানার শেখানোর জন্যই? মানুষের সাইকোলজী কোথায় কতটা উচ্চতায়(!) পৌঁছিয়েছে… তা এসব ঘটনা না দেখলে বিশ্বাস করা কষ্টকর।
পৃথিবীতে সব কিছুর রিটার্ন আছে। যথাসময়েই সেই রিটার্ন পাওয়া যায়। একজন সিনিয়র তার জুনিয়রদের সাথে যেমন আচরন করবে, জুনিয়ররাও ঠিক তেমন আচরনই রিটার্ন করবে। শুধুমাত্র জুনিয়র-সিনিয়র না। যে যার সাথে যেমন যা করবে, ঠিক তেমনটাই সে ফেরত পাবে। খুব ন্যাচারাল।
ভয় দেখিয়ে, অত্যাচার করে কখনো ভালো কিছু শেখানো যায় না। শুধুমাত্র ঘৃনা করতে শেখানো যায়।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)