অর্থনীতিতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার গল্পকে অবিশ্বাস্য বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডক্টর কৌশিক বসু। তার মতে, উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের তালিকায় উপরের সারিতে থাকা বাংলাদেশ এখন রীতিমতো বিস্ময়ের। তবে তুষ্টিতে না ভুগে এই ধারা অব্যাহত রাখতে নীতি-নির্ধারকদের সদা জাগ্রত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বিশ্বমন্দার ধাক্কার পরপরই ২০১২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে বহুজাতিক উন্নয়ন ব্যাংক বিশ্বব্যাংকের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন ডক্টর কৌশিক বসু। যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক প্রধান এই ভারতীয় বাঙালী কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান অর্থনীতিক উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন।
ল্যাটিন আমেরিকার দেশ পেরুতে সদ্য সমাপ্ত বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ এর বার্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ডক্টর আতিউর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তিনি। ঐ বৈঠকের পরই বাংলাদেশ নিয়ে উচ্চাশার কথা শোনালেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের প্রিয় ছাত্র ডক্টর বসু।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যে মাত্রায় হচ্ছে, তা প্রায় ৭ শতাংশের কাছাকাছি। পৃথিবীর খুব বেশি জায়গায় সেরকম প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এমনটাই ধারণা করছে। বিশ্বের দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি অর্জনের তালিকা তৈরি করলে বাংলাদেশের অবস্থান তালিকার ওপরের দিকে থাকবে।
‘বাঙালী হিসেবে এটা বলতে পারি, দশ বছর আগেও যদি ভাবা হতো বাংলাদেশ এখানে আসতে পারে কিনা, মনে হতো এর সম্ভাবনা খুবই কম,’ উৎসাহের সঙ্গে বললেন কৌশিক বসু, ‘সার্বিকভাবে পরিস্থিতি খুবই খুবই ইতিবাচক।’
তবে অর্থনীতিকে ভীষণ কঠিন একটি ব্যবস্থাপনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুখবরে খুশি হয়ে বসে না থেকে সচেতন থেকে কাজ করে যেতে হবে।
সামষ্টিক অর্থনীতিতো বটেই সামাজিক খাত বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং মানব উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জনে বেজায় খুশী এক সময় বাংলাদেশ সরকারের গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস এ কাজ করা বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ।
ভারতের উদাহরণ টেনে ড. বসু বলেন, ১৯৮০’র দশকে এবং ৯০’র দশকের শুরুর দিকে ভারতে ৭ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ হলেই বলা হতো দেশের খুব ভালো সময় যাচ্ছে। বাংলাদেশেরও গোড়ার দিকে তাই দেখা যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমানে ২৭ বিলিয়ন ডলারের মতো রিজার্ভ আছে, যা মুদ্রার দর ওঠানামার ক্ষেত্রে তথ্যদাতাদের ভয়ের মধ্যে ফেলে দেয়। কারণ এতো বড় অংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে একটি ক্ষমতা এনে দিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজার নিয়ত পরিবর্তনশীল হওয়ায় এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন কৌশিক বসু।
ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি ড. কৌশিক বসু বাংলাদেশ সফর করবেন বলে জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক, এই অঞ্চলের অর্থনীতি, রাজনীতি নিয়ে গণবক্তৃতা করবেন তিনি।