এ এক অদ্ভুত নেশা চিনির। হলিউডি ছবি দেখার নেশা। বন্ধু বা বান্ধবীদের কিংবা সহকর্মীদের অনেকেই যখন বাংলা কিংবা হিন্দী সিনেমার গল্পে মাতোয়ারা, তখন হলিউডি সিনেমার আলাপ তোলে সে।
চিনি, একজন মধ্যবয়সী নারী। মধ্যবয়স মানে হলো ৩৮ কিংবা ৪০ হবে। কাজ করেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনে। বর্ণে কালো, মোটা টাইপ গড়ন। হাসার আগেই দাঁত বের হয়ে আসে। তার উপর কালো দাঁতের মাড়ি। কালো মাড়িতে সাদা দাঁতের হাসি- অদ্ভুত কম্বিনেশন। সে হাসিও আবার অট্টহাসি। ছোট ছোট চোখ, মনে হয় চীন কিংবা জাপান থেকে কেবল চোখদুটোই আমদানি করেছেন সৃষ্টিকর্তা। মাথার চুল এতো কোঁকড়ানো, পাখির বাসার মতোই। মাঝে মাঝে দেখলে মনে হয় চিরুনি করে না বহুদিন। পোষাক-আষাকেও একদম গ্রামীণ, শহুরে ভাষায় খ্যাত টাইপ। আগলি।
চাকরি স্মার্ট হলে কি হবে, আচরণে একদম আদিম। বিশাল বড় ওড়না জড়িয়ে অফিসে আসে, কোনো সাজ সজ্জা নাই। পোষাকের রং বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও নেই রুচির পরিচয়। দেখলেই মনে হয়, হাতের সামনে যা পান তাই পড়ে চলে আসেন। একই জামা পড়েন দিনের পর দিন। প্রথম দেখাতেই বড় আপা ডাক পান অনায়াসে। কেউ কেউ আড়ালে যে খালাম্মা ডাকে না, তা নয় কিন্তু। হয়তো ডাকেন, তবে এখনো সামনা সামনি কেউ বলেননি। তবে বাসে, রিকশায় কিংবা বাজারে এ ডাক এখন শোনেন নিয়মিত।
এমন সাদামাটা হয়েও যখন বলিউডি সিনেমা নিয়ে আলাপে অংশ নেন তখন অন্যরা কিছুটা আশ্চর্য হন বটেই। তবে অফিসে সময় মতো আসা, দায়িত্বের সাথে কাজ করায় তার তুলনা নেই। অন্য সহকর্মীরা যেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডায় ব্যস্ত, সে সময় চিনি বসে বসে প্রয়োজনে আগামী দিনের কাজও গুছিয়ে রাখেন। এজন্য অবশ্য চিনিকে সিনিয়ররা বেশ পছন্দই করেন। কিন্তু সিনিয়ররাও যখন আড্ডায় চিনির মতে আজব কিছু করে বসেন সেখান থেকেও নিজেকে সরিয়ে নেয় সে। চিনি, এ্যালকোহল সেবন, নারীপ্রীতিকে আজব ভাবেন। এরা কিভাবে অনায়াসে মেয়ে সহকর্মীদের সাথে ডেটিংয়ে যান ভাবতে পারেন না। কিভাবে নিজের ডিগনিটিকে যে কোন খানে, যে কারো সাথে, যে কারো সামনে এভাবে মেলে ধরতে পারেন- তা ভাবতেই পারেন না চিনি। চিনির এই চিন্তার গোড়ামিটা আবার একদমই ভালো চোখে দেখেন না সিনিয়ররা। তাই পার্টি বা আড্ডায় তারা মোটেই চিনিকে আশা করেন না, দাওয়াত ও দেন না। পারলে গোপনই রাখেন এসব আয়োজনের খবর। অদ্ভুত এক সম্পর্ক কর্মক্ষেত্রে।
ভাবনা এমন হলে কি হবে, চিনিও তো মেয়ে। ওরো তো আড্ডা, আনন্দ, উল্লাস ভালো লাগে। তবে প্রকাশে কৃপণ –এই যা।
এমন একটা ব্যক্তিত্ব নিয়ে কাটানো ফ্লোরার জীবনে আনন্দ যোগ করেন এই হলিউডি অভিনেতারাই। ম্যাট ড্যামন, উইল স্মিথ, ড্যানিয়েল ক্রেইগ, রজার মুর, টম হ্যান্কস, লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও, আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার, সিলভেস্টার স্ট্যালন এমনকি ভেন ডেনজেলও।
টাইটানিক সিনেমায় অন্যরা যখন রোজের নিরাভরন সৌন্দর্য উপভোগ করেন, তখন জ্যাকের নতুন কিছু আবিস্কারের মোহকে উপভোগ করে চিনি। জ্যাকের চোখের বিস্ময়, কৌতুহল আর পাওয়ার আনন্দ উপভোগ করে। জ্যাকের আকুলতায় মুগ্ধ হয় চিনি। ফাস্ট এন্ড ফিউরিয়াসের পর ডেনজেলের তো প্রেমেই মজে আছে সে।
অভিনয়ে দক্ষতায় নাকি এসব অভিনেতার অবয়বে মুগ্ধ চিনি, সেটা আজো আলাদা করতে পারে না সে। তবে মনের অজান্তেই একটা স্বপ্ন পুরুষের ছবি সে লালন করে। কিন্তু দেখতে এত বিচিত্র হওয়ায় কেউ তার সাথে থাকার সাহস দেখাতে পারেনি। কোন পুরুষ সাহস করে তার হাত ধরতে পারে নি। বহু বছর আগে যখন তার বয়স ২৮ কিংবা ৩০ হবে, তখন মিলিত হয়েছিল সহপাঠি বুবুনের সাথে। একসাথে ছিলোও কিছুদিন। বুবুন বলেছিলো বিয়ে করবে। কিন্তু মাস ছ’য়েক পর, চলে গিয়েছে। যাওয়ার সময় বলে গিয়েছে তার মতো মেয়ের সাথে কোন পুরুষই সম্পর্ক রাখতে চাইবে না। এতোটাই কদর্য সে। পরে একদিন একটা সুন্দরী মেয়েকে এনেছিলো চিনির সামনে। বলেছিলো, এর নাম ময়না, আমার বউ। সেদিনই শেষ দেখেছিলো বুবন আর বুবনের বউ। এরপর থেকেই আর কোনো পুরুষের সংস্পর্শে আসেনি চিনি।
কিন্তু চিনির স্বপ্নে তো পুরুষেরা আছেই। এই স্বপ্ন পুরুষ কেবল স্বপ্নেই থাকে। কখনও চোখে দেখে না চিনি। তাই কারো কাছে যাওয়া হয় না তার। চোখের এই মুগ্ধতাকে সে খুজে বেড়ায় হলিউডের সেলুলয়েডে। কেন এতো ভালো লাগে এদের..তার কারণও জানে না সে।
অথচ এই সময়ের মেয়েরা কত আধুনিক। চাইলেই মনমতো পোষাক পড়ে, বাইরে যায়, যতক্ষণ খুশি আড্ডা দেয়, যার সাথে খুশি বন্ধুত্ব করে। চাইলেই যে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। মত প্রকাশের এই যে স্বাধীনতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা অর্জন করেছে মেয়েরা তাতে খুশি চিনি, কিন্তু নিজে তা করতে সাহস পায় না। ভীতু টাইপ।
ইদানিং আরো একটা নেশা হয়েছে চিনির। ফেসবুকিং। হঠাৎ করেই কাজের পাশাপাশি আর ফেসবুকিংয়ে মনোযোগ বেড়েছে তার। এই ফেসবুকেই পরিচয় সুমিতের সাথে। সুমিতও সাংবাদিকতা করে, বেশ পরিচিত। একটু বয়স্ক সাংবাদিক। সুমিতেরও সংসার আছে, এক ছেলে, এক মেয়ের বাবা সুমিত। প্রথম পরিচয়ের দিন থেকেই চিনিকে মোহাবিষ্ট করে রেখেছে। ডেইলী বলা ঠিক হবে না, প্রতি মুহূর্তে কথা বলে একে অপরের সাথে। কিন্তু দেখা হয়নি কখনও।
হঠাৎ একদিন ফেসবুকেই একটা প্রোফাইল পিকচার দেখলো চিনি। অবিকল ভেন ডেজেল মনে হলো তার। না, এতো অন্য কেউ। প্রোফাইলে গিয়ে কতক্ষণ তাকিয়েই থাকলো, এমন সুন্দর কোনো পুরুষ হয়! বাদল নামের ওই প্রোফাইল পিকচার দেখে বিস্মিত চিনি। বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠালো। চিনিকে অবাক করে দিয়ে সে অনুরোধ গ্রহণও করলো বাদল।
কথা বাড়ানোর সাহস পায় না চিনি। মনে মনে প্রতিদিন কেবল প্রোফাইল ওপেন করে আর দেখে। কিন্তু কোনো যোগাযোগ শুরু করে না। এদিকে সুমিতের সাথে তার চ্যাটিং চলেই। সুমিত তাকে উস্কায়, চলো বাইরে কোথাও যাই। চিনি বলে যাবো। কিন্তু আর যাওয়া হয় না। একদিন অফিস শেষে বাসা ফিরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখে, ঠিক সামনের বাসার ছাঁদেই দাড়িয়ে আছে বাদল, ভুল দেখছে না তো?
না, ভুল নয়….ঠিকই দেখছে। সামনে তার সেই স্বপ্নপুরুষ ভেন ডেজেল মানে ফেসবুকে যার নাম বাদল। ছবির চেয়েও সুন্দর। গায়ের রং ফর্সা, লম্বা। স্বাস্থ্য ভালোই। মাথায় যে অল্প কয়টা চুল তাতেই আরো দারুন লাগছে। বয়স চিনির চেয়ে বড়জোর ৫ কিংবা ৭ বছরের বড় মনে হচ্ছে। চিনি বাদলের এমন রূপ দেখে মুগ্ধ। একাকী জীবনে এই প্রথম কোনো পুরুষ দেখে মুগ্ধ হলো সে। খুব করে কাছে পেতে ইচ্ছে হলো কাউকে। সে যেকোনো মূল্যে হোক না কেন?
বাদলও খেয়াল করে। চোখে চোখ পড়ে দুজনের। এরপর আরো পর পর কয়েকদিন। দুজনই কেবলি তাকিয়ে থাকে, কোনো কথা হয় না।
এদিকে, সুমিতের আগ্রহ দিনকে দিন বাড়তেই থাকে। চিনিকে টেনে ঘরের বাইরে নিতে চায় সে। দেখাতে চায় নতুন এক জগতের সন্ধান। এমন একটা আগলি মেয়েকে সুমিত পছন্দ করে-এটা চিনির বিশ্বাস হয় না। কিন্তু সুমিত তাকে কেন এটা বলে-এটা বোঝে সে। সুমিতও বোঝায়, সে তাকে আসলেই পছন্দ করে। একবার হলেও কোথাও দেখা করতে চায় সে। তবে একা, নির্জনে কোথাও।
সুমিতের এমন পীড়াপীড়িতে শেষ অব্দি রাজী হয় চিনি। দেখা হবে, তবে এই যান্ত্রিক শহরে নয়, দুরে কোথাও। ঠিক হলো কুয়াকাটা যাবে দুজন। অফিস থেকে ছুটি নিলো। একটা ভয় তো আছেই, সুমিতকে সে একদিনও দেখেনি। তবুও ঝুঁকিটা নেবে চিনি। এই সমাজ–সংসারকে তার বড় বেশি ভয়। সামাজিকতাকে এখনো অবজ্ঞা করতে সাহস পায় না সে।
সুমিতই প্রথম পুরুষ, যে তাকে এভাবে বাইরে বের করতে পারছে। একাকী নির্জনে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাতে পেরেছে। তাই যন্ত্রের এ শহরের কোথাও না, সরাসরি কুয়াকাটাতেই নতুন এ জীবনের স্বাদ গ্রহণ করতে চায় চিনি।
কেবল সুমিতের জন্য কুয়াকাটা যেতে রাজী হয়েছে চিনি, এমনটাও নয়। তবে সুমিত একটা কারণ বটে। আরও একটা কারণ অবশ্য আছে, কুয়াকাটাও আগে কখনো যায়নি চিনি। এই অজুহাতে সেই জায়গাটাও দেখে আসার ইচ্ছা তার। সুমিত এখনো এসে পৌছায়নি। কুয়াকাটার সবচেয়ে ব্যয়বহুল হোটেল এ উঠলো সে। এ হোটেলেই উঠবে এমনটাই ঠিক হয়েছিল। বুকিং করাই ছিলো। কি একটা জরুরি কাজে আটকে যাওয়ায়, দুই ঘন্টা পরের বাসে রওনা দিচ্ছে সুমিত।
লবিতে ডুকতেই চিনি খেয়াল করলো তার সামনেই দাঁড়ানো ভেন ডেজেল মানে বাদল। নিজের চোখকেই তখন বিশ্বাসই হচ্ছিলো না চিনির। নিজের গায়ে নিজে চিমটি কেটে দেখলো, না এটা স্বপ্ন নয়, ঠিকই দেখছে সে। সামনে তার এক মুহুর্তের জন্য হলেও কাছে পাওয়ার আকাঙ্খা জাগানো সেই পুরুষটাই দাঁড়িয়ে।
এবার আর দুরে থাকলো না চিনি। এগিয়ে এসে বলেই বসলো,
-আরে আপনি?
-জ্বি। আপনি যে?
-হুম। আমি বেড়াতে এসেছি। একটু আগে আসলাম। আপনি?
-আমি তো অফিশিয়াল ট্যুর এ। কাল বিকেলে ফিরে যাবো।
-কত নম্বর রুম আপনার?
-৪০৩। সময় করে আইসেন।
-আচ্ছা। এখন বাই বলে লাগেজ নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো চিনি। ব্যাগ রেখেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। তার ভেতরটা কাঁপছে। হঠাৎ করে বাদলকে সামনে পেয়ে অপ্রস্তুত সে। এমনটা আশাই করে নি।
চিনির মাথা থেকে সুমিত উধাও। সে জায়গায় দখল করে ফেললো বাদল। ফ্রেশ হয়ে নিলো। ব্যাগ থেকে একটা সাধারণ পোশাক বের করলো। যতটা সম্ভব পরিপাটি করে সাজার চেষ্টা করলো। গায়ে দিলো সুগন্ধি।
এবার হাটি হাটি পা পা করে ৪০৩ নম্বর রুমের সামনে চিনি। দরজায় নক করলো। খুলে দিলো বাদল। পরণে হাফপ্যান্ট, গায়ে একটা স্যান্ডো গেঞ্জি। রুমে আর কেউ নেই। সোনালী পর্দায় সাজানো হোটেল রুম। এটা একটা স্যুট। সামনের অংশে সোফা আর টেবিলে সাজানো। সাথেই ছোট একটা পার্টিশন দিয়ে আরেকটা রুম। ওই রুমেই ডাবল বেড পাতা। ওয়ালে ৪২ ইঞ্চি এলইডি টিভি, এসি দেয়া।
একনজর চোখ ঘুরিয়ে চিনি ড্রয়িং রুমে না বসে গিয়ে বসলে বেড রুমে। এদিকে রুমের দরজা আটকে দিয়ে বাদল ড্রয়িংরুমে বসার জন্য চিনিকে বলতে গেলো…চলুন বসি।
এই শব্দের পর আর কিছু বলতে দেয়নি চিনি। কিছু বলারই সুযোগ না দিয়ে চিনি, বাদলকে জড়িয়ে ধরলো। কতক্ষণ জড়িয়েই থাকলো। বাদলও ঘটনার আকস্মিকতায় কিংকর্তব্যবিমুঢ়, কিছুই বলছে না। চিনিই এবার বাদলকে ঠেলে দিলো, হাতের হালকা ধাক্কায় দাঁড়ানো বাদল আধশোয়া হয়ে গেলো। এবার বিছানায় বাদলের বুকের ওপর চিনি। বাদল আরে না, আরে না, এসব কি করছেন বলছে। কিন্তু চিনি কোনো কথাই শুনছে না। আদরে আদরে ভরিয়ে দিচ্ছে, অযাচিতভাবে। যেনো একটা পুতুল পেয়েছে বহুদিন পর। সেই পুতুল নিয়ে ইচ্ছে মতো খেলছে সে।
কিছুক্ষণ পর বাদলও হাল ছেড়ে দিল, ছেড়ে দিলো শরীরও। ইচ্ছে পুরণের পর কতক্ষণ বাদলকে জড়িয়ে থাকলো চিনি। এতক্ষণ পর কথা বলার সময় পেলো বাদল। বলল,
-এবার ছাড়েন। আমাদের আর কোনোদিন যেনো দেখা না হয়। কোথাও না।
-ঠিক আছে।
বলেই আর দাঁড়ালো না চিনি। রুমে চলে এলো। এসে একটু স্থির হলো। এতক্ষণ একটা ঘোরের মধ্যে ছিলো। এবার ভাবলো, এটা সে কি করে করলো, কিভাবে করতে পারলো সে?
সাথে সাথেই ব্যাগ গুছিয়ে হোটেলের বিল চুকিয়ে ফিরতি বাসে উঠে বসলো। এরপর তার ফেসবুক আইডিই ডিএ্যাকটিভ করে দিলো। আর কারো সাথে কোনোভাবেই যোগাযোগ রাখতে চায় না সে। সুমিতের খোঁজও নিতে ইচ্ছে হলো না। সুমিতের কাছে চিনির ফোন নম্বর ছিলো না। সুতরাং বেশি জ্বালাতনের আর কোন সুযোগ পেলো না সুমিতও।
আবারো নি:সঙ্গ চিনি। একদম একা। এবারের একাকীত্বে যোগ হয়েছে লজ্জা আর অপমানবোধ। বাদলের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা তাকে তাড়িয়ে বেড়ায় প্রতিনিয়ত। বাসার সামনের ছাঁদেও কাউকে আর চোখে পড়ে না চিনির। নিজের বারান্দাতেও পর্দা টানিয়ে দেয়, সে লজ্জাবোধ। নিজের প্রতি ঘৃণাও বাড়ে, বাড়ে ভালোলাগাও। ওই সামান্য সময়ের ঝড়ে কাতর সে। গল্পে পড়েছিলো বিউটি এন্ড দ্য বেস্ট এর, কিন্তু তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাতো বিপরীত। সে নিজে যতটা কুরূপা, ঠিক ততটাই সুন্দর বাদল।
অফিস আর বাসাই এখন চিনির একমাত্র গন্তব্য। কিন্তু ভেতরটা তার কুয়াকাটা ৪০৩ নম্বর রুমে। আনন্দ আর বেদনার ভরা কিছুটা মুহূর্ত। এভাবেই কেটে যায় সপ্তাহখানেক। এ কয়দিনের প্রতিটা মুহূর্ত বাদলে আচ্ছন্ন চিনি।
এরমধ্যে একদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরে ঘরের মেঝেতে একটা সরকারি সিল মারা একটি খাম দেখতে পায়। হাতের ব্যাগটা সোফায় রেখে, চিঠিটা হাতে নেয় চিনি। খোলে। দেখে একটি সমন।
সমনে লেখা তাকে পুরুষ ধর্ষণের মামলায় আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মামলার দেরীর কারণ হিসেবে ঠিকানা খুঁজে বের করাকে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিটা হাতে নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো চিনি। বারান্দার গ্রিলে লাগানো পর্দাটা সরালে, তাকালো সোজা, সামনের ছাদে। দেখলো হাতে সিগারেট নিয়ে চেয়ারে গা এলিয়ে বসে আছে বাদল। আবারো চোখে চোখ পড়লো দুজনের। এবারে বাদলের চোখে প্রচন্ড ঘৃণা।