চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় প্রয়োজন সুশাসন

অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, এ খাতে সার্বিক সুশাসন নিশ্চিত করা, ২০২০-২৯ সালকে অভিবাসন দশক ঘোষণা এবং সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে চতুর্থবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে অভিবাসন ও সোনার মানুষ সম্মিলন।

রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এ সম্মিলনে অভিবাসন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় ১৮ জনকে সোনার মানুষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।

রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু) আয়োজিত সম্মিলনের সমাপনী অধিবেশনের প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাংলাদেশ যে আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত তার পেছনে অভিবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে শ্রমিকরা বিশেষ করে নারী শ্রমিকরা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কীভাবে অভিবাসীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো যায় এবং পদ্ধতিগত জটিলতাগুলো দূর করা যায় সেজন্য সরকার কাজ করছে।

সম্মিলনে বক্তারা বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ১৭ লক্ষ্যের মধ্যে ১১টিই কোনো না কোনোভাবে অভিবাসীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশি অভিবাসীদের ভূমিকার উপর আলোকপাত করে তারা বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের কিছু বাজার হারানো, একমুখী বা একই দেশে বা অঞ্চলে অভিবাসন প্রবণতা, অবৈধ অভিবাসন, রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব, ওয়েজ আর্নার তহবিলের অস্বচ্ছ ব্যবহার ইত্যাদি উপাদানগুলো অভিবাসন ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকর উদ্যোগসহ অভিবাসীদের সুযোগ-সুবিধাগুলোর প্রতি আরো বেশি আন্তরিকতা প্রদর্শন করলে দেশের অভিবাসন খাত আরো বিকশিত হবে বলে তারা উল্লেখ করেন।

অভিবাসীদের পাঠানো অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সচল রাখে উল্লেখ করে বক্তারা আরো বলেন, এ খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। অভিবাসনপ্রক্রিয়া এখনো মূলত ঢাকা কেন্দ্রিক, এটার পুরোপুরি বিকেন্দ্রীকরণ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে অধিকাংশ অভিবাসীই ব্যক্তি পর্যায়ে বা দালালদের মাধ্যমে বিদেশ যান। দালালদেরকে আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হলে অভিবাসন খাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।

রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী, কবি ড. আশরাফ সিদ্দিকী, বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ এর নির্বাহী পরিচালক ড. আতিক রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

এরপর অভিবাসন ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ শীর্ষক সিম্পোজিয়ামে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর বলেন, অভিবাসীদের পাঠানো অর্থ নিয়ে আমরা এত গর্ব করি অথচ তাদের সামাজিক ও মানবিক উন্নতি করতে পারছি না। তাদেরকে আমরা যথাযথ সম্মান দেই না। তিনি আরো বলেন, এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজতে হবে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, অভিবাসন প্রক্রিয়ায় নানামুখি অস্বচ্ছতার কারণে প্রতিবছর প্রায় ১৫-১৭ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যায়।

বিকেলে অভিবাসন বিষয়ক আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পার্লামেন্টারি বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নেয়।এর পরে তাসনিম সিদ্দিকী ও সি আর আবরার এর গবেষণাগ্রন্থ “টুয়ার্ডস ট্রান্সপারেন্সি ইন রিক্রুটমেন্ট: মেকিং দালাল্স ভিজিবল” এর মোড়ক উন্মোচন করেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানে রামরুর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সি আর আবরার ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রকাশ প্রকল্পের দলনেতা জেরি ফক্স বক্তব্য দেন।