চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘অভিজিৎকে হত্যার উদ্দেশ্য মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে নিরুৎসাহিত করা’

‘বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কে হত্যার উদ্দেশ্য হল, জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বন্ধ এবং নিরুৎসাহিত করা।’

অভিজিৎকে হত্যার দায়ে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের পাঁচ সদস্যের মৃত্যুদণ্ড ও অপর এক আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার রায়ে একথা বলেন আদালত।

মঙ্গলবার বেলা ১২ টায় ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের দেয়া রায়ে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক ওরফে জিয়া, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ ওরফে শামস এবং আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই সাথে এদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া এই মামলার আরেক আসামি শফিউর রহমান ফারাবীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। আজকের রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ছয় জনের মধ্যে জিয়া ও আকরাম পলাতক।

আলোচিত হত্যাকাণ্ডের এই রায়ে আদালত বলেন, ‘অভিজিৎ রায় একজন বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার ছিলেন। বাংলা একাডেমীর বই মেলায় বিজ্ঞানমনস্ক লেখকদের আড্ডায় অংশগ্রহণ করে ফেরার পথে আক্রমনের শিকার হন। নাস্তিকতার অভিযােগ এনে নিষিদ্ধ সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্যরা অর্থাৎ অত্র মামলার অভিযুক্তগণসহ মূল হামলাকারীরা সাংগঠনিকভাবে অভিজিৎ রায়কে নৃশংসভাবে হত্যা করে। স্বাধীনভাবে লেখালেখি ও মত প্রকাশের জন্য অভিজিৎ রায়কে নিজের জীবন দিয়ে মূল্য দিতে হয়। অভিজিৎ রায়কে হত্যার উদ্দেশ্য হল জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বন্ধ এবং নিরুৎসাহিত করা যাতে ভবিষ্যতে কেউ স্বাধীনভাবে লেখালেখি ও মত প্রকাশ না করতে পারে।’

এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ছিলেন আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকির। আর আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোসলেহ উদ্দিন জসীম, খায়রুল ইসলাম লিটন ও নজরুল ইসলাম।

বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে থাকতেন যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১৫ সালে বইমেলা উপলক্ষে তারা দেশে আসেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ থেকে ফেরার পথে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন। সন্ত্রাসীর চাপাতির আঘাতে নিহত হন অভিজিৎ। সেসময় তার স্ত্রী বন্যা গুরুতর আহত হন এবং হাতের একটি আঙুল কাটা পড়ে। ঘটনার পরে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান তিনি। বর্বরোচিত ওই ঘটনার পর অভিজিৎ’র বাবা অধ্যাপক অজয় রায় (প্রয়াত) বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন। সে মামলার তদন্ত করে ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম। এরপর ওই অভিযোগ আমলে নিয়ে ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট ছয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। দুই পক্ষের যুক্ততর্ক শুনানি শেষে গত ৪ ফেব্রুয়ারি আদালত এই মামলার রায়ের জন্য ১৬ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করেন। সে অনুযায়ী আজ আদালত আলোচিত হত্যাকাণ্ডটির রায় ঘোষণা করেন।