চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

অব্যাহতভাবে কমছে রপ্তানি আয়

রপ্তানি আয় বাড়াতে সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দেয়ার পরও এ খাতের আয় কমছেই। চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার ধারা অব্যাহত রয়েছে অক্টোবরেও। এই মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছে ১১ দশমিক ২১ শতাংশ। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমকি ৮২ শতাংশ কম।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে রপ্তানি আয় বাড়লেও পরের ৩ মাস টানা কমছে। গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের আগস্ট মাসে প্রবৃদ্ধি কমেছে সাড়ে ১১ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৩ শতাংশ আর অক্টোবর মাসে প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানিতে ক্রয়াদেশ কমেছে। সঙ্গে সঙ্গে কমছে পণ্যের দামও। এছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন না করা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারসহ, অনলাইনে ব্যবসার প্রসারসহ বিভিন্ন কারণে রপ্তানি আয় কমে গেছে।

এ বিষয়ে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিশ্বব্যাপী এখন রপ্তানি মন্দা চলছে। পণ্যের দাম কমছে। ওভেন, কটন ও ডেনিমের ক্রয়াদেশগুলো চলে যাচ্ছে পাকিস্তানে। ক্রেতার চাহিদা কমেছে। অন্যদিকে অনলাইনে ব্যবসার পরিধি বাড়ছে। রপ্তানি আয়ে এসবের প্রভাব পড়ছে।

“আমাদের লক্ষ্য ২০২০ সালের মধ্যে হয়ত রপ্তানি আয় ৬শ’ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করার। কিন্তু দেখা গেছে, রপ্তানি আয় ৪৮০ ডলারে পৌঁছে তা আবার ৪৪০ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে গত মাসে।”

ডলারের বিপরীতে টাকার মান এখনও শক্তিশালী উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার দাম কমিয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ যেমন- চীন, পাকিস্তান, ভারত ও ভিয়েতনাম তাদের স্থানীয় মুদ্রার দাম কমিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে কমায়নি। এসব কারণে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় কমেছে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথম ৪ মাসে (জুলাই-অক্টোবর) সব ধরনের পণ্য রপ্তানিতে বৈদেশিক মুদ্রার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ হাজার ৪৩২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। কিন্তু আয় হয়েছে ১ হাজার ২৭২ কোটি ১২ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ দশমিক ২১ শতাংশ কম। একই সঙ্গে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় অর্জিত এ হার ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ কম।

একক মাস হিসেবে চলতি বছরের অক্টোবরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩০৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার। এই সময় আয়ের লক্ষ্য ছিল ৩৪৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি আয় কমেছে ১১ দশমিক ৭১ শতাংশ। এছাড়া একক মাস হিসাবে প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। গত বছরের অক্টোবরে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৩৭১ কোটি ১১ লাখ ডলার।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে রপ্তানি পোশাক খাত থেকে আয় এসেছে ৮৩ শতাংশের বেশি। তবে হোমটেক্স, টেরিটাওয়েলসহ এ খাতের অন্যান্য রপ্তানির উপখাত হিসাব করলে তৈরি পোশাক খাতের আয় হবে ৮৫ শতাংশ।

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত হলো তৈরি পোশাক। এই খাতের রপ্তানি আয় কমে যাওয়ায় সামগ্রিকভাবে রপ্তানি আয় কমেছে। এ ছাড়া চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য ও হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি আয়ও কমেছে। তবে কিছুটা ঘুরে দাড়িয়েছে পাট ও পাটজাত পণ্য।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, আলোচ্য সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৮ শতাংশ কম। পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৩১ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের কিছু বেশি। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৯ শতাংশ কম। কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৩৫ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি কমেছে ২ শতাংশের মতো

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলার। রপ্তানি এ আয় তার আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি।

চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৪ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। পণ্য খাতে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৪৫ বিলিয়ন এবং সেবা খাতে সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি।