মুক্তিযুদ্ধসহ নিজের জীবনের বিভিন্ন ধাপে সংগ্রাম আর পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে এবারের বইমেলায় প্রকাশ পেয়েছে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীর বিক্রমের স্মৃতিকথা বা মেমোয়ার গ্রন্থ। বইটিতে স্থান পেয়েছে তার তারুণ্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন, দেশের জন্য জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া, সেই দেশের কাছ থেকে কয়েক দশকের ব্যবধানে সম্মান ও অসম্মান লাভ এবং প্রিয় নেত্রীর সান্নিধ্যে অভিজ্ঞতার ঝুলিকে সমৃদ্ধ করার সুযোগের জীবন ঘনিষ্ঠ বর্ণনা।
আত্মজীবনী হলেও ইংরেজি ভাষায় রচিত ‘চ্যারিয়ট অব লাইফ- লিবারেশন ওয়ার, পলিটিক্স অ্যান্ড সোজার্ন ইন জেল’ বইটি মূলত ইতিহাসভিত্তিক ও তথ্যপূর্ণ। বইটিতে আলোচিত হয়েছে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর নিজের চোখে দেখা এবং নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার বর্ণনা।
সাবেক সচিব এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এখন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা।
বইটিতে ফুটে উঠেছে তরুণ বয়সের আলোকিত ক্যারিয়ার এবং হঠাৎ দেশের রাজনৈতিক ঘূর্ণিঝড়ে আটকা পড়ার দ্বিধাদ্বন্দ্ব। সংকট আর অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে মাতৃভূমির অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যোগ দিয়ে তিনি সাক্ষী হয়েছেন এমন সব ঐতিহাসিক ঘটনার যার ধারাবাহিকতায় এসেছিলস্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণা।
১৯৭১ সালের এপ্রিলে মুজিবনগরে যখন সরকার গঠিত হলো, সরকার শপথ গ্রহণ করল; ওই অনুষ্ঠানের মূল আয়োজকদের একজন ছিলেন তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। ইতিহাসের সাক্ষী হওয়ার পাশাপাশি নিজেই অংশ হয়ে গেলেন ইতিহাসের। দেশের বিজয়ে ভূমিকা রাখার জন্য পেলেন ‘বীর বিক্রম’ খেতাব।
তবে স্মৃতিকথার কালরেখা শুধু সেই কালটাতেই সীমাবদ্ধ রাখেননি লেখক। ব্যাখ্যা করেছেন, যে দেশকে স্বাধীন করতে যুদ্ধ করেছেন সময়ের ফেরে সেখানেই তাকে হতে হয়েছে কারাবন্দী। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি, সে সময়ে তার ওপর মিথ্যা অপবাদ ও শাস্তি চাপানোরর চেষ্টা, কারাবাস এবং তার মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে নিজের স্বাধীনতার অনিশ্চয়তার সেই সময়গুলোর আবেগ দিয়ে বর্ণনা করেছেন তৌফিক-ই-ইলাহী।
বইটিতে লেখক জরুরি অবস্থা চলাকালে তার নিজের মতোই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর চাপানো মামলা ও বিনাবিচারে অবরুদ্ধ রাখার সময়ের কথা লিখেছেন। বিচার ব্যবস্থার ভেতরে বিচার ব্যবস্থার নানা দিক সম্পর্কে কীভাবে অন্যান্য কারাবন্দীদের কটুক্তি আর উপহাস থেকে শিক্ষা নিয়েছিলেন তার বর্ণনাও রয়েছে বইটিতে।
প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমিতে অবিচারে আঘাত পেলেও স্রষ্টার বিচারে ভরসা রেখেছেন। আর তারই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে সুযোগ পেয়েছেন তার প্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থাকার। শেখ হাসিনার মুখেই শুনতে পেয়েছেন, নিজ চোখে দেখতে পেরেছেন তার অদম্য রাজনৈতিক পথচলা, ভাগ্যের সঙ্গে লড়াই আর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে দৃঢ় বিশ্বাস; যার বর্ণনাও রয়েছে স্মৃতিকথায়।
এমন নানামুখী রোমাঞ্চকর জীবনের অধিকারী হওয়ার ভাগ্য হয় না বেশিরভাগেরই। তাই জীবনের এমন হাজারো চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে একটি দেশের স্বাধীনতার অংশ হওয়া থেকে শুরু করে সেই দেশেরই সরকারের কাছ থেকে অসম্মানিত হওয়া, তারপরও বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে চলা – সব মিলিয়ে ইতিহাসের চাক্ষুষ বর্ণনার এক আত্মকথা ‘চ্যারিয়ট অব লাইফ’।
বইটির প্রকাশক শ্রাবণ প্রকাশনী। মূল্য: ১২০০ টাকা।