চব্বিশ ঘণ্টা আটক থাকার পর উত্তর প্রদেশের সনভদ্রার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাথে দেখা করার অনুমতি পেয়েছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
শনিবার সকালে মির্জাপুর গেস্ট হাউসে সনভদ্রায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দেয় উত্তর প্রদেশের পুলিশ।
এর আগে শুক্রবার সকালে প্রিয়াঙ্কা সনভদ্রায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কাছে যেতে চাইলে পথে মির্জাপুরে পুলিশ তার গাড়িবহর আটকে দেয়।
তখন এর প্রতিবাদে প্রিয়াঙ্কা তার কর্মীদের নিয়ে সড়কে বসে পড়েন। পরে সরকারি একটি গাড়িতে করে তাকে সেখান থেকে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওযা হয়।
এনডিটিভি জানায়, প্রিয়াঙ্কাকে মির্জাপুর গেস্ট হাউসে নিয়ে আসা হয় এবং সেখানে তিনি ২৪ ঘণ্টা আটক থাকেন।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী শনিবার সকালেও গেস্ট হাউস থেকে বেরিয়ে সনভদ্রার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে দেখা না করে তিনি উত্তরপ্রদেশ ছেড়ে যাবেন না। কিন্তু পুলিশ তার অনুমতি দিচ্ছিলো না। পরে সকালে সনভদ্রার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো গেস্ট হাউসে আসলে পুলিশ তাদেরকে প্রিয়াঙ্কার কাছে প্রবেশের অনুমতি দেয়।
প্রিয়াঙ্কা এনডিটিভিকে বলেন, আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের আত্মীয়দের দু’জন ভেতরে আসেন। অপর ১৫ জনকে অনুমতি দেয়নি পুলিশ। এমনকি গেস্ট হাউস থেকে বের হয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য আমাকে অনুমতি দেয়া হয়নি। সৃষ্টিকর্তা জানেন তাদের মনের অবস্থা কী!
শেষ রাতে টুইটে তিনি বলেন, সিনিয়র পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তারা মধ্যরাতে তার সঙ্গে দেখা করতে এসে বলেন যে, সনভদ্রার পরিবারের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াই চলে যেতে হবে। আমি তাদেরকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি আমি কোনো আইন ভাঙার জন্য এখানে আসিনি। শুধুমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাথে দেখা করতে এসেছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা না করে আমি ফিরে যাবো না।
গত বুধবার উত্তরপ্রদেশে প্রায় ৩৬ একর জমি নিয়ে বিরোধের সময় গোলাগুলিতে ১০ জন নিহত এবং ২৪ জনের বেশি মানুষ আহত হন। গ্রামপ্রধান যোগ দত্ত এবং তার দলবলের সঙ্গে আদিবাসী কৃষকদের এ সংঘর্ষ হয়। যোগ দত্ত প্রায় দুইশ’ লোক ও ৩২টি ট্রাক্টর নিয়ে ওই দিন জমি দখল করতে গিয়ে কৃষকদের বাধার মুখে পড়েন।
এনডিটিভি জানায়, বাধার মুখে যোগের দলবল কৃষকদের গুলি করতে শুরু করে। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে তারা নির্বিচারে গুলি চালায়, যা ভারতের গত কয়েক বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে রক্ত হিম করা ঘটনা।
এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে দেখতেই শুক্রবার প্রিয়াঙ্কা উত্তর প্রদেশে সফর করেন। শুক্রবার সকালে প্রিয়াঙ্কা উড়োজাহাজে করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী এলাকা বারানসি পৌঁছান এবং সেখানে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সংঘর্ষে আহতদের দেখতে যান।
তারপর তিনি বারানসি থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে সনভাদ্রার পথে রওনা হন। প্রিয়াঙ্কা রওনা হওয়ার পর খবর বের হয়, স্থানীয় প্রশাসন সনভাদ্রা জেলায় জনসমাগমের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
প্রিয়াঙ্কার সনভদ্রার ঘটনায় মন্তব্য করতে গিয়ে ইউপি মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা শ্রীকান্ত শর্মা বলেন, যদি প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এতোটাই উদ্বিগ্ন হন, তাহলে কেন রাজস্থান ধর্ষণের ঘটনায় কথা বলেননি।
শ্রীকান্ত শর্মার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এনডিটিভিকে বলেন, এসব অনাচারের বিরুদ্ধে কথা বলা আমাদের কাজ এবং এক্ষেত্রে কেউ আমাদের থামাতে পারে না। আর সরকারের দ্বারা প্রচারিত অপপ্রচার নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন নই।