চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

অবকাঠামোসহ ২০২০ সালের মধ্যে ৭৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ ছাড়া বৃহৎ অর্থনীতির দেশ নয়

৩০তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য টেকসই বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি ২০২০ সালের মধ্যেই বিনিয়োগ করতে হবে কমপক্ষে ৭৪ বিলিয়ন ডলার। অন্যথায় এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

‘রোড টু ২০৩০: অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কৌশল নির্ধারণ’ বিষয়ক গোলটেবিল আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং ইকোনোমিক রিপোটার্স ফোরাম (ইআরএফ) যৌথভাবে এ আলোচনার আয়োজন করে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন ইকোনোমিক রিপোটার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল। এছাড়া বক্তব্য রাখেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, সিপিডির সম্মানিত ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ্যের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম, দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন, ইআরএফের সেক্রেটারি জেনারেল জিয়াউর রহমান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাসেম খান তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন। এতে তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হতে হলে শুধু অবকাঠামো খাতেই প্রতিবছর ২০ থেকে ২২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন।

বর্তমান অবকাঠামো খাত উন্নয়নে বিনিয়োগ রয়েছে জিডিপি’র ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এটাকে ৬ থেকে ৮ শতাংশে উন্নীত করতে হবে, কারণ ভিয়েতনাম অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে জিডিপি’র প্রায় ১০ শতাংশ বিনিয়োগ করে থাকে।

মেগা প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। যা উন্নয়নে একটি মারাত্বক বাধা। এছাড়া বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করছে গ্যাস, বিদ্যুৎ, ভূমি, যোগাযোগ অবকাঠামো সংকট, দক্ষ মানবসম্পদের অভাব ও উচ্চ কর হার।

সিপিডি’র সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের সম্ভাবনার দুয়ার খুবই সংকীর্ণ। কারন ব্যবসা পরিচালন ব্যয়ের হার প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

এছাড়া অপ্রতুল অবকাঠামো খাতের কারণে বাংলাদেশ কাঙ্খিত পর্যায়ে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারছে না। এ খাতের উন্নয়নে সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা অপরিহায্য।

এ সময় তিনি তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য খাতে মধ্যম সারির কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে বলে জানান।

বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে প্রবেশ করা মসৃন নয় মন্তব্য করে জিয়াউর রহমান বলেন, ৩০ তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে প্রবেশে সম্ভাবনা রয়েছে, তবে এ যাত্রাটি মসৃন নয়। কারণ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে অবকাঠামো খাত পর্যাপ্ত নয়। বিশেষ করে রেল ও নৌপথের উন্নয়নে আরো কাজ করতে হবে। এছাড়া  ব্যাংক ও আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা।

এ লক্ষ্য অর্জনে অবশ্যই দ্রুত বিনিয়োগ বাড়াতে হবে উল্লেখ করে আসিফ ইব্রাহীম বলেন, ৩০তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ প্রবেশ করতে হলে ২০২০ সালের মধ্যে ৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তবে বৈদেশিক বিনিয়োগের পাশাপাশি দেশীয় বিনিয়োগকে বেগবান করার জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, যোগাযোগসহ অন্যান্য সুবিধাসমূহ এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা ভোগ করে আসছে। সম্প্রতি ইইউ বাংলাদেশের ইপিজেড এলাকায় শ্রম আইনকে সংষ্কার করতে বলেছে। অন্যথায় ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের এ জিএসপি সুবিধা হারাতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

লক্ষ্য অর্জনে সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে পবন চৌধুরী বলেন, সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে ৭৬টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য স্থান নির্বাচন করা হয়েছে, তারমধ্যে ২৩টির মাটি ভারাটসহ অন্যান্য সেবা সংযোগ প্রদানের কাজ চলমান রয়েছে এবং বেসরকারী খাতে ৩টি অঞ্চল স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, চট্রগ্রামের মিরেরসরাইয়ে প্রায় ৩০ হাজার একর আয়তন বিশিষ্ট একটি অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ১৬ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট ১৪ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া সারা দেশে এক লাখ একরের একটি ‘ভূমি ব্যাংক’ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সভাশেষে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নে সঠিক পথেই রয়েছে, তবে দুর্নীতি মাঝে মাঝে আমাদের অগ্রগতির যাত্রাকে ব্যাহত করেছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে দূর্নীতির চেয়েও বেশি সমস্যা হচ্ছে নির্ধারিত সময়ে কাজ না করে সময় ও অর্থ অপচয় করা। এই জন্য আধুনিক ও সঠিকভাবে কাজ করা যাচ্ছে না। তবে দেশের শিল্পায়নকে আরো গতিময় করতে সরকার দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।