জটিল টিউমার বাসা বেঁধেছে মস্তিষ্কে। অপারেশন থিয়েটারে টিউমার অপসারণে হিমশিম খাচ্ছেন অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা। কিন্তু সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই টেবিলে শুয়ে থাকা রোগীর। বরং আপনমনে বেহালা বাজাচ্ছেন তিনি। নিবিষ্ট মনে সুর তুলছেন বেহালায়।
সম্প্রতি এমনই একটি ভিডিও প্রকাশ হয়েছে। যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে ঘটেছে এমন কাণ্ড। যেখানে ব্রেন টিউমারের মতো জটিল অপারেশনের সময় ওটি টেবিলে শুয়ে বেহালা বাজিয়েছেন রোগী।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গত ৪০ বছর ধরে বেহালা বাজাচ্ছেন ওই রোগী। এটাই তার একমাত্র শখ এবং নেশা। কিন্তু মস্তিষ্কের ডানদিকে ফ্রন্টাল লোবের কাছে বাসা বেঁধেছে মরণ টিউমার। এর জেরে চিরতরে অক্ষম হয়ে যেতে পারেন এই রোগী। আর হয়তো কোনওদিন বেহালা বাজানো সম্ভব নাও হতে পারে। কারণ মস্তিষ্কের যে অংশ থেকে মানব শরীরের বাঁ-হাতের গতিবিধি নিয়ন্ত্রত হয়, তার আশেপাশেই আস্তানা বানিয়েছিল এই টিউমার।
ডাগমার টার্নার নামে ৫৩ বছরের ওই মহিলা ছিলেন প্রফেসর কেউমারস আশকানের তত্ত্বাবধানে। কিংস কলেজ হাসপাতালের এই নিউরোসার্জেন মনে মনে ভেবেই নিয়েছিলেন যাই হোক না কেন কিছুতেই তার রোগীর বেহালা বাজানোর ক্ষমতা লোপ পেতে দেবেন না। তাই অপারেশনের জন্য এক নতুন ছক কষেছিলেন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের দল।
তাদের পরিকল্পনা ছিল যখন খুলি খুলে অপারেশন চলবে তখন বেহালা বাজাবেন ডাগমার। তাহলে তার বেহালা বাজানোর ক্ষমতা বজায় থাকছে, নাকি কোনও অসুবিধে হচ্ছে সেটা সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পারবেন চিকিৎসকরা।
প্রাথমিক ভাবে সফল হয়েছে অস্ত্রোপচার। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ৯০ শতাংশ টিউমার বাদ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। মস্তিষ্কের যেসব জায়গায় মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল সেইসব সম্ভাবনা এড়ানো গিয়েছে। এখন আর কোনও ভয় নেই। আর অপারেশনের পরেও সফল ভাবেই কাজ করছে ডাগমারের বাঁ-হাত। অতএব নিশ্চিন্তে বেহালা বাজাতে পারবেন তিনি।
অস্ত্রোপচারের পর স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন ডাগমার নিজেও। তিনি বলেছেন, ‘দশ বছর বয়স থেকে বেহালা বাজাই। ওটাই আমার সবকিছু। তাই ব্রেন টিউমার হয়েছে শুনে ভীষণ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।’
‘‘কারণ তখনই জানতে পেরেছিলাম হয়তো অপারেশনের ফলে অকেজো হয়ে যাবে আমার বাঁ-হাত। তাহলে আর কোনওদিন বেহালা বাজানো হবে না, এই ভেবেই ভয়ে-আতঙ্কে সিঁটিয়ে গিয়েছিলাম।’’
তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকায় এখন খুব খুশি ডাগমার। ধন্যবাদ জানিয়েছেন চিকিৎসক আশকানকেও।