গত শতাব্দীর শেষ দিকে ধর্মের নামে রাজনৈতিক অপশক্তির যে অনাকাঙ্খিত উত্থান হয়েছিল, তা থামিয়ে দিতে প্রত্যাশিত দু’টি রায় এসেছে। এর মধ্যে প্রথম রায়টি হলো: ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি রাজধানীর পল্টনে সিপিবি’র সমাবেশে বোমা হামলা মামলার। আর দ্বিতীয় রায়, ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গুলি করে হত্যাচেষ্টাসহ ২৪ জনকে হত্যা মামলার।
সিপিবি’র সমাবেশে বোমা হামলা চালিয়ে ৫ জনকে হত্যার মামলায় ১০ আসামির মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ঢাকা মহানগর অতিরিক্ত তৃতীয় যুগ্ম জজ আদালত। অন্যদিকে চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় ৫ জন মৃত্যুদণ্ড পেয়েছে।
সিপিবি ১৯ বছর আগে, ২০ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে এক ছাত্র-শ্রমিক সমাবেশ আয়োজন করেছিল। ওই সমাবেশ চলার মধ্যেই বোমা হামলা হয়েছিল। এতে ঘটনাস্থলে চারজন এবং পরে হাসপাতালে একজনসহ মোট পাঁচজন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছিলেন।
সেদিনের নারকীয় বোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন: খুলনার বটিয়াঘাটার হিমাংশু মণ্ডল, খুলনার রূপসা উপজেলার আব্দুল মজিদ, ঢাকার ডেমরার আবুল হাসেম, মাদারীপুরের মুক্তার হোসেন ও খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বিপ্রদাস। ১৯ বছর পর সেই ২০ জানুয়ারি খুনিদের মৃত্যুদণ্ডের রায় হলো।
অন্যদিকে স্বৈরশাসক এরশাদের আমলে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘিতে আওয়ামী লীগের জনসভার আগে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রাক আদালত ভবনের দিকে এগোলে নির্বিচার গুলি ছোড়ে তৎকালীন পুলিশের কতিপয় সদস্য। ওই হামলায় ২৪ জন নিহত হলেও কারো লাশ পরিবারকে নিতে দেয়নি স্বৈরাচারী সরকার। নিহত সবাইকে স্থানীয় শ্মশানে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। এই মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিদের সবাই পুলিশের সদস্য।
এরপরও আদালতের এমন রায় ন্যায়বিচারের পথ প্রশস্ত করেছে বলেই আমরা মনে করি। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশে বোমা হামলা চালিয়ে মানুষ খুনের ঘটনার রায় আসতে দীর্ঘ ১৯ বছর লেগে গেল! আর আওয়ামী লীগ প্রধানকে হত্যাচেষ্টা এবং ২৪ জনকে নির্বিচারে খুনের মামলায় রায় এলো তিন দশকেরও বেশি সময়ের পর। এতে যুগের পর যুগ নিহত, আহত এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পরিবার-স্বজন কতোটা কষ্টের মধ্যে দিয়ে গেছেন তা সহজেই অনুমেয়।
ভুক্তভোগী মানুষদের অবর্ণনীয় সীমাহীন কষ্টের বিষয়টি অনুধাবন করে বিচার সংশ্লিষ্টদের দীর্ঘসূত্রতা বন্ধ করা উচিৎ বলে আমরা মনে করি। এতে একদিকে যেমন বিচারহীনতার দৃষ্টান্ত তৈরি হয়, অন্যদিকে অপরাধীদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে উৎসাহী করে তোলে। তবে শেষ পর্যন্ত এমন দৃষ্টান্তমূলক রায় অপরাধীদের অপরাধ করার আগে ভাবিয়ে তুলবে। রাজনীতিকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দিয়ে নয়, রাজনীতি দিয়ে মোকাবিলা করার জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানাচ্ছি।