আয়ারল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়ে অপরাজিত থেকেই শুক্রবারের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। রানতাড়ায় আত্মবিশ্বাসী এমন জয়ের সঙ্গে যদিও যোগ হয়েছে কিছুটা দুশ্চিন্তা! ব্যাটিংয়ের মাঝপথে চোট নিয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন সাকিব আল হাসান।
ফাইনাল নিয়ে ভাবনার বিষয়টা উইন্ডিজের বিপক্ষে আগের ম্যাচেই ঝেড়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটা ছিল একঅর্থে আনুষ্ঠানিকতার। সঙ্গে বিশ্বকাপের আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সারারও। সুযোগটা কাজে লাগানো হয়েছে একাদশে চার পরিবর্তন নিয়ে নেমে। ফলটা মিলল ইতিবাচকই। ২৯৩ রানের বড় লক্ষ্যের জবাবে তুলে নেয়া গেছে একপেশে জয়।
বুধবার ত্রিদেশীয় সিরিজের গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে ৬ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারানোর পথে ৪২ বল অব্যবহৃত রেখেছে বাংলাদেশ। এটিই বলে দেয় কতটা সাবলীল আর অবিচল ছিলেন টাইগার ব্যাটসম্যানরা। বোলিংয়ে ৫ উইকেট নেয়া রাহি হয়েছেন ম্যাচসেরা। পরে তামিম ৫৭, লিটন ৭৬ ও সাকিব ৫০ (আহত অবসর) তুলে নিয়েছেন ফিফটি।
হেসে খেলে জয়টা এসেছে ঠিকই, কিন্তু দলের অন্যতম ভরসা সাকিবের ওভাবে মাঠ ছাড়ায় শেষপর্যন্ত উদযাপনটা হল কিছুটা মলিনই! বাংলাদেশের ইনিংসে ৩৬তম ওভারে প্রথম বলের পর পাঁজরের চোটে যেভাবে মাঠে শুয়ে কাতরাচ্ছিলেন সাকিব, সেটা দেখে বুক ধক করে ওঠার কথা টাইগার সমর্থকদের সকলেরই।
কিছুটা গুরুতর যে ঘটেছে সাকিবের, সেটা বোঝা গেছে ৩৬ ওভার শেষে। ৫১ বলে ৫০ রান করা অলরাউন্ডার রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছেড়েছেন। তাতে সিরিজে প্রথমবারের ব্যাটে নামার সুযোগ পেয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন। যদিও ১৪ রানের বেশি করতে পারেননি এ অলরাউন্ডার।
তিনশো ছুঁইছুঁই লক্ষ্যে সহজ জয় পেতে অবশ্য একদমই কষ্ট হয়নি বাংলাদেশের। জয়ের রাস্তাটা আগেই সহজ করে গেছেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস, উদ্বোধনী জুটিতে ১১৭ রান তুলে। ৫৩ বলে নিজের ৪৬তম ফিফটি তুলে তামিম আউট হয়েছেন ৫৭ করে, ৯ চারে ইনিংস।
সৌম্য সরকারের জায়গায় দলে সুযোগ পাওয়া লিটনও জ্বলেছেন এদিন। ম্যাক্কার্থির বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৬৭ বলে খেলেছেন ৭৬ রানের দারুণ এক ইনিংস। ৯ চার ও এক ছয়ে সাজানো।
তামিম-লিটনের দেখিয়ে যাওয়া রাস্তাকে চওড়া করেছেন মুশফিকুর রহিম ও সাকিব। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দুজনে তুলেছেন ৬৪ রান। ৩৩ বলে ৩৫ করে আউট হওয়া মুশফিক আরেকটু ধরে খেললে ফিফটির দেখাও পেতে পারতেন।
মুশফিকের আউট আর সাকিবের চোট অন্তত ব্যাট করার সু্যোগ করে দিয়েছে সাব্বির রহমান ও মোসাদ্দেক হোসেনকে। মোসাদ্দেক বেশিক্ষণ উইকেটে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ পাননি, ১৭ বলে ১৪ করে মার্ক অ্যাডায়েরের বলে ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটরক্ষক উইলসনের গ্লাভসে।
সাব্বির শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন ৩ রানে অপরাজিত থেকে। আরেক অপরাজিত ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ করেছেন ২৮ বলে ৩৪ রান।
ব্যাটিং অর্ডারে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় না গেলেও বোলিংয়ে এদিন বেশ ভালো রকম কাটাছেঁড়া হয়েছে। মোস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী মিরাজরা বিশ্রামে ছিলেন। দলে ফেরেন পেসার রুবেল হোসেন। চোটের শঙ্কায় থাকা পেস-অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিনকেও রাখা হয় একাদশে।
চতুর্থ ওভারেই আইরিশ ওপেনার জেমস ম্যাককলামকে লিটনের ক্যাচ বানিয়ে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেন রুবেল। সেখান থেকেই আবার ঘুরে দাঁড়ায় আয়ারল্যান্ড। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ওপেনার পল স্টার্লিং ও অধিনায়ক উইলিয়াম পোর্টারফিল্ডের ১৭৪ রানের জুটিতে একটা সময় তিনশো রানেরও বেশি লক্ষ্য চোখ রাঙাচ্ছিল বাংলাদেশকে।
৯৪ রান করা পোর্টারফিল্ডকে নিজের দ্বিতীয় উইকেট বানিয়ে জুটি ভাঙেন আবু জায়েদ রাহি। এর আগে ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান অ্যান্ডি বেলব্রিনেকে ফিরিয়ে নিজের প্রথম উইকেটের স্বাদ পান এ পেসার।
পোর্টারফিল্ডের উইকেট পাওয়ার পরপরই আইরিশদের ইনিংসে ধ্বস নামান রাহি। অধিনায়কের পর তার তৃতীয় শিকারে পরিণত হন ১৩০ রান করা ওপেনার স্টার্লিং।
এরপর কেভিন ও’ব্রায়ান ও গ্যারি উইলসনকে ফিরিয়ে নিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই পাঁচ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন রাহি। নয় ওভারে সিলেটের এই বোলারের রান খরচা হয়েছে ৫৮। ৪৩ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন সাইফউদ্দিন।