দুপুর ১২ টার একটু বেশি,রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ে টেলিটক কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের সামনে নারীদের ভিড়। কারণ কাস্টমার কেয়ার সেন্টারগুলোতে নারীদের জন্য বিনামূল্যে ‘অপরাজিতা’ সিম দিচ্ছে টেলিটক। এখানে সিম নিতে আসা নারীদের মধ্যে কেউ ব্যস্ত ফর্ম পূরণ করতে, আবার কেউ জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিসহ পূরণ করা ফর্ম হাতে বসে আছেন ফুটপাথে। অপেক্ষা করছেন কাঙ্ক্ষিত সিমটির।ভিড় সামলাতে সেন্টারের বাইরেও টেবিল পেতে বসেছেন অনুমোদিত ডিলাররা। অপরাজিতা সিমের জন্য এই চাপের প্রভাব পড়েছে জাতীয় পরিচয়পত্রের কেন্দ্রীয় সার্ভারে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সিম দিতে এবং নিতে গিয়ে সাময়িক বিড়ম্বনায় পড়েছেন টেলিটক কর্মী ও নারীরা।
এর মধ্যেই আজ সকাল থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত এই সেন্টারে প্রায় ৩’শ টি ফর্ম জমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন টেলিটকের সেলস এবং ডিস্ট্রিবিউশন কর্মকর্তা সুমন কুমার সাহা।
তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন,‘ অপরাজিতা প্যাকেজের জন্য প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ফর্ম জমা পড়ছে। জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করে যত দ্রুত সম্ভব সিম তুলে দিচ্ছি আমরা। তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই অপরাজিতা হাতে তুলে দিতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। হয়তো এতো আবেদনকারীর এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) যাচাই করতে গিয়ে চাপে পড়েছে কেন্দ্রীয় সার্ভার। এটা সাময়িক,খুব দ্রুতই এটা কার্যকর হবে।’
টেলিটকের এই কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের খুব কাছাকাছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের হল এবং ইডেন ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ।
সেন্টারে ভিড় কমাতে ইডেন ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সামনে টেলিটকের অস্থায়ী বুথ বসানো হয়েছে। আরেকটি বুথ বসানো হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোকেয়া হলের বাইরে গেটের সামনে।
রোকেয়া হলের সামনে টেলিটকের অপরাজিতা বুথের কর্মী তৈয়ব হোসেনও বললেন, আজ এনআইডি সার্ভারের কারণে কাজ করতে বিড়ম্বনায় পড়েছেন।
তিনি বলেন,‘এখানে বসেছি ৩দিন হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৬’শ ফর্ম জমা পড়েছে। প্রতি এনআইডি দিয়ে ২টি সিম তোলা যাবে। তবে এনআইডি সার্ভার ডাউন থাকায় আজ শুধু ফর্ম দেয়া ছাড়া বাকী কাজ করা যাচ্ছে না।’
তৈয়বের সঙ্গে এই চ্যানেল আই প্রতিনিধির কথোপকথনের সময় বুথে আসা এক নারী জিজ্ঞেস করেন,“ভাই, আজ সিমটা হাতে পাবো না? বাড়ি যাচ্ছি সিমটা পেলে ভালো হতো।”
জবাবে তৈয়ব বলেন,“এখন সার্ভারে সমস্যা হচ্ছে। বিকালের দিকে আসেন।”
ফিরে যাওয়া এই নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো অন্য অপারেটরের সিম ব্যবহার করলেও রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিটকের নতুন এই সংযোগ নিতে এতো আগ্রহ কেনো তার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তাসনিন বিনতে সাহাজ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন,‘এখন সরকারি চাকরির আবেদন করতে টেলিটক সিম লাগে। টেলিটকে একবার রিচার্জ করলে অন্যান্য অপারেটরের চেয়ে বেশি দিন টাকা থাকে। কারণ টেলিটকের কলরেট অপেক্ষাকৃত কম। দূরে কোথায় ট্যুরে গেলেও টেলিটক সিম কাজে আসে।’
পরিবারের সবার সঙ্গে কম খরচে কথা বলা এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের সাশ্রয়ী সুবিধার জন্য অপরাজিতা চান বলে জানান একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার।
রোববার (২২ অক্টোবর) সচিবালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে ‘অপরাজিতা’ উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। অপরাজিতা সিম অ্যাক্টিভেশনের পর মাত্র ৮ টাকায় ১ জিবি এবং ১৪ টাকায় ২ জিবি ডেটা পরবর্তী তিন মাস যতবার খুশি ততবার ব্যবহার করতে পারবেন। নারীরা বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে টেলিটকের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে এ সিম পাবেন।
অপরাজিতা সিমের মাধ্যমে টেলিটক থেকে টেলিটক ভয়েস কল ৬০ পয়সা (মিনিট), টেলিটক থেকে অন্য অপারেটরে ৯০ পয়সা, ভিডিওকল (টেলিটক থেকে টেলিটক) ২৪ ঘণ্টায় ৬০ পয়সা মিনিট।
তারানা হালিমের ফেসবুক পেজের পোস্টে জানানো হয়, টেলিটকের নতুন এই প্যাকেজের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে ভয়েস ও ভিডিও কল এবং ইন্টারনেট ডেটা ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া যাবে।