বিজ্ঞান-প্রযুক্তির দুর্বার অগ্রগতিতে শৈশবের একটি দীর্ঘ সময় এখন ট্যাবলেট, কম্পিউটার বা টিভির মতো যন্ত্রগুলোর দখলে। শিশুদের আকর্ষণের এই কেন্দ্রগুলো এক ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনছে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ‘বৈশ্বিকভাবে অন্ধত্বের মহামারি’ বিষয়ে সতর্ক করেছে বিশেষজ্ঞরা। এইসব প্রযুক্তিপণ্যের ডিজিটাল পর্দা থেকে নির্গত হাই এনার্জি লাইট যার জন্য দায়ি, ক্ষতিগ্রস্থ করবে চোখের রেটিনা (আলো সংবেদী চোখের পেছনের অংশ)।
অন্ধত্বের সবচেয়ে বড় কারণ হলো রেটিনার ক্ষতি। পর্দার দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকার প্রবণতা আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই লাখ লাখ শিশুর জন্য বয়ে আনতে পারে অন্ধকার। তবে এই ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে মুক্তির পথও বাতলে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পর্দার সামনে শুধু একটি ফিল্টার ব্যবহারই রোধ করবে এই বিপর্যয়।
নতুন এই গবেষণায় বলা হয়, “এটা অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি পরিষ্কার যে আমরা দৃষ্টিশক্তি হারানোর একটি বৈশ্বিক মহামারির সম্মুখিন, বিশেষ করে লাখ লাখ শিশুদের ক্ষেত্রে।” প্রধান গবেষক ডা. সেলিয়া সানচেজ-রামোস বলেন, বয়োজ্যেষ্ঠ এভং অভিভাবকদের জন্য প্রধানতম কাজটি হলো আরও ক্ষতি হওয়ার আগেই তাদের (শিশু) রক্ষা করা।
বর্তমানে ৯০০ মিলিয়নের মতো যন্ত্র আছে যার ৭০ মিলিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের শিশুরা ব্যবহার করে কোন চোখের সুরক্ষা (সুরক্ষামূলক পর্দা বা গ্লাস) ছাড়াই। ৮ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে ২ হাজারেরও বেশি শিশু গড়পড়তা সাড়ে সাত ঘন্টা সেই সব যন্ত্রের দিকে তাকিয়ে কাটায় যেগুলো এলইডি আলো নির্গত করে।
স্পেনের ইউনাভির্সিটি কম্প্লিউটেন্স অব মাদ্রিদে পরিচালিত সাম্প্রতিক এই গবেষণায় এমন ভয়াবহ বার্তা দেয়া হয়েছে। পূর্বের দুইটি গবেষণার বিশ্লেষণ ও তুলনায় করেই নতুন এই সীদ্ধান্তে পৌঁছেছে তারা। তাদের বিবেচিত প্রথম গবেষণাটিতে ইঁদুরের চোখের রেটিনার উপর এলইডি আলোর প্রভাব দেখা হয়। অপরটিতে দেখা হয় চোখে আলো প্রবেশের তারতম্য।
প্রথমটিতে ইঁদুরের রেটিনায় ট্যাবলেটের পর্দা থেকে নিগর্ত সাদা এলইডি আলোর প্রভাব দেখা হয়। এতে দুটি গ্রুপের একটিকে কোন ফিল্টার ছাড়া পর্দা এবং অপরটিকে ফিল্টারসহ পর্দা দেয়া হয়। তিন মাস পর দেখা যায় ফিল্টারহীন গ্রুপটির ক্ষেত্রে রেটিনার কোষের মৃত্যু ২৩ শতাংশের মতো বেড়ে গেছে। যা দৃষ্টিশক্তি হারানোর পথে নিয়ে যেতে পারে। আর বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি চোখের সুরক্ষামূলক ‘রেটিকেয়ার’ ফিল্টারসহ পর্দা ব্যবহারকারী গ্রুপের রেটিনার কোন কোষ মারা যায়নি।
এই গবেষণায় আরও দেখা যায়, ট্যাবলেটের পর্দা থেকে নির্গত এলইডি লাইট কোষের মৃত্যুতে সহায়ক জিন ও এনজাইমের বিস্তার ঘটায়। তবে এই নেতিবাচক প্রভাবগুলো শুধুমাত্র একটি যথাযথ ফিল্টার ব্যবহারের মাধ্যমেই রোধ করা সম্ভব।
অপর গবেষণাটি হলো, চোখে আলো প্রবেশের পরিমাণ নির্ভর করে যন্ত্র, ব্যবহারকারী, পিউপিল (চোখের সাদা অংশের ভেতরে গভীর কালো ছোট অংশ) এবং যন্ত্রটির সাথে চোখের দুরুত্ব। এলইডি পর্দার ডিজিটাল যন্ত্রগুলো (স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, কম্পিউটার) অধিক পরিমাণে ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো নির্গত করে, যা চোখের ক্ষতি করতে পারে।
ফলাফলে দেখা যায়, শিশুরা তিনগুণ বেশি পরিমাণে ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো গ্রহণ করে। যন্ত্রের হাই এনার্জি লাইটের থেকে বড়দের তুলনায় শিশুদের দুরুত্বও কম হয়।
রেটিনার ক্ষতি ছাড়াও কম্পিউটার পর্দা চোখকে সুষ্ক করে তুলতে পারে, কারণ পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকায় চোখের পাতা পড়ার হার কমে যায়। বিশেষজ্ঞরা এর থেকে উদ্ধারের উপায়েও একটি সূত্র দিয়েছেন: ২০-২০-২০ রীতি। প্রতি ২০ মিনিট ডিজিটাল পর্দায় তাকিয়ে থাকার পর আপনার দৃষ্টি ঘুরিয়ে ২০ ফুট দূরে ২০ সেকেন্ডের জন্য বা তার বেশি সময়ের জন্য নিয়ে যান। এতে চোখের পেশীগুলো শিথিল হয়।